বয়স হলেও বার্ধক্য বা প্রৌঢ়ত্ব-শব্দগুলো পছন্দ নয় তার, হতাশা-নিরানন্দ গ্রাস করতে পারেনি তাকে, জীবনকে নানাভাবে উপভোগের মন্ত্রে সময় বয়ে যায় কবি হায়াৎ মামুদের।
Published : 12 Jul 2017, 08:04 PM
কঠিন কঠোর দ্বান্দ্বিকতা নয়, জীবনবোধে সহজ-সরলতা আশ্রয়ী বলে জানালেন বাংলার এই অধ্যাপক।
গত ২ জুলাই নিজের ৭৮তম জন্মদিন উপলক্ষে বুধবার আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসে কবি বললেন, “এ জীবনে নেই কোনো দুঃখের স্মৃতি। এ জীবন বড় সুখের।
“এ জীবনে ভালোবাসা ব্যতীত আর আছে কী? এ ভালোবাসা নিয়েই নিয়ে যেন চলে যেতে পারি।”
১৯৩৯ সালের ২ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের হুগলিতে জন্ম নেওয়া হায়াৎ মামুদ বাংলা একাডেমিতে চাকরির পর অধ্যাপনা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। কবিতা, অনুবাদ সাহিত্য, প্রবন্ধ, শিশুসাহিত্য সবক্ষেত্রেই তার বিচরণ করেছেন তিনি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে গত শতকের ষাটের দশকে তার লেখা ‘মৃত্যুচিন্তা রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য জটিলতা’ দারুণ সাড়া জাগিয়েছিল।
সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘রঙ্গে ভরা বঙ্গ’র আয়োজনে বিকালে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় অধ্যাপক হায়াৎ মামুদের জন্মদিনের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানের।
‘প্রিয় ব্যক্তিত্বকে’ শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদু্জ্জামান নূর, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, কণ্ঠশিল্পী বুলবুল মহলানবীশসহ তার ভক্ত অনুরাগীরা।
ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়ে অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছোটবেলায় কিন্তু কখনও জন্মদিন পালন করতাম না। বুড়ো বয়সে এসে বন্ধুরা এসব আয়োজন করছে।”
জন্মদিনে সতীর্থ, অনুজ ও অনুরাগীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন তিনি।
“কিছু মানুষের উপকার করেছিলাম হয়ত, তারই ভালোবাসার প্রতিদান দিচ্ছে আজ ওরা। আমি এ জন্মে কারও খুব খারাপ করিনি, অনেককে তুষ্ট করেছি। অনেক মানুষের ভালোবাসা পেয়ে যাচ্ছি। ভালোবেসে সবাই আমাকে আপন মনে করছে। এই ভালোবাসাই তো জীবনের আসল পাওয়া।”
শিল্পী বুলবুল মহলানবীশের কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত ‘এ দিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিল দ্বার’ গানটির মাধ্যমে জন্মদিনের আয়োজনের শুরু। তারপর অধ্যাপক হায়াৎ মামুদকে নিয়ে প্রবন্ধ পাঠ করেন রঙ্গে ভরা বঙ্গর সহ-সভাপতি ড. শওকত আরা হায়দার।
সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর হায়াৎ মামুদকে দেখেন ‘সমাজসচেতন সাহসী মানুষ’ হিসেবে।
শিল্প-সাহিত্য বা রাজনৈতিক আড্ডায় হায়াৎ মামুদকে একজন ‘সংস্কৃতিমনস্ক, সচেতন, সদালাপী ও প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা মানুষ’ হিসেবে দেখার কথাও বলেন আসাদুজ্জামান নূর।
সংস্কৃতিমন্ত্রী পরে বলেন, “১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর এদেশে যে কয়জন লেখক এ অন্যায় অত্যাচার অবিচারের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে কলম ধরেছিলেন তাদের মধ্যে হায়াৎ মামুদ অন্যতম।
“যে কোনো অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি আজীবন প্রতিবাদী। তিনি অসাম্প্রদায়িক, কল্যাণকামী ও মুক্তমনা একজন মানুষ।”
বন্ধু, সহকর্মী হায়াৎ মামুদকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন রুশ গবেষক, লেখক এলিনাবাজ।
দুই দশকের বেশি সময়ের পরিচয়ের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “হায়াৎ মামুদের মতো লোক খুব কম পাওয়া যায়। ও সব সময় হাসি খুশি থাকে, আর ওর মন খুব বড়।”
রুশ সাহিত্যের অনুবাদক হিসেবে একসঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে এলিনাবাজ বলেন, “হায়াৎ মামুদ খুব গভীরতার সঙ্গে অনুবাদ কাজটি করেছিল। মনে পড়ে, এরশাদের শাসনামলে কারফিউ ভেঙ্গে সে আমার বাসায় এসেছিল। রাতভর জাগিয়ে রেখেছিল কাজে আর আড্ডায়।”
৫৮ বছরের বন্ধুত্বের নানা ঘটনা তুলে ধরার পর শামসুজ্জামান খান হায়াৎ মামুদের সাহিত্যকর্মেরও মূল্যায়ন করেন।
তিনি বলেন, “তার গদ্য লেখার ক্ষমতা অসাধারণ, চিন্তা, পরিশীলতা আর প্রকাশ ভঙ্গীর এক অপূর্ব সংযোগ তিনিই ঘটাতে পারেন। তার কবিতায় রয়েছে মিষ্টি সৌন্দর্য, আবেগ ও যুক্তি। সমালোচনা সাহিত্যেও তিনি চিন্তাশীলতার পরিচয় দিয়েছেন।”