বিবৃতির প্রেক্ষাপট সহকর্মীদের জানালেন বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা

কোন প্রেক্ষাপটে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের তরফে বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল, তা সহকর্মীদের কাছে তুলে ধরেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Oct 2017, 02:20 PM
Updated : 16 Oct 2017, 02:20 PM

সোমবার বিকালে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারকদের নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টার ফুলকোর্ট সভায় তিনি তা তুলে ধরেন বলে বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিকজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন।

দীর্ঘ ছুটি নিয়ে গত শুক্রবার বিদেশ যাওয়ার আগে প্রধান বিচারপতি সিনহা একটি লিখিত বিবৃতি সাংবাদিকদের দেওয়ার পাশাপাশি কিছু কথাও বলেছিলেন।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে থাকা বিচারপতি সিনহা বলেছিলেন, তিনি অসুস্থ নন, কিন্তু সরকারের আচরণে বিব্রত হয়ে ছুটি নিয়েছেন তিনি।

বিচার বিভাগের উপর সরকারের হস্তক্ষেপের অভিযোগও করে যান বিচারপতি সিনহা।

তার পরদিন সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে বিরল এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম, নৈতিক স্খলনসহ ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠেছে, যে বিষয়ে গ্রহণযোগ্য কোনো বক্তব্য আপিল বিভাগের বিচারকদের কাছে দিতে পারেননি তিনি।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলামের স্বাক্ষরে শনিবার বিবৃতিটি আসার পর সোমবার ফুল কোর্ট সভা ডাকেন দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা।

বৈঠকে থাকা একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি সহকর্মী বিচারপতিদের অবহিত করেছেন যে, গত শুক্রবার রাতে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, সে প্রেক্ষাপটেই পরদিন সুপ্রিম কোর্টকে এমন বিবৃতি দিতে হয়েছিল।”

বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা (ফাইল ছবি)

সেদিনের বিবৃতিতেও বলা হয়েছিল, প্রধান বিচারপতির পদটির মর্যাদা সুমুন্নত রাখতে ইতোপূর্বে সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে কথা না বললেও বিদেশ যাওয়ার আগে বিচারপতি সিনহার লিখিত ‘বিভ্রান্তিমূলক বিবৃতি’ দেখে এই বক্তব্য দিল।

সুপ্রিম কোর্টের এভাবে বিবৃতি দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, “প্রধান বিচারপতি বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে যে নাটকীয়তার সৃষ্টি করে গেছেন এবং লিখিত একটি বিবৃতি তিনি সাংবাদিকদের হাতে দিয়ে গেছেন, তার প্রেক্ষিতে দেশবাসীকে জানানো প্রয়োজন ছিল বলে মনে করি।

“প্রধান বিচারপতি যে বিবৃতি দিয়ে গেছেন, এর প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট যদি বসে থাকত, তাহলে দেশবাসী একটি বিভ্রান্তিতে পড়ে যেত। দেশবাসীর কাছে এ সমস্ত ঘটনার স্পষ্ট করার প্রয়োজন ছিল বলে আমি মনে করি।”

বিবৃতির বিষয়ে সরাসরি কিছু না বললেও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “সুপ্রিম কোর্টকে নিয়ে বা যে কোনো প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে যদি বিতর্ক সৃষ্টি হয়, তাহলে আইন বলে, সেই প্রতিষ্ঠান একটা জবাব দিতে পারে।”

বিচারপতি এস কে সিনহা

 

ওই বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গত ৩০ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিদের ডেকে নিয়ে বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে ‘১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ’ তুলে ধরেন।

তারপর আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি বাসায় গিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক করে তার বক্তব্য জানতে চান।

“কিন্তু তার কাছ থেকে কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা ও সুদত্তর না পেয়ে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি তাকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, এই অবস্থায় অভিযোগসমূহের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে তাদের পক্ষে বিচারকাজ পরিচালনা সম্ভবপর হবে না।”

এরপর বিচারপতি সিনহা সহকর্মীদের কিছু না জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে ছুটিতে যাওয়ার কথা জানান বলে বিবৃতিতে বলা হয়।

ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারক বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির কার্যভার দেন রাষ্ট্রপতি।