ঢাকার বনানীতে জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কথা বলে বাসায় নিয়ে এক টিভি অভিনেত্রীকে ধর্ষণের মামলার আসামি ব্যবসায়ীপুত্র বাহাউদ্দিন ইভান ধরা পড়েছেন।
Published : 06 Jul 2017, 08:14 PM
বৃহস্পতিবার বিকালে নারায়ণঞ্জের মাসদাইরের পূর্ব দেওভোগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে র্যাব জানিয়েছে।
বাহিনীর মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ইভানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
ইভান (২৮) ব্যবসায়ী বোরহানউদ্দিনের ছেলে বলে বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মতিন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বনানীতে এই ব্যবসায়ীর একটি বিপণি বিতান রয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে ইভান বনানী ২ নম্বর সড়কে নিজের বাসায় ডেকে নিয়ে পূর্ব পরিচিত ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ নিয়ে তোলাপাড়ের দুই মাসের মধ্যে বুধবার ওই তরুণী বনানী থানায় মামলার পর ইভানকে খুঁজছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
অভিযান পরিচালায় থাকা র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, “ইভান নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করছে বলে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সন্ধ্যায় মাসদাইরের বাড়িটিতে অভিযান চালানো হয়।”
ওই বাড়িটি ইভানের খালুর বলে স্থানীয়রা জানান।
পূর্ব দেওভোগ শেরেবাংলা রোড এলাকার বাসিন্দা ইরফান সরদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিকালে আমিসহ কয়েকজন মিলে পাশের একটি দোকানের সামনে বসে দাবা খেলছিলাম। সাড়ে ৩টার দিকে র্যাব-১১ লেখা তিন/ চারটি গাড়ি এসে থামে।
“কিছু বুঝে উঠার আগেই গাড়ি থেকে নেমে র্যাব সদস্যরা দ্রুত এরশাদ উল্লাহ বাড়িতে ঢুকে যায়। পরে আমাকে দুজন র্যাব সদস্য ডেকে ওই বাড়ির ভেতরে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে দেখি ইভান নামে ওই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
“এসময় আমি এরশাদ উল্লাহকে জিজ্ঞাসা করি, ইভান আপনার কী হয়? তখন তিনি বলেন, ‘ভায়রার ছেলে’।”
পরে র্যাব সদস্যরা সাক্ষী হিসেবে একটি কাগজে স্বাক্ষর নেন বলে ইরফান জানান।
পুলিশ ইভানের বনানীর বাসায় গিয়ে বৃহস্পতিবার কাউকে পায়নি। ওই তরুণী রাতে বের হওয়ার পর যারা তাকে দেখেছেন, এমন কয়েকজনের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।
এদিকে অভিযোগকারী তরুণীকে বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শেষে আবার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে আনা হয়েছে।
বনানী থানার পরিদর্শক মতিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আরও কিছু আনুষ্ঠানিকতা আছে বলেই তাকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে।”
মামলার এজহারে ওই তরুণী বলেন, ফেইসবুকের সূত্র ধরে ইভানের সঙ্গে তার পরিচয় এবং গত চার মাস ধরে তাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
গত মঙ্গলবার (৪ জুলাই) রাত ৯টায় ইভান ফোন করে তার জন্মদিনের কথা বলে বাসায় ডেকে নিয়েছিল বলে ওই তরুণী জানান। ফোনে ইভান তার মা পরিচয় দিয়ে একজনের সঙ্গে কথাও বলিয়ে দিয়েছিলেন।
ওই তরুণী বলেন, রাত সাড়ে ১০টায় রিকশায় করে ইভানের বাসায় গিয়ে কাউকে দেখতে পাননি তিনি। তখন ইভান তাকে বলছিলেন, ‘বাবা-মা অসুস্থ ঘুমিয়ে গেছে, চেঁচামেচি করা যাবে না’।
ওই তরুণী বলেছেন, ইভানের বাসায় যাওয়ার পর জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কোনো নমুনা তিনি দেখতে পাননি।
পরে ইভান তাকে জোর করে নেশাজাতীয় পানীয় পান করানোর পর ধর্ষণ করেন। এরপর তিনি চিৎকার করলে ইভান তার ব্যাগ রেখে তাকে বাসা থেকে বের করে দেন রাত সাড়ে ৩টার দিকে।
এজাহারে তরুণী আরও দাবি করেছেন, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ইভান তাকে এর আগেও ধর্ষণ করেছিল এবং তার ভিডিও করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছিল।