Published : 15 Nov 2017, 04:40 PM
প্রাথমিক শিক্ষার স্তর অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করার পর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দ্বন্দ্বের কথাও অস্বীকার করেছেন তিনি।
প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার বিস্তারিত তুলে ধরতে বুধবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ফিজার।
প্রাথমিক সমাপনীর ভবিষ্যৎ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “(প্রাথমিক সমাপনী) এই পরীক্ষাটি ততদিন চলিবে, যতদিন সরকার এই সিদ্ধান্ত না বদল করিবে।
“সরকারি সিদ্ধান্তের উপর এই পরীক্ষাটা হওয়া-না হওয়া নির্ভর করছে। এখন পর্যন্ত এটা বন্ধ করবার বা এই দুটি পরীক্ষাকে একত্রিত করে একটা পরীক্ষা নেওয়ার… আগে কথাবার্তা হয়েছিল এখন পর্যন্ত সেই নির্দেশনা আসেনি।”
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাবলিক পরীক্ষায় বসানো নিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষাবিদদের অনেকে আপত্তি জানিয়ে আসছেন। প্রাথমিক শিক্ষার স্তর অষ্টম শ্রেণি করা হলে পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষাটি তুলে নেওয়ার প্রস্তাব এলেও তা আটকে যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায়।
এদিকে অষ্টম পর্যন্ত শ্রেণি প্রাথমিক স্তরে আসার ঘোষণার পর তার কর্তৃত্ব নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব বিভিন্ন সময় প্রকাশ পেয়েছে।
শিক্ষা এবং গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দ্বন্দ্বের জন্যই প্রাথমিক শিক্ষার স্তর অষ্টমে উন্নীত হচ্ছে- এ অভিযোগের বিষয়ে ফিজার বলেন, “এমন কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আমাদের (দুই মন্ত্রী) মতান্তর কখনও কখনও ছোটখাট হতে পারে, মনান্তর ঘটে না।
“শিক্ষামন্ত্রী আমার থেকে অনেক অভিজ্ঞ। উনি প্রায় ১০ বছর এই মন্ত্রণালয়ের সাথে আছেন। দুটো মন্ত্রণালয় উনি চালিয়েছেন। আমি নবীন মানুষ, আমি অল্প দিন হল কাজ করছি। ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকবে। এর মধ্য দিয়ে আমরা কাটিয়ে উঠব।”
প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার বিস্তারিত তুলে ধরতে বুধবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার
প্রাথমিক শিক্ষা শেষমেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত হবে কি না- এই প্রশ্নে গণশিক্ষা মন্ত্রী বলেন, “আমি মনে করি আমাদের সরকার ২০১০ এর শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ। এটা হতে পারে সময় লাগছে। আমি আশাবাদী।
“আমি মনে করি এটা হতেই হবে, এটা অনিবার্য, সময় কতটুকু নেবে সেটা আমি এই মূহূর্তে বলব না, কারণ এটার সাথে অনেকেই জড়িত। আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম, মাঝখানে থেমে গেছি, মানে চিরতরে থেমে গেছি এমন নয়।”
ফিজার বলেন, “আমি মনে করি এটা আমাদের জন্য দরকার। ক্লাস ফাইভের পরীক্ষা নিয়ে যে সার্টিফিকেটটা দিচ্ছি, এটা দিয়ে কিন্তু একটা বাচ্চা কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারছে না। আমরা ক্লাস এইটটাকে যদি প্রাইমারির মধ্যে আনি, তাহলে এই পর্যন্ত সেটা কারিগরি বা সাধারণ শিক্ষাই হোক এরমধ্যে দিয়ে কিন্তু তার একটা জব মার্কেটে প্রবেশ করার জন্য সার্টিফিকেট প্রাপ্ত হবে। সেটার দিকেই সরকার যাবে।”
প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে চালাতে শিক্ষা বোর্ড গঠনের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন মন্ত্রী।
“আমাদের শিক্ষা বোর্ড নেই। এই পরীক্ষা যদি চিরস্থায়ী হয়, সেটাকে কনডাক্ট করার জন্য আমাদের একটা বোর্ডের আবশ্যকতা বড় করেই দেখা দেবে।”
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে ২০০৯ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার প্রচলন হয়। পরের বছর মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য চালু হয় ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা। আর অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদাভাবে আয়োজন করা হয় জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা।
আগে পঞ্চম শ্রেণিতে আলাদা করে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়া হলেও প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী চালুর পর ওই পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে থেকেই বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।
দ্বন্দ্ব-জটিলতা
শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতে ২০১৬ সালের ১৮ মে এক সভার পর জাতীয় শিক্ষা নীতির আলোকে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করে তা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্তের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
এরপর ২০১৬ সালের ২১ জুন গণশিক্ষামন্ত্রী ফিজার জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক শিক্ষার স্তর অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ায় ওই বছর থেকে আর পঞ্চমের সমাপনী পরীক্ষা নেবে না সরকার।
প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে এই রকম বহু কর্মসূচি পালিত হয়েছে (ফাইল ছবি)
মন্ত্রী পঞ্চমের সমাপনী উঠিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিলেও তার ছয় দিন পর মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত দেয়, মন্ত্রিসভার পরবর্তী সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত পঞ্চম ও অষ্টমের সমাপনী পরীক্ষা অব্যাহত থাকবে।
এরপর ২০১৬ সালের ২০ অক্টোবর অষ্টমের সমাপনী পরীক্ষা শুরুর কিছু দিন আগে হঠাৎ করে গণশিক্ষামন্ত্রী জানান, প্রাথমিক শিক্ষার স্তর যথাযথ প্রক্রিয়ায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত না হওয়ার ওই বছরের জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার দায়িত্ব তারা নেবেন না তারা।
এর তিন দিন পর ২৩ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী জানান, ঘোষণা দিয়েও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার দায়িত্ব না নেওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনেই নির্ধারিত সময়ে এই পরীক্ষা হবে।
পরে প্রাথমিক শিক্ষার স্তর অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ায় শিক্ষা এবং গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কোন মন্ত্রণালয় প্রাথমিক স্তর অষ্টমে উন্নীত করতে মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব পাঠাবে এনিয়ে ঠেলঠেলি শুরু হয়।
এই অবস্থায় কিছু দিন চিঠিও চালাচালি করে দুই মন্ত্রণালয়। তবে এখন প্রাথমিক শিক্ষার স্তর অষ্টমে উন্নীতের বিষয়ে কোনো মন্ত্রণালই মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব পাঠায়নি।
গত ১০ অক্টোবর এক চিঠিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গণশিক্ষা সচিবকে জানায়, মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত না হওয়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি চালু করা যাবে না।