Published : 17 Nov 2016, 10:50 PM
কোন পদ্ধতিতে প্রাথমিক স্তর অষ্টমে তোলা হবে সেই প্রশ্নে বৃহস্পতিবার গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বলেন, সেই দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেই নিতে হবে।
তবে এ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো কার্যক্রম নেই বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
শিক্ষাবিদদের উপস্থিতিতে গত ১৮ মে শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সভায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং গণশিক্ষামন্ত্রী ফিজার প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করে তা গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্তের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেন।
ওই দিন নাহিদ বলেন, “দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার পুরো ইতিহাসে এ ধরনের সিদ্ধান্ত এই প্রথম। … এরপরে একটু আনুষ্ঠানিকতা আছে। এখন একটা সারমর্ম প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে অনুশাসন নিয়ে আসতে হয়। প্রয়োজনে মন্ত্রিসভার অনুমোদন করতে হবে পরে। সেটা আনুষ্ঠানিকতা। শিক্ষা নীতির আলোকে এই সিদ্ধান্ত নিতে আমরা ক্ষমতাবান। দুই মন্ত্রণালয় মিলে ঠিক করে নিয়েছি, এতে কেউ দ্বিমত করবে না।”
আর ফিজার বলেছিলেন, “অনেক কিছু বাকি। এর তদারকি যা করা দরকার সেটা আমরা করব। এই ঐতিহাসিক দিনে এই সিদ্ধান্তটা আমরা নিলাম। কোথায় পড়ছে, কী পড়ছে, বেসরকারি নাকি মাদরাসায়- এসব না, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত যে ডিগ্রি হবে, সেটা হবে প্রাথমিক শিক্ষার।”
প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা মন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকরা প্রাথমিক স্তর অষ্টমে উন্নীতের বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চান।
শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে নেওয়া চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের বিষয়ে ফিজার বলেন, “তখন যেটা বলা হয়েছে সেটাও ঠিক। ওখানে উনি (নাহিদ) যেটা বলেছেন, উনার সদিচ্ছার কথাই উনি বলেছেন। সেখানে বলা হয়েছে শিক্ষা নীতির আলোকে আমরা স্টার্ট করলাম। আমরা এটা দিয়ে দিতে চাচ্ছি সেই কথাটা উনারা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু বাস্তবায়নের পর্যায়টাতে থাকে অনেক জটিলতা।
“ইতোমধ্যে কিছু কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে বিজনেস অ্যালোকেশন এখনও হয়নি। অর্থাৎ মন্ত্রিসভায় এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। আমি আশা করছি শিগরিগরই এ ব্যাপারে জানাতে পারব। এটা আমাদের উপর নির্ভর করে না। কারণ প্রাথমিকের বিজনেজ ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত।”
ফিজার বলেন, “আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাস এইট পর্যন্ত আমাদের কাছে সমর্পণ করবেন কেউ বা কোনো মন্ত্রণালয়, তারপর না আমরা পাব। এখন পর্যন্ত সমর্পিত হয়নি, প্রক্রিয়া চলছে।
“আমি মনে করি না যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো ইচ্ছার অভাব আছে। এমন কোনো কিছু আমরা লক্ষ্য করিনি। তবে এ প্রক্রিয়াটা বাস্তবায়ন করতে গেলে উনারা ছেড়ে দেবেন আমরা পাব, উনারাই ক্যাবিনেটে প্রস্তাব পাঠাবেন, ওখান থেকে অনুমোদিত হলেই আমাদের কর্তৃত্ব-তদারকির আওতায় জিনিসটা আসবে, এখনও আসেনি। আসলে তো আমরা দায়িত্ব পালন করতাম।”
প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টমে উন্নীতের সিদ্ধান্ত হওয়ায় পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা বাদ দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে তা অনুমোদনের জন্য তা মন্ত্রিসভায় পাঠায় গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু মন্ত্রিসভা তা অনুমোদন না দিয়ে পঞ্চম ও অষ্টমে দুটি সমাপনী পরীক্ষা চালু রাখতে নির্দেশ দেয়।
এরপরে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা আয়োজনের সব প্রস্তুতি নিলেও ওই পরীক্ষা শুরুর ১০ দিন আগে তার দায় না নেওয়ার ঘোষণা দেয়। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনেই অষ্টমের সমাপনী পরীক্ষা হয়েছে।
পুনরায় জেএসসি-জেডিসির দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে নাহিদ বলেছিলেন, “যেহেতু তারা (গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়) অপারগতা প্রকাশ করেছে, আমরা দায়িত্ব নিচ্ছি, এই পরীক্ষা আগের মতই নেব। আশা করছি এটা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।”
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার স্তর অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীতে এখন পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো তৎপরতা নেই।
শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাসচিব দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।