আসছে ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের সব ভোটারের হাতে ‘স্মার্ট’ জাতীয় পরিচয়পত্র’ তুলে দেওয়ার লক্ষ্য পূরণ করতে পারছে না নির্বাচন কমিশন।
Published : 11 Aug 2017, 08:32 PM
স্মার্টকার্ড দেশেই বানাতে চায় ইসি
অভিনন্দনের জবাবে শেখ হাসিনাকে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীর চিঠি
স্মার্টকার্ড: প্রস্তুত হয়নি অর্ধেকের বেশি
বিদেশি ঠিকাদারের ব্যর্থতার পর ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ (এনআইডি উইং) স্মার্টকার্ড তৈরি ও বিতরণের উদ্যোগ নিলেও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে থমকে আছে সেই কাজ।
এ কাজে ইসিকে কারিগরী সহায়তা দিতে গঠিত কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. হায়দার আলী বলেন, নয় কোটি ভোটারের মধ্যে এ পর্যন্ত ১ কোটির বেশি নাগরিক স্মার্টকার্ড পেয়েছেন। সবাইকে কার্ড দিতে আরও অন্তত দুই বছর লাগতে পারে।
ঢাকা মহানগরীতে স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু হয়েছিল গত বছরের অক্টোবরে, কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন ইসির সময়ে। এই কার্ড নেওয়ার সময় ভোটারদের ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি সংগ্রহ করা হচ্ছে, যা ইসির এনআইডি উইংয়ের তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষিত থাকবে।
আঙ্গুলের ছাপ ও আইরিশের প্রতিচ্ছবি নেওয়ার জন্য তখন যে ১০০ জোড়া যন্ত্র নিয়ে কাজ শুরু হয়েছিল, তার ৩৭ জোড়াই এখন অচল বলে জানান কারিগরী কমিটির সদস্য অধ্যাপক হায়দার।
তিনি বলেন, ফ্রান্সের কোম্পানি অবার্থুর টেকনোলজিসের তৈরি করে দেওয়া সাত কোটির বেশি খালি কার্ডে ভোটারের তথ্য সন্নিবেশ করে ‘পারসোনালাইজেশনের’ কাজ এখনও বাকি। পাশাপাশি আঙ্গুল ও আইরিশের প্রতিচ্ছবি নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক যন্ত্রপাতি না থাকায় বিতরণ কাজ চলছে ধীর গতিতে।
কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর মার্চে চট্টগ্রাম এবং পর্যায়ক্রমে আরও কয়েকটি সিটি করপোরেশনে স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু হলেও এখনও উপজেলা পর্যায়ে বিতরণে যাওয়া যায়নি।
বিতরণ কাজ দ্রুত করতে ইসি সচিবালয় গত এপ্রিলে আঙ্গুলের ছাপ ও আইরিশের প্রতিচ্ছবি নেওয়ার কাজ আপাতত বন্ধ রাখার সুপারিশ করলেও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় তা নাকচ হয়ে যায়।
কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও তা করতে না পারায় কোম্পানিটির সঙ্গে চুক্তি বাতিলের পর নিজেদের উদ্যোগে সে কাজ করার উদ্যোগ নেয় ইসি।
অবার্থুরের সঙ্গে চুক্তি বাতিল হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্মার্টকার্ড বিতরণ শেষ করার আশা প্রকাশ করে এনআইডি উইংয়ের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলাম সে সময় বলেছিলেন, “আমরা দ্রুত লোকবল প্রস্তুত করছি, পারসোনালাইজেশন মেশিনও কাজ করছে। ডিসেম্বরের মধ্যে নাগরিকদের হাতে কার্ড পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব।”
কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে বিতরণ এগিয়ে নিতে গত বুধবার ইসির সঙ্গে কারিগরী কমিটির বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, তাতে আর সেই লক্ষ্য পূরণের আশা দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা।
স্মার্টকার্ডের অগ্রগতি
>> চুক্তির ৯ কোটি কার্ডের মধ্যে ইসি হাতে পেয়েছে ৬ কোটি ৬৩ লাখ, অর্থাৎ ৭৩.৭৪%; আরও ২কোটি ৩৬ লাখ (২৬.২৭%) কার্ড তৈরির কাজ এখনও বাকি।
>> ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১ কোটি ২৪ লাখ (১৩.৭৯%) কার্ডের পার্সোনালাইজেশন সম্পন্ন হয়েছে। আরও ৭ কোটি ৭৫ লাখ (৮৬.২১%) খালি কার্ডে নাগরিকের তথ্য সন্নিবেশ করার কাজ বাকি।
>> ৯ কোটি ভোটারের মধ্যে স্মার্টকার্ড হাতে পেয়েছেন মাত্র ১ কোটি ৯ হাজার (১২.২০%) নাগরিক।
অধ্যাপক হায়দার আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আঙ্গুলের ছাপ ও আইরিশের প্রতিচ্ছবি নিতে প্রায় চার হাজার ডিভাইস প্রয়োজন, যার প্রতিটির মূল্য প্রায় ২৫ হাজার টাকা করে।
খালি কার্ডে নাগরিকদের তথ্য সন্নিবেশের মাধ্যমে (পারসোনালাইজেশন) তা ব্যবহার উপযোগী করা হলেও এসব যন্ত্রপাতি না হলে বিতরণ শেষ করা যাবে না। সেক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায়ে স্মার্টকার্ড বিতরণ মুখ থুবড়ে পড়বে জানিয়ে দ্রুত এসব সামগ্রী কেনার সুপারিশ করেছে কারিগরী কমিটি।
এনআইডি উইংয়ের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, সিইসি, নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, এনআইডি উইং ও কারিগরি টিমের সদস্যদের নিয়ে বুধবারের ওই বৈঠকে স্মার্টকার্ড বিতরণ তরান্বিত করতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তবে সব কার্ড পৌঁছাতে কত সময় লাগতে পারে, সে প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর দেননি তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যেহেতু আমরা (ফ্রান্সের অবার্থুরের সঙ্গে) একটা চুক্তির আওতায় ছিলাম, সেহেতু ডিসেম্বরের মধ্যে দেওয়ার লক্ষ্য ছিল।
“যেহেতু চুক্তিটির মেয়াদ শেষ, আর নবায়ন হচ্ছে না- এবার আমরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যত দ্রুত সম্ভব তা বিতরণের চেষ্টা করে যাব। বাস্তবতা বিবেচনা করে পরিস্থিতি সামাল দেব আমরা।”
নির্বাচন কমিশন ২০১৪ সালে ফ্রান্সের অবার্থুরের সঙ্গে যে চুক্তি করেছিল, তাতে নয় কোটি ভোটারের জন্য স্মার্টকার্ড তৈরির কথা ছিল। সে কাজ শেষ হওয়ার আগেই বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ১০ কোটি ১৮ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। চলমান হালনাগাদ শেষে আসছে জানুয়ারিতে এই তালিকায় যোগ হবে আরও অন্তত ২৫ লাখ নাম।
সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে বাকি সোয়া কোটি স্মার্ট কার্ড তৈরি করে ইসির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পারসোনালাইজেশন করে বিতরণ করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান।