বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশু প্রসব ১৫ শতাংশের মধ্যে রাখার কথা বলা হলেও বাংলাদেশে তা অনেক বেশি।
Published : 31 Jul 2017, 06:02 PM
এর মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সরকারি হাসপাতালের চেয়ে দ্বিগুণ হারে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে (সিজার অপারেশন নামে সাধারণভাবে পরিচিত) প্রসব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহেদ মালেক স্বপন।
বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালন উপলক্ষে সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসবের হার তুলে ধরে জনসচেতনতার মাধ্যমে তা কমিয়ে আনার উপর জোর দেন।
জাহেদ মালেক বলেন, “ডব্লিউএইচও’র নিয়মানুযায়ী ১৫ শতাংশের বেশি সিজার হওয়ার কথা না। আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাসপাতালগুলোতে ২০ থেকে ২৫ শতাংশের বেশি সিজার হয় না, কোনো ক্ষেত্রে এর থেকে কম। প্রাইভেট সেক্টরে ৫০ শতাংশের বেশি সিজার হয়ে থাকে।”
সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডের চেয়ে বেশি থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাসপাতালগুলো জটিল কেইসগুলোই আসে, সেজন্য সিজার একটু বেশি হচ্ছে।”
বাংলাদেশে প্রসূতি ও চিকিৎসক উভয়ের কারণেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসব বেশি হচ্ছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
“অনেক সময় অনেক মায়েরা পেইন সহ্য করতে চায় না। তারা পেইন থেকে তাড়াতাড়ি মুক্ত হতে সিজার করায়। ডাক্তারদের কিছুটা সময়ের অভাব থাকে, তারাও একটু তাড়াহুড়োর মধ্যে থাকে। যার ফলে তারা (ডাক্তার) সময় দিতে চায় না।”
“(সিজার করানো নিয়ে) ডাক্তারদের বাণিজ্যিক বিষয় আছে, এটা সব সময় সঠিক নয়, কিছু ক্ষেত্রে থাকতে পারে। সব জায়গায়ই তো অনৈতিক কাজ কম-বেশি থাকে।”
অন্য দেশে ধাত্রীদের দিয়ে প্রসব করানো হলেও বাংলাদেশে তা এখনও কম।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বাংলাদেশেও এটা করার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা তিন হাজার ধাত্রীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি, অর্ধেকের বেশিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। বাকিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে দেওয়া হবে।”
প্রশিক্ষিত ধাত্রীদের দিয়ে প্রসব করানো শুরু হলে অস্ত্রোপচারের সংখ্যা কমে যাবে বলে আশা করছেন জাহেদ মালেক।
অস্ত্রোপচারের ফলে নারীদের কিছু শারিরীক দুর্বলতা রয়ে যায় বলে তা এড়াতে স্বাভাবিক প্রসব উৎসাহিত করতে মন্ত্রণালয় নানা কাজ চালাচ্ছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহের কর্মসূচি
প্রতিবারের মতো এবারও সরকারিভাবে আগামী ১ থেকে ৭ অগাস্ট বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালন করা হবে। এবার এই দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘মাতৃদুগ্ধপান টেকসই করতে আসুন ঐক্যবদ্ধ হই’।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রতি লাখ জীবিত জন্মের মধ্যে ২০০১ সালে ৩২২ জন মা মারা গেলেও ২০১৬ সালে তা ১৭০ জনে নেমে এসেছে। নবজাতক মৃত্যুহার ও শিশু মৃত্যুর হারও কমেছে। কমেছে ৫ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের অপুষ্টির হার।
মাতৃদুগ্ধ না পলে শিশু সঠিকভাবে বেড়ে ওঠে না বলে পুষ্টিহীনতায় অনেক শিশু মারা যায়, বলেন তিনি।
১ অগাস্ট ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহের উদ্বোধন করবেন। এদিন ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন প্রাঙ্গণে মা ও শিশু স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক প্রদর্শনী হবে।
এছাড়া ৪ অগাস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে শিশু-কিশোরদের জন্য চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে বলেও জানান স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী।
এই বাইরে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এবং কমিউনিটি পর্যায়ে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহের শোভাযাত্রা, শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো, বাড়তি খাবার খাওয়ানো এবং দিবসটির প্রতিপাদ্যের উপর আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে বলেও জানান জাহেদ মালেক।
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে ১৯৯২ সাল থেকে প্রতি বছর ১ থেকে ৭ অগাস্ট বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে।