কোনো এলাকায় তিন বছর রয়েছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংস্থার এমন কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
Published : 11 Jul 2017, 12:15 AM
রোববার এক প্রজ্ঞাপনে কমিশন সচিবালয়ের মাঠ পর্যায়ের ১০টি শীর্ষ পদে রদবদল আনা হয়েছে। সারাদেশের এক-তৃতীয়াংশ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার দপ্তরও হয়েছে পরিবর্তন।
দেশজুড়ে ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদ কাজ শুরুর দুই সপ্তাহ আগেই আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব বণ্টন হল। সেই সঙ্গে একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেড় বছর আগেই ইসি সচিবালয়ের মাঠ কর্মকর্তাদের শীর্ষ পদে এল রদবদল।
কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসির অধীনে দেড় বছর পর একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। ফেব্রুয়ারিতে ৫ সদস্যের ইসি গঠনের পর থেকে রদবদল চলছে।
এর কারণ জানতে চাইলে সোমবার ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সামনে নির্বাচন রয়েছে, হালনাগাদের মতো বড় কর্মযজ্ঞ রয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা-জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কিছু শূন্য পদ ছিল এবং তিন বছর একই কর্মস্থলে কাটিয়েছে অধিকাংশ কর্মকর্তা।”
দক্ষতা, যোগ্যতাসহ সার্বিক মানদণ্ড বিবেচনা করেই এ রদবদল করা হয়েছে, বলেন তিনি।
নির্বাচনী কাজের সুবিধায় যেসব এলাকায় কর্মকর্তা নেই সেখানে পাশের উপজেলা কর্মকর্তাকে চলতি দায়িত্বে রাখা হয়েছে বলে অতিরিক্ত সচিব জানান।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছরে প্রায় দুই শতাধিক কর্মকর্তার পদে রদবদল করা হয়েছে। কিছু কর্মকর্তা অবসরে যাওয়ায় পদোন্নতিও দেওয়া হয়েছে অনেককে। পর্যায়ক্রমে কর্মকর্তাদের রদবদল চলতে থাকবে।
আঞ্চলিক পর্যায়ে রদবদল
কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডলকে ঢাকায়, রাজশাহীর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকারকে রংপুরে, সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এস এম এজহারুল ইসলামকে কুমিল্লায়, খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমানকে বরিশালে এবং ফরিদপুরের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোস্তফা ফারুককে খুলনায় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা হিসাবে বদলি করা হয়েছে।
এছাড়া রাজশাহী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সৈয়দ আমিরুল ইসলামকে রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, ইসি সচিবালয়ের সচিবের একান্ত কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী মো. মঈন উদ্দিন খানকে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, বরিশালের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আব্দুল হালিম খানকে ইসি সচিবালয়ের উপ-সচিব, ইসি সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মো. সাবেদ উর-রহমানকে ফরিদপুরের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং নড়াইলের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সেখ আনোয়ার হোসেনকে সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা হিসাবে চলতি দায়িত্বে বদলি করা হয়েছে।
রোববার চারটি পৃথক প্রজ্ঞাপনে ৩৩ কর্মকর্তাকে রদবদল করে কমিশন সচিবালয়। এরমধ্যে ২৩ জন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রয়েছে।
ইসির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা
>আঞ্চলিক কার্যালয়: ৭টি বিভাগীয় সদর ও আরও ৩টি জেলায় মোট ১০জন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রয়েছেন।
>জেলা কার্যালয়: ৬৪টি জেলা সদরে মোট ৬৪টি জেলা নির্বাচন কার্যালয় রয়েছে। এর প্রতিটি’র রয়েছেন একজন করে সিনিয়র/জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।
>মাঠ পর্যায়ের সর্ব নিম্ন ধাপে সবগুলো উপজেলা / থানায় রয়েছেন ৫ শতাধিক উপজেলা / থানা নির্বাচন কর্মকর্তা।
>ভোটার নিবন্ধন এবং ভোটার তালিকা প্রণয়ন, ভোটার তালিকা ছাপানো, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন ব্যবস্থাপনা, নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এবং নির্বাচনের যাবতীয় আয়োজনসহ , নির্বাচন কমিশনের অর্পিত অন্যান্য কাজ চলে এসব কার্যালয়ে।
ইসির ৭৯২টি প্রথম শ্রেণি ও ২ হাজার ৩৭টি অন্যান্য শ্রেণির অনুমোদিত পদ রয়েছে। এরমধ্যে ইসি সচিবালয়ে রয়েছে ৩শ’ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠ কর্মকর্তাদের একই কর্মস্থলে ২৫ বছরেরও বেশি সময় কাটানোর নজির রয়েছে। তবে ২০০৮ সালে এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন নবম সংসদের আগে চাকরিবিধি সংশোধন করে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের ব্যাপক রদবদল করে। এ ধারাবাহিকতায় বর্তমান ইসিও রদবদল অব্যাহত রাখে।
সিইসি নূরুল হুদা গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নিয়েই ইসি কর্মকর্তাদের বলেন, “যে দক্ষ জনবল রয়েছে তাতে বাংলাদেশে ভালো নির্বাচন উপহার দেওয়া সম্ভব হবে। শুধু একটা না, সামনে যেসব নির্বাচন আসবে তা দৃঢতার সাথে মোকাবেলা করব।”
এপ্রিলে মাঠ কর্মকর্তাদের সমন্বয় সভায় সিইসি জাতীয় নির্বাচনের জন্য কর্মকর্তাদের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, “নির্বাচনকে সামনে রেখে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করুন, কাজের প্রায়োরিটি নির্ধারণ করুন। কী কী চ্যালেঞ্জ আছে তা নির্ধারণ করুন, কীভাবে মোকাবেলা করা যায়, তা ঠিক করুন।”