Published : 10 Oct 2017, 12:17 AM
শিক্ষা মন্ত্রণালয় রোববার এক চিঠিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি খোলা নিয়ে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছে।
জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি খুলতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চেয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষানীতি অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষার স্তর পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করবে সরকার। আর মাধ্যমিক স্তর হবে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত।
শিক্ষা নীতি প্রণয়নের পর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধাপে ধাপে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি চালুর প্রক্রিয়া শুরু করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ছয়শ’রও বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে ষষ্ঠ শ্রেণি চালু আছে। আর শ’খানেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোলা হয়েছে সপ্তম শ্রেণি।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের ফিজারের উপস্থিতিতে গত ১৬ মে’র এক সভার কথা তুলে ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, “সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, মন্ত্রিসভার পর্যালোচনা ও সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
“বর্ণিতাবস্থায় মন্ত্রিসভার পর্যালোচনা ও সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে হতে প্রেরিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে ষষ্ঠ শ্রেণি চালুর অনুমতি প্রদানের আবেদনসমূহ বিবেচনার সুযোগ নেই এবং প্রাথমিক শিক্ষা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে যা নির্দেশক্রমে অবহিত করা হল।”
ফিরে দেখা
শিক্ষা এবং গণশিক্ষা মন্ত্রীর উপস্থিতিতে ২০১৬ সালের ১৮ মে এক সভার পর জাতীয় শিক্ষা নীতির আলোকে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করে তা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্তের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানান নাহিদ।
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিকের বাস্তবায়ন আটকে দুই মন্ত্রণালয়ের দ্বন্দ্বে
এরপর ২০১৬ সালের ২১ জুন গণশিক্ষা মন্ত্রী ফিজার জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক শিক্ষার স্তর অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ায় ওই বছর থেকে আর পঞ্চমের সমাপনী পরীক্ষা নেবে না সরকার।
মন্ত্রী পঞ্চমের সমাপনী উঠিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিলেও তার ছয় দিন পর মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত দেয়, মন্ত্রিসভার পরবর্তী সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত পঞ্চম ও অষ্টমের সমাপনী পরীক্ষা অব্যাহত থাকবে।
এরপর ২০১৬ সালের ২০ অক্টোবর অষ্টমের সমাপনী পরীক্ষা শুরুর কিছু দিন আগে হঠাৎ করে গণশিক্ষা মন্ত্রী জানান, প্রাথমিক শিক্ষার স্তর যথাযথ প্রক্রিয়ায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত না হওয়ার ওই বছরের জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার দায়িত্ব তারা নেবেন না তারা।
এর তিন দিন পর ২৩ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী জানান, ঘোষণা দিয়েও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার দায়িত্ব না নেওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনেই নির্ধারিত সময়ে এই পরীক্ষা হবে।
পরে প্রাথমিক শিক্ষার স্তর অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ায় শিক্ষা এবং গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কোন মন্ত্রণালয় প্রাথমিক স্তর অষ্টমে উন্নীত করতে মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব পাঠাবে এনিয়ে ঠেলঠেলি শুরু হয়।
এই অবস্থায় কিছু দিন চিঠিও চালাচালি করে দুই মন্ত্রণালয়। তবে এখন প্রাথমিক শিক্ষার স্তর অষ্টমে উন্নীতের বিষয়ে কোনো মন্ত্রণালই মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব পাঠায়নি।
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে ২০০৯ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার প্রচলন হয়। পরের বছর মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য চালু হয় ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা। আর অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদাভাবে আয়োজন করা হয় জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা।
আগে পঞ্চম শ্রেণিতে আলাদা করে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়া হলেও প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী চালুর পর ওই পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে থেকেই বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।