ধীরে ধীরে তামাক চাষ বন্ধের নীতিতে তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলছেন তামাকবিরোধী এক সেমিনারের আলোচকরা।
Published : 30 May 2017, 08:32 PM
মঙ্গলবার ‘তামাক উন্নয়নের অন্তরায়’ শিরোনামের এ সেমিনারে জানানো হয়, দেশের ৬৩ শতাংশ কর্মজীবী তাদের কর্মক্ষেত্রে আর শহরবাসীদের ৪৬ শতাংশ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। দেশের নারীরা কম তামাক গ্রহণ করলেও প্রায় এক কোটি নারী পরোক্ষ ধূমপানের শিকার।
আগামী ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসকে সামনে রেখে জাতীয় প্রেস ক্লাবে যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে ‘ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’ এবং ‘তামাক বিরোধী জোট’।
সেমিনারে বাংলাদেশ জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতির (নাটাব) সভাপতি মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু বলেন, “যেসব কৃষি জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে, পাঁচ বছর পর সেই জমিতে আর তামাক ও অন্য কোনো ফসল চাষ সম্ভব হবে না।
“আমরা নগদে বিশ্বাসী, নগদে কী পাচ্ছি সেটা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকি, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করি না।”
তামাক চাষের জন্য কৃষকদের বিভিন্ন কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রণোদনার নামে যে ‘লোভের ফাঁদে’ ফেলা হয় তা অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানান নাটাব সভাপতি।
“তাদের লাভের বিষয়টাই শুধু বেশি করে বুঝিয়ে থাকে। আজ তামাক চাষের যে বিস্তার লাভ করছে, তা প্রতিরোধ করতে হলে একে সমূলে উৎপাটন করার নীতি নিতে হবে।”
‘আস্তে আস্তে তামাক চাষ থেকে বেরিয়ে আসার নীতিতে’ তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না বলে মনে করেন তিনি।
“এই নীতিতে তামাক চাষের বিস্তার লাভ করেই যাচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চল থেকে তা গাজীপুর ও মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে যাচ্ছে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার কথা বললেও তামাকপণ্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ-অ্যামেরিকান টোবাকো কোম্পানিতে সরকারের অংশীদারিত্ব থাকার প্রসঙ্গ টানেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য পল্টু।
তিনি বলেন, “ব্রিটিশ-অ্যামেরিকান টোবাকো কোম্পানিতে সরকারের যে অংশীদারিত্ব রয়েছে, সেই অংশীদারিত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।”
তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের পাশাপাশি সমাজের সব স্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করার উপর জোর দেন তিনি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এর চাহিদা ও সরবরাহ দুটিই কমিয়ে আনতে হবে।
“তামাক নিয়ন্ত্রণ একটা বৈশ্বিক উদ্যোগ, বাংলাদেশও বিশ্বের সাথে সাথে তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের সামাজিক বিভিন্ন কর্মসূচির সঙ্গে তামাক নিয়ন্ত্রণের কাজকেও সমন্বয় করতে হবে।”
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষণা প্রতিষ্ঠান টিসিআরসির সভাপতি শামীম হায়দার পাটোয়ারী হাই কোর্টের দেওয়া ‘তামাক বিরোধী’ একটি রায়ের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “যুগান্তকারী ওই রায়ে আদালত ২০০৫ সাল থেকে নতুন করে তামাক চাষের বিষয়ে নিষেধ করেছে।কিন্তু আদালতের এই রায় বাস্তবায়নে সরকার উদাসীন।
“একই সাথে আদালত তামাক প্রস্তুতকারী হিসেবে নতুন করে কোনো প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন না দিতে বলেছে, কিন্তু এতেও আদালতের রায়ের কার্যকারিতা দেখা যাচ্ছে না।”
‘ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ’ ট্রাস্ট্রের নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, তামাক বিরোধী আলোচনায় ধোঁয়াযুক্ত তামাকের ক্ষতি নিয়ে বেশি আলোচনা হয়।কিন্তু ধোঁয়াবিহীন তামাকের ক্ষতিকর দিক নিয়ে কম আলোচনা হয়। আমাদের দেশে ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীর মধ্যে অধিকাংশই হলেন নারী।
“জর্দা ও সাদাপাতা জাতীয় খোলা তামাক মানুষের বেশি ক্ষতি করে। বাজারে এগুলোর দুই টাকা থেকে শুরু করে ২৪০ টাকার প্যাকেট পাওয়া যায়। এসব বন্ধে সচেতনতার পাশাপাশি সরকারিভাবে জোড়ালো ভূমিকা নিতে হবে।”
তামাক বিরোধী সংগঠন দ্যা ইউনিয়নের কারিগরী পরামর্শক আইনজীবী সৈয়দ মাহবুবুল আলম সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
এতে তিনি বলেন, নিষিদ্ধ থাকলেও তামাক প্রক্রিয়াজাত করতে প্রতি বছর ২৯ লাখ ৩২ হাজার গাছ পোড়ানো হয়।
“পাহাড়ি এলাকার বন থেকে এসব গাছ বেশি কাটা হয়ে থাকে। এছাড়া সমুদ্র দূষণেও তামাকের ভূমিকা রয়েছে।”
দেশের বাজারে তামাক ও তামাকজাত পণ্য নিয়ন্ত্রণ করতে কয়েকটি প্রস্তাব রাখেন মাহবুবুল আলম।
এরমধ্যে রয়েছে আসন্ন বাজেটে তামাকের উপর উচ্চহারে কর আরোপ, পর্যায়ক্রমে কর বৃদ্ধির জন্য একটি করনীতি প্রণয়ন, স্বাস্থ্য উন্নয়নে সারচার্জের টাকা জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ ও চাষ নীতিমালা দ্রুত চূড়ান্ত করা।