এক মাস রোজার পর বাংলাদেশের মুসলমানরা ঈদুল ফিতর উদযাপন করছে আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে।
Published : 26 Jun 2017, 09:37 AM
বরাবরের মত এবারও ঈদের প্রধান জামাত হয়েছে ঢাকার জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে, যেখানে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা, বয়সের লাখো মুসলমান।
সোমবার সকালে দলে দলে মানুষ রাজধানীর বিভিন্ন ঈদগাহ ময়দান ও মসজিদে ছোটে ঈদের নামাজ আদায় করতে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের প্রথম জামাত হয় সকাল ৭টায়।
এর দেড় ঘণ্টা পর রাজধানীতে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত হয় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে, সকাল সাড়ে ৮টায়।
বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের জ্যেষ্ঠ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমানের ইমামতিতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, মন্ত্রিসভার সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, কূটনীতিক, সরকারি কর্মকর্তাসহ সব শ্রেণি পেশার নানা বয়সী মানুষ ঈদগাহে নামাজ পড়েন।
নামাজ শেষে বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় মোনাজাত করেন মাওলানা মিজানুর রহমান।
সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে দু’হাত তুলে তিনি বলেন, “হে আল্লাহ, সব বালা মুসিবত থেকে তুমি আমাদের হেফাজত কর।”
জামাত শেষে পরস্পরের সঙ্গে কোলাকোলি ও কুশল বিনিময়ের মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন সবাই।
পশ্চিম রাজাবাজার থেকে জাতীয় ঈদগাহের প্রধান জামাতে যোগ দিতে আসেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা গালিব আশরাফ। পড়াশোনা ও চাকরির সুবাদে প্রায় ১০ বছর ধরে ঢাকায় থাকলেও এবারই প্রথম ঈদগাহে নামাজ পড়ার কথা জানালেন তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে গালিব বলেন, “ছোটবেলা থেকে ঈদগাহে নামাজ পড়ার শখ ছিল। আজকের দিনে আমি চাইব, সুখী, সমৃদ্ধ, পরমতসহিষ্ণু ও জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে উঠুক।”
তিনি বলেন, “নিরাপত্তার একটু কড়াকড়ি ছিল, তবে সেটা প্রয়োজনের তাগিদেই করতে হয়েছে।”
সাড়ে ৮টায় প্রধান জামাতের আগে দীর্ঘ লাইন পার করে ঈদগাহে প্রবেশ করতে হয় নগরবাসীকে। ঈদগাহ মাঠ পূর্ণ হয়ে নামাজের কাতার ছড়িয়ে পড়ে মৎস্য ভবন, জাতীয় প্রেসক্লাব ও শিক্ষা ভবন পর্যন্ত।
নাজিমউদ্দিন রোডের ব্যবসায়ী আমিন মিয়া বলেন, “সবসময় ঈদের নামাজ এখানে পড়ি, আজকেও আসলাম। সবার সঙ্গে মিলে দোয়া করব, যেন দেশ শান্তিতে থাকে। দোয়া করব, আমাদের নিজেদের দুনিয়া-আখিরাতের যেন নাজাত হয়।”
জাতীয় ঈদগাহের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে নামাজের ব্যবস্থা ছিল নারীদের জন্য; যেখানে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তের নারীরা ঈদ জামাত ও মোনাজাতে শামিল হন।
মমতাজ বেগম বলেন, “জাতীয় ঈদগাহে মহিলাদের নামাজের জন্য আলাদা জায়গা থাকার বিষয় গতবছর জেনেছি। সেজন্য এবার আগে থেকে প্ল্যান ছিল, এখানে এসে নামাজ পড়ব। তাই চলে আসছি।”
তিনি বলেন, “আল্লাহর কাছে হাত তুলে দোয়া করেছি, যেন সকলের মঙ্গল হয়। কোনো হানাহানি ও বিশৃঙ্খলা যেন না থাকে দেশে।”
বাবা কিংবা মায়ের হাত ধরে ঈদের প্রধান জামাতে এসেছে শিশুরাও, গায়ে তাদের নতুন জামা। তাদেরই একজন তিন বছর বয়সী আফিফ ইসলাম।
ঈদ জামাতের পর শিক্ষাভবন থেকে দোয়েল চত্বরের দিকে দৌড়ে যাওয়ার সময় আফিফকে বার বার শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন তার বাবা আতিকুর রহমান। বার বার বলছিলেন, “বাবু বাবু, আস্তে হাঁটো। পড়ে যাবে কিন্তু।”
আর আফিফের চাচা মিজানুর রহমান যখন মোবাইল ফোনে ভাতিজার হই-হুল্লোড় ভিডিও করছিলেন।
ওয়ারী এলাকার ব্যবসায়ী আতিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা দুই ভাই ছেলেকে নিয়ে আসছি ঈদ জামাতে সবার সঙ্গে যোগ দিতে। ও একটু হই-হুল্লোড় করতে পছন্দ করে। এতো মানুষজন দেখে আরও বেশি মজা করতেছে।”
ঢাকায় ঈদগাহের সামিয়ানার নিচে কিংবা মসজিদের ভেতরে যাদের জায়গা হয়নি, তাদের নামাজ পড়তে হয়েছে রোদ মাথায় নিয়েই। তবে পাবনা, সাতক্ষীরাসহ দুই এক জায়গায় সকালে হালকা বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে।
ঈদ উপলক্ষে ঈদগাহ ময়দান ও আশপাশের সড়কগুলো সাজানো হয়েছে নতুন সাজে। রাতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবনে রয়েছে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সকাল ৭টা থেকে এক ঘণ্টা পর পর পাঁচটি জামাত হচ্ছে। প্রতিবারের মতো এবারও পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের জন্য ঈদের নামাজ বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে।