বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের ফেরত নিতে আবারও দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 23 Nov 2017, 01:17 PM
সাভার সেনানিবাসে বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা চাই, মিয়ানমারের প্রতি আমাদের আহ্বান, তাদের নাগরিক তারা যেন দ্রুত ফেরত নিয়ে যায়।”
কয়েক যুগ ধরে ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বাংলাদেশে অবস্থানের মধ্যে গত অগাস্টে রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সহিংসতা শুরু হলে বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। প্রায় তিন মাসে নতুন করে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ইতোমধ্যে সোয়া ৬ লাখ ছাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে পুরনো শরণার্থীদের ফেরত নিতে মিয়ানমারকে আহ্বান জানিয়ে আসছিল। তবে মুসলিম এই জনগোষ্ঠীকে নাগরিক হিসেবে মানতে নারাজ মিয়ানমার তাতে গা না করে নানা অপপ্রচার চালিয়ে আসছিল, যা নানা সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর বক্তব্যেও আসে।
এর মধ্যে দুই দেশের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে আলোচনা শুরু হয়। বৃহস্পতিবার সাভার সেনানিবাসে সিএমপি সেন্টার অ্যান্ড স্কুলকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, সে সময়ই নেপিদোতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রত্যাবাসন বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া চলছিল।
সাভারের অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা জানেন, আমাদের ওপর একটি বোঝা এসেছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে প্রায় ছয় থেকে সাত লাখের মত শরণার্থী আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে।”
মানবিক কারণে মিয়ানমারের এই নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া হলেও তাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “মিয়ানমারের সঙ্গে আমরা দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চালাচ্ছি, যাতে এই মানুষগুলো তাদের দেশে ফিরে যেতে পারে।”
কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া এই রোহিঙ্গাদের জরুরি সহায়তা দিতে সশস্ত্র বাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণ যে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে, সে কথাও অনুষ্ঠানে বলেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’ এই নীতিকে সামনে রেখেই বাংলাদেশে এগিয়ে যাচ্ছে।
“আমরা আমাদের প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বের সকল দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছি। যে কারণে সমগ্র বিশ্ববাসী আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।”
সরকার দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ‘নিরলসভাবে’ কাজ করে যাওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা, “দেশের সার্বিক উন্নয়ন সাধনে আমরা সফলতা অর্জন করেছি।
২০২১ সালে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ইতোমধ্যে আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী দেশ, আমরা নিম্ন থাকব না, আমরা নিশ্চয় ২০২১ সালের মধ্যে এই দেশকে মধ্য আয়ের দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করব।”
অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থানের কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে ধারা আমরা আজকে অর্জন করেছি; বিশ্ববাসী তা অবাক চোখে দেখছে।”
প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৮ এবং মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৬১০ মার্কিন ডলারে উন্নীত হওয়ার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
দারিদ্র্যের হার ২০০৫-০৬ সালে ৪১ দশমিক পাঁচ শতাংশ থাকলেও এখন তা কমে ২২ দশমিক ৪ শতাংশে হ্রাস পাওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা চাই ২০২১ এর মধ্যে আমরা এই হার আরও কমিয়ে নিয়ে আসব।”
অতি দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ২৩ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে হ্রাস পাওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “পৌনে নয় বছরে দেশ-বিদেশে কমপক্ষে দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আমরা করেছি। গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত যেন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে, সেজন্য আমরা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি।”
উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ৯৮ ভাগ অর্থ নিজস্ব অর্থায়নে জোগান দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কারো কাছে হাত পেতে বা মুখাপেক্ষী হয়ে যেন বাংলদেশকে চলতে না হয়; সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা প্রতিটি পদক্ষেপ নিচ্ছি।”
বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আজ ৮০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। ইতোমধ্যে ১৫ হাজার ৮২১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি। ২০২১ সালের মধ্যে কোনো ঘর অন্ধকারে থাকবে না। প্রতি ঘরেই আমরা আলো জ্বালতে সক্ষম হব।”
আধুনিকায়ন ও পেশাদারিত্ব বৃদ্ধির জন্য সেনাবাহিনীতে প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নে ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশাপ্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব প্রশিক্ষণ সেনাসদস্যদের আরও নিষ্ঠার সাথে দেশমাতৃকার কাজে উদ্বুদ্ধ করবে।
উপস্থিত সব সেনা সদস্যের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আত্মবিশ্বাস নিয়ে দেশের সেবা এবং জনগণের সেবা করে যেতে হবে। দেশের উন্নয়নে সকলকে আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে হবে, যেন বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি।”