শেখ হাসিনার এই সফরে তিস্তার কোনো সুরাহা না হলেও বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত চুক্তিটির বিষয়ে নতুন আশা দেখিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
Published : 08 Apr 2017, 04:01 PM
শনিবার নয়া দিল্লিতে শীর্ষ বৈঠকের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দুই এদেশের বিদ্যমান সরকারই এই জট খুলতে পারবে বলে তিনি আশাবাদী।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর হায়দ্রাবাদ হাউজে মোদীর এই ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও, যার কারণে দুই দেশের এই চুক্তি ঝুলে আছে ছয় বছর ধরে।
তিস্তার জট কাটানোর লক্ষ্যে মোদীর উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে শীর্ষ বৈঠকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত করা হয়। খুলনা-কলকাতা বাস ও ট্রেন উদ্বোধনে তাকেও সঙ্গে রাখেন মোদী।
২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সইয়ের কথা থাকলেও মমতার আপত্তিতে শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়।
এরপর ক্ষমতার পালাবদলে মোদী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে এলেও এখনও তিস্তার জট খুলতে পারেননি।
শনিবার মোদী বলেন, “আমাদের প্রতিশ্রুতি এবং অব্যাহত প্রচেষ্টা সম্পর্কে আমি আপনাকে (শেখ হাসিনা) এবং বাংলাদেশের জনগণকে আশ্বস্ত করতে চাই।
“আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, আমার ও আপনার সরকারই তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যার সমাধানে পৌঁছতে পারবে।”
তিস্তা চুক্তি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বলেও স্বীকার করে নেন মোদী।
পশ্চিমবঙ্গ নিজেই পানি পাচ্ছে না দাবি করে বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি সম্পাদনে আপত্তি মমতার।
কোনো পক্ষের ক্ষতি না করে তিস্তার সমাধানের উপায় খুঁজতে দিল্লিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আমলাদের মধ্যে একটি বৈঠক হয়েছে সম্প্রতি।
শেখ হাসিনার সফরের আগে এই ধরনের উদ্যোগ মোদীর তৎপরতার ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মোদীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক শেষে শীর্ষ বৈঠকের পর শেখ হাসিনা বলেন, তিস্তা চুক্তিসহ পানি ব্যবস্থাপনার নানা বিষয়ে তাদের আলোচনা হয়েছে।
পদ্মা-গঙ্গা ব্যারেজ এবং অববাহিকা ভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করেন হাসিনা।
“আমার ঐকান্তিক বিশ্বাস, এই সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধানে আমরা ভারতের সমর্থন পাব,” বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনার এই সফরকে নয়া দিল্লি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে বলে দেশটির কূটনীতিকরা বলছেন।
শুক্রবার অপ্রত্যাশিতভাবেই শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরে হাজির হয়েছিলেন মোদী। হাসিনা থাকছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে, যা কোনো সরকারের প্রধানের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী ঘটনা।
একান্ত ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ঊষ্ণ ও আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা হয়েছে বলে দুই প্রধানমন্ত্রীই জানান। দুজনে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময়ও করেন।
মোদী বাংলায় ‘শুভ নববর্ষ’ জানিয়ে বলেন, “খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে এসেছেন। সামনেই বাংলা নববর্ষ।”
শেখ হাসিনার এই সফর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের আরেকটি ‘সোনালী অধ্যায়’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মোদী বলেন, শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে প্রতিবেশী দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আগামীতে আরও গভীর হবে এবং গতি পাবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া ভারতীয় সেনাদের সন্মাননা জানানোর বাংলাদেশের উদ্যোগের প্রশংসা করে তিনি বলেন, এটা প্রত্যেক ভারতীয়ের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।
২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর বক্তৃতা দিতে দাঁড়িয়ে মোদী বাংলাদেশের উন্নয়নে ৫০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তার ঘোষণা দেন, এর ৫০ কোটি ডলার সামরিক কেনা-কাটার জন্য।
বাংলাদেশের উন্নয়ন ভারতের কাম্য মন্তব্য করে তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। নতুন নতুন খাতে দুদেশের সহযোগিতা আরও বাড়বে।