বনানীর হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণের আসামি নাঈম আশরাফ বা হাসান মোহাম্মদ হালিমের সঙ্গে যাদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে, তারাও শাস্তি চেয়েছেন এই যুবকের।
Published : 11 May 2017, 11:04 PM
নাঈম আশরাফ নামে ঢাকার বিভিন্ন মহলে পরিচয় দেওয়া এই যুবকের সঙ্গে মন্ত্রীপুত্র, এমপিপুত্র, রাজনীতিক, পুলিশ, ক্রীড়াবিদ, বিনোদন জগতের নানাজনের ছবি বিভিন্ন জনের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে এসেছে।
এরা সবাই দাবি করেছেন, তাদের ছবি ব্যবহার করে এই যুবক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা চালিয়েছিল। শাস্তি চেয়ে তাদের অনেকেই লিখেছেন ফেইসবুকে।
গত ৬ মে এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী থানায় ধর্ষণের মামলা করার পর তা নিয়ে তোলপাড় চলছে সারাদেশে।
ওই তরুণীর অভিযোগ, গত ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তাকে ও তার এক বান্ধবীকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন নাঈম এবং আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ।
পরে অনুসন্ধানে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের গান্দাইল গ্রামের হাসান মোহাম্মদ হালিমই নাম ভাঁড়িয়ে নাঈম নামে ছিলেন ঢাকায়।
নাঈম বা হালিমের সঙ্গে ছবির বিষয়ে সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয় ফেইসবুকে লিখেছেন, “সে নিজেকে আমার বন্ধু বলে বা আমার পরিবারের পরিচিত বলে ধারণা দিয়ে গ্রেপ্তার এড়ানোর চেষ্টা করছে। আমি আমার এই স্ট্যাটাসের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, উক্ত আসামি কোনোভাবেই আমার পরিচিত নয়।
“আমাদের সংসদীয় এলাকার কিছু ছেলের সাথে একদিন সে আমার বাসায় আসে, সৌজন্য সাক্ষাতের কথা বলে আমার সাথে ছবি তুলতে চায়। আমরা যারা রাজনীতি করি, তারা মানুষের এই ধরনের আবদার রক্ষা করতে বাধ্য হই। কিন্তু তারা যদি সেটা পরবর্তীতে কোনো প্রভাব খাটানোর জন্য বা অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে সেই দায়ভার কি আমার? এখন আমি উপলব্ধি করছি যে, সে এই উদ্দেশ্যেই হয়ত সে ছবিটি তুলেছিল।”
হালিম নিজেকে কাজীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি পরিচয় দিয়ে এলাকায় পোস্টার-ব্যানার লাগিয়ে আসছিলেন। তবে ক্ষমতাসীন দলটির সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় নেতারা বলছেন, এই যুবক কোনো পদে ছিলেন না।
ওই এলাকায় এখন সংসদ সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তার ছেলে জয় নবম সংসদে বাবার আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন।
এদিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হালিমের পরিচয় প্রকাশের পর তাকে গ্রেপ্তারে সর্বাত্মক চেষ্টা করতে মন্ত্রী নাসিম নির্দেশ দিয়েছেন বলে সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (তদন্ত) আবু ইউসুফ জানিয়েছেন।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা পরিচয়ে হালিমের পক্ষ থেকে কাজীপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এতদিন ধরে থাকা থাকা ব্যানার ও ফেস্টুনগুলো রাতারাতি নামিয়ে ফেলা হয়েছে।
জয় ফেইসবুকে লিখেছেন, “গণমাধ্যম ইতোমধ্যেই জানতে পেরেছে, এই ব্যক্তি নানা সময়ে নাম পরিবর্তন করেছে এবং বর্তমান নামটিও তার প্রকৃত নাম নয়।সে নিজেকে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের একজন নেতা দাবি করলেও স্থানীয় নেতা-কর্মীরা তাকে ‘চিটার’ বলে অভিহিত করেন।
“এই ধরনের ঘৃণ্য অপরাধীকে কোনো ধরনের প্রশ্রয় তো দূরের কথা, বরং এদেরকে আইনের আওতায় আনার ব্যাপারে আমি এবং আমার পরিবার সব সময় সচেষ্ট থেকেছি এবং আছি।”
ধর্ষণের আসামি নাঈম বা হালিমের সঙ্গে অন্য যাদের ছবি এসেছে, তারাও এই যুবকের ব্যক্তিগত চরিত্র বা উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছুই জানতেন না বলে মনে করেন জয়।
টিভি উপস্থাপিকা ও একুশে টিভির অনুষ্ঠান প্রধান ফারহানা নিশোর সঙ্গেও নাঈমের কয়েকটি ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে।
নাঈম পরিচয় দিয়ে হালিম ঢাকার কয়েকটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে চাকরি করতেন বলে জানা যাচ্ছে। পরে তিনি ‘ই-মেকার্স’ নামে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান খোলেন। ২০১৪ সালে ভারতের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী অরিজিৎ সিংয়ের কনসার্টের আয়োজক ছিল প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৬ সালে ঢাকায় ভারতের আরেক শিল্পী নেহা কাক্কারকে নিয়ে ‘নেহা কাক্কার লাইভ ইন কনসার্ট’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন নাঈম বা হালিম।
ফারহানা নিশো বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অরিজিৎ সিং, নেহা কাক্কার ও অন্য একটি কনসার্টের সময় বৈশাখী টেলিভিশন ও ইটিভিকে মিডিয়া পার্টনার করার বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে সে আমার কাছে এসেছিল। একবার এসেছিল আমাকে উপস্থাপিকা করার কথা বলে। কিন্তু আলোচনা শেষে কোনো প্রস্তাবই এগোয়নি।
“আমাদের সঙ্গে অনেক লোকের দেখা হয় পেশাগত কারণে। কিন্তু তাদের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্ক সব সময় জানা-বোঝা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রেও এমনটি হয়েছে।”
নাঈম বা হালিমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাওয়ার পাশাপাশি এই ধরনের ছবির সুযোগ নিয়ে অপপ্রচার যেন না হয়, সে বিষয়ে সবার সুবিবেচনা প্রত্যাশা করছেন ফারহানা নিশো।
জয় ও নিশোর মতো অন্যরাও তাদের ফেইসবুক পাতায় এমন কথা লিখছেন।