মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রহ করে তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিকজনরা।
Published : 08 Aug 2017, 05:06 PM
মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে ‘১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতনের স্মৃতিভাষ্য’ শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকসহ নানা পেশার নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এ আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় জীবনের প্রেরণার উৎস। সে কারণেই নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জাগ্রত করা খুব জরুরি।
“আজ থেকে ১০ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শীরা কেউই হয়তো বেঁচে থাকবেন না। আর সে কারণেই আমাদের উচিত মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জেনে তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা।”
সাংবাদিক জুলফিকার মানিক বলেন, “আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের পরের প্রজন্ম আছি, তাদের অনেকেই জানি না মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস। কেননা পচাত্তরের ১৫ অগাস্টের পর মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানানো হয়নি, জানানো হয়েছে বিকৃত ইতিহাস।
“আমাদের পরের প্রজন্মকেও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে উৎসাহিত করা হয়নি। তাহলে বর্তমান প্রজন্ম জানবে কি করে?”
তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রাষ্ট্র বা রাজনীতির জন্য হারিয়ে যায়নি। হারিয়ে গেছে আমাদের কারণেই। আমরা নিজেরাই এর জন্য দায়ী।”
এ সময় প্রতিটি জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি অতিরিক্ত পাঠ হিসেবে জেলাভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বই নতুন প্রজন্মকে পড়ানোর তাগিদ দেন এই সাংবাদিক।
অনুষ্ঠানে বইটির লেখক সুশান্ত ঘোষ বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ছাত্র-কৃষক-শিক্ষার্থী সবার। এটি আমাদের লেখার বিষয়, প্রেরণার বিষয়, গবেষণার বিষয়। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অন্তরের বিষয়।”
মুক্তিযুদ্ধের সময় বরিশালের কলসকাঠিতে ৬ ঘণ্টায় ৪০০ নিরীহ মানুষকে হত্যা করার ঘটনা তুল ধরে তিনি বলেন, “মানুষ যাতে পালিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য সেখানে ইঞ্জিনচালিত নৌকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
“যারা এগুলো করেছিল, তারা এখনও বেঁচে আছে। রাজাপুরের হামিদ জমাদ্দার রাজাপুরের একটি এলাকাকে বিধবা পল্লীতে পরিণত করেছিল। এ পাষণ্ডরা এখনো বেঁচে আছে।”
মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীদেরও চিহ্নিত করে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানান এই লেখক।
“মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর যদি এদের সাথে তরুণ প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দিতে পারে, তবে তাদের প্রতি জাতীয় ঘৃণা উচ্চারিত হবে। অনেক চিঠি, অনেক মর্মবেদনা আমরা বইটিতে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।”
তিনি বলেন, “এ যুদ্ধে যে নৃশংসতা চালানো হয়েছিল, যে গণহত্যা চালানো হয়েছিল তা তুলে ধরার প্রয়াস চালিয়েছি। যাতে কেউ বলতে না পারে যে, বরিশালে কোনো গণহত্যা হয়নি।
“বরিশালে যে গণহত্যা হয়েছিল, তা যদি আমরা প্রমাণ করতে পারি তাহলেই আমাদের প্রয়াস সফল হবে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রয়াস সফল হবে। মুক্তিযুদ্ধকে জীবন্ত রাখতে হবে আমাদের অন্তরে।”
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্তৃক প্রকাশিত গবেষণা গ্রন্থ ‘১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতনের স্মৃতিভাষ্য’ শীর্ষক বইটিতে বরিশাল জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরেছেন লেখক।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন তারিক আলী উপস্থিত ছিলেন।