শিক্ষার্থীদের উপর বহিরাগত হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে উত্তাল রয়েছে বুয়েট ক্যাম্পাস।
Published : 30 Oct 2017, 11:38 PM
দোষীদের বিচারসহ আট দাবিতে রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস ও ল্যাব বর্জন করছে শিক্ষার্থীরা। সোমবার বিক্ষোভ সমাবেশের পর প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়েছে তারা।
এদিকে ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে জানিয়ে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেছেন, উপাচার্য বিদেশ থেকে ফিরলে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে।
এদিকে বুয়েট শিক্ষার্থীদের অভিযোগের প্রেক্ষাপটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সংঘাতের এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
বুয়েট ক্যাম্পাস থেকে বহিরাগত তাড়াতে অভিযান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গত শুক্রবার সংঘর্ষে জড়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবারের সংঘর্ষে বুয়েটের পাঁচ ছাত্র আহত হন। ঘটনার রাতেই বুয়েট স্টাফ কোয়ার্টারে থাকা কর্মচারীর ছেলে রাজুসহ কয়েকজনকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করা হয় বলে জানান অধ্যাপক সত্য প্রসাদ।
হামলাকারীদের শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে সোমবারও ক্লাস বর্জন করে ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার এলাকায় সড়ক অবরোধ করে সমাবেশ করে বুয়েট শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অন্যতম সমন্বয়ক যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী পার্থ প্রতীম দাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়াসহ আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা এ আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
বুয়েটের সব শিক্ষার্থী এই আন্দোলনে রয়েছেন বলে জানান তিনি।
অবরোধ ও সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীরা ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেন।
এদিকে ঘটনার তিন দিন পার হলেও কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি বুয়েট প্রশাসন।
উপাচার্য সাইফুল ইসলাম দেশে না থাকায় তদন্ত কমিটি করতে দেরি হচ্ছে বলে জানান অধ্যাপক সত্য প্রসাদ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের উপাচার্য মহোদয় দেশের বাইরে থেকে ফিরলেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের সাথে কথা বলে একটি প্রাথমিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উনি আসলে মূল তদন্ত কমিটি হবে।”
শিক্ষার্থীর দাবির বিষয়ে অধ্যাপক সত্য প্রসাদ বলেন, “আমরা ছাত্রদের দাবিগুলো মেনে নিয়েছি। কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়ন করতে তো একটু সময় লাগবে। ছাত্ররা আমাকে সেই সময়টুকু না দিয়ে কেন আন্দোলন করছে, জানি না।”
এদিকে একই ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের পক্ষ থেকে আবাসিক শিক্ষক আব্দুর রহিমকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আব্দুর রহিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাত দিনের মধ্যে আমরা প্রতিবেদন দেব। সাত দিনে সম্ভব না হলে আমরা তদন্তের স্বার্থে সময় বাড়িয়ে নেব। আমরা চাই, আসল অপরাধীদের শনাক্ত করতে।”
কমিটি ইতোমধ্যেই সংঘর্ষের ঘটনায় ‘জড়িত’ চারজনের জবানবন্দি নিয়েছে বলে হলে দায়িত্বরত শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
ঘটনায় জড়িত কয়েকজন সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ছাত্রলীগের কর্মী বলেও খবর ছড়িয়েছে।
তবে জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসিফ তালুকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা কেউ ছাত্রলীগের কি না, আমি অবগত নই। আমি চাই এ ঘটনায় দোষীদের বিচার হোক। দোষীদের কাউকে হল ছাত্রলীগের কমিটিতে কোনো পদ-পদবী দেওয়া হবে না।”
এদিকে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের পাশাপাশি পাশাপাশি থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার জন্য একটি ‘কমন নিরাপত্তা বলয়’ তৈরির কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই ঘটনায় ঢাবি ও বুয়েট কর্তৃপক্ষ আলাদা আলাদা তদন্ত করবে। আমাদের উপাচার্য মহোদয়ের সাথে বুয়েটের উপাচার্য মহোদয়ের কথা হয়েছে। আমরা পাশাপাশি অবস্থিত এই তিনটি ক্যাম্পাস নিয়ে কমন একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা ভাবছি।”
এদিকে সংঘর্ষের সময় শুক্রবার রাতে বুয়েট পড়ুয়া বান্ধবীকে হলে পৌঁছে দিতে যাওয়ার সময় আব্বাস আল কোরেশী নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মারধরের শিকার হন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
তখন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাকিব হাসান সুইম এবং উপস্থিত কয়েকজন সাংবাদিক দৌড়ে গিয়ে তাদের দুজনকে উদ্ধার করেন। পুলিশের উপস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান ওই ছাত্রীকে হলে পৌঁছে দেন।
কিন্তু পরে আব্বাস আল কোরেশী এক ফেইসবুক পোস্টে মারধরের শিকার হওয়ার কথা অস্বীকার করেন।
কেন এখন অস্বীকার করছেন- জানতে চাইলে আব্বাস সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি খুব পারিবারিক চাপে আছি ভাই। আমি চাচ্ছি না এই বিষয়ে আর জড়াতে।”