জলমগ্ন সড়কে রিকশা উল্টে কাদা-পানিতে মাখামাখির চিত্র অনেকটা নিয়মিতই ছিল মৌচাক মোড়ে, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি আর নির্মাণ সামগ্রীর চাপে সরু জায়গা দিয়ে গাড়ি চলাচলে দীর্ঘ যানজট- এরকম নানা সমস্যা ছয় বছর সয়েছে মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ, রাজারবাগ ও শান্তিনগর এলাকার বাসিন্দারা।
Published : 25 Oct 2017, 08:32 PM
এই ভোগান্তির অবসানের প্রত্যাশা নিয়ে বৃহস্পতিবার যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি খুলে দেওয়া হচ্ছে রাজধানীর মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার।
২০১১ সালে নির্মাণকাজ শুরু হওয়া ফ্লাইওভারটি সড়কে গতি এনে যানজট নিরসনের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করবে, এখন সে হিসেব মেলাচ্ছেন স্থানীয়রা।
নির্মাণকাজের শুরু থেকে ব্যবসা বাণিজ্যে ‘ধস নামা’ ওই এলাকার বিপণি বিতানগুলোর ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফ্লাইওভারটি পুরোপুরি চালু হওয়ার পর যানজট কমলেই কেবল দীর্ঘ ভোগান্তি পেরিয়ে সুফল পাবেন তারা।
আর তা না ঘটে উল্টো যানজট আগের চেয়ে বাড়তে পারে বলেও শঙ্কিত অনেকে। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সড়ক আগের চেয়ে ছোট হয়ে যাওয়া এবং ফ্লাইওভার ব্যবহারে অনেক চালকের অনীহার কথা।এক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকাই মুখ্য হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন তারা।
শহীদবাগের বাসিন্দা ইকরাম হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ কয়েকটা বছর কতটা যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে আমাদের, সেটা আমরাই জানি। যানজটে যে কত সময় নষ্ট হয়েছে! আর ফ্লাইওভার নির্মাণে যে সময় নিছে, এত সময় তো নেওয়ার কথা না।”
“ফ্লাইওভারের উপরে আবার সিগন্যাল বাতি, সিগন্যালে যদি গাড়ি আটকায়, তাহলে ভালো কী হল? সেই আগের অবস্থাতেই তো আছেন।”
মৌচাকের আনারকলি সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. বেলাল হোসেন বলেন, “আগে রাস্তা বড় ছিল। এখন তো রাস্তা ছোট হয়ে আসছে, এখন রাস্তায় একটা গাড়ি নষ্ট হয়ে গেলে পুরো রাস্তাই অচল হয়ে যায়।"
যানজট নিরসনে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রশাসন যদি বড় বাস এবং প্রাইভেট কারগুলো ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়, তবে যানজট কমবে।
“কারণ ফ্লাইওভারের কারণে রাস্তা ছোট হয়ে গেছে, সেজন্য রিকশা-অটোর বাইরে বড় গাড়ি নিচ দিয়ে চলাচল করলে যানজট কখনোই কমবে না।”
বেলাল মনে করেন, এই ফ্লাইওভার নির্মাণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এলাকার ব্যবসায়ীরা।
“আমাদের আগের কাস্টমার এখন আর নাই। ফ্লাইওভার তৈরির আগে যেখানে দিনে ১০ হাজার টাকার বিক্রি হত, এখন দু্ই হাজার টাকার বিক্রিও হয় না। এতো জ্যাম ঠেলে কে আসবে এখানে? মৌচাক আর আনারকলি মার্কেটের অনেক ব্যবসায়ী দোকান ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে গেছে।
এ রাস্তায় নিয়মিত চলাচলকারী সংবাদকর্মী আফরোজা দীপা মনে করেন, প্রশাসন কঠোর না হলে ফ্লাইওভারের সুফল মিলবে না।
তিনি বলেন, “অসহনীয় ভোগান্তির পর ফ্লাইওভারটা হল, আশা তো করছি আর যানজট পোহাতে হবে না। কিন্তু এরপরও যানজট হলে মানুষের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
“নিচের রাস্তা ছোট হয়ে গেছে, আবার অনেক চালক ফ্লাইওভার ব্যবহার করতে চান না। এসব চ্যালেঞ্জ প্রশাসন কীভাবে সামলাবে সেটা দেখার বিষয়। তারা কঠোর হলে দুর্ভোগ কমে আসবে।"
ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ শেষ হলেও দুর্ভোগ এখনও কমেনি বলে জানালেন মালিবাগ রেলগেইটের বাসিন্দা মেহেরুন্নেসা পিয়া।
তিনি বলেন, “মালিবাগ থেকে মগবাজার মোড়ে পৌঁছাতে ১ ঘণ্টা লেগে যায়। ছয়মাস আগে তো দেড় ঘণ্টাও লেগে যেত। ফ্লাইওভার করে লাভটা কী হল? যানজট কি কমেছে? অনেক সময় তো বাধ্য হয়ে হেঁটেই রওনা দেই। আর বৃষ্টিতে তো এ এলাকা দেখার হাল থাকে না।"
ফ্লাইওভার নির্মাণে বিশৃঙ্খলা আরও বেড়েছে বলে মনে করেন ইডেন কলেজের এই শিক্ষার্থী।
মৌচাকের বাসিন্দা সালাহউদ্দীন অভিযোগ করছেন ফ্লাইওভারের নিচের সড়ক বিভাজক নিয়ে।
“অন্যান্য ফ্লাইওভারের নিচের আইল্যান্ডগুলো মোড়ে মোড়ে কাটা থাকে, যাতে রিকশা রাস্তা ক্রস করতে পারে, পথচারীরা পারাপার করতে পারে। কিন্তু এখানে এত দূরে দূরে আইল্যান্ড কাটা যে অনেকখানি ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এটাও এক ধরনের যানজট সৃষ্টি করছে।"
তিন ভাগে হয়েছে ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজ। একটি অংশে রয়েছে সাতরাস্তা থেকে মগবাজার হয়ে হলি ফ্যামিলি পর্যন্ত, আরেকটি অংশ শান্তিনগর থেকে মালিবাগ হয়ে রাজারবাগ পর্যন্ত এবং শেষ অংশটি বাংলামোটর থেকে মগবাজার হয়ে মৌচাক পর্যন্ত।
২০১৬ সালের ৩০ মার্চ ফ্লাইওভারের হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত অংশটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ওই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর খুলে দেওয়া হয় ইস্কাটন-মৌচাক অংশ।
তৃতীয় ধাপে গত ১৭ মে ফ্লাইওভারের এফডিসি মোড় থেকে সোনারগাঁও হোটেলের দিকের অংশটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
শান্তিনগর-মালিবাগ-রাজারবাগ অংশ এবং বাংলামোটর-মগবাজার-মৌচাকের আরেক অংশ বৃহস্পতিবার যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে।
ফ্লাইওভারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কারণে বৃহস্পতিবার মৌচাক-মালিবাগ এলাকা এড়িয়ে চলতে নগরবাসীকে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন।