যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও দেশের ৩ দশমিক ৩১ শতাংশ নাগরিক ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে বলে জানিয়েছে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইডব্লিউজি)।
Published : 09 Mar 2017, 03:33 PM
নাগরিকদের ওপর চালানো এক জরিপের তথ্য তুলে ধরে ইডব্লিউজির পরিচালক ড. মো. আব্দুল আলীম বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “আমাদের অডিট পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, নাগরিকদের মধ্যে ভোটার হওয়ার উপযুক্ত ৯৬ দশমিক ৬৯ শতাংশের নাম ভোটার তালিকায় আছে। ৩ দশমিক ৩১ শতাংশের নাম নেই, যদিও তাদের যোগ্যতা রয়েছে।”
২০১৫-১৬ সালে দেশের বিভিন্ন নির্বাচনে ব্যবহৃত ভোটার তালিকার নীরিক্ষা করতে গত বছরের শেষ দিকে ‘লিস্ট টু পিউপল’ ও ‘পিউপল টু লিস্ট’ পদ্ধতি ব্যবহার করে এ জরিপ করা হয় বলে ইডব্লিউজি জানিয়েছে।
এতে ভোটার তালিকার ৩ হাজার জনকে বাছাই করা হয়। পাশাপাশি ৩ হাজার খানার ১০ হাজার ৩৮৬ জনের তথ্য নেওয়া হয়, যাদের জন্ম ১ জানুয়ারি ২০০০ বা তার আগে, অথচ ভোটার হিসেবে তারা নিবন্ধিত নন।
তারপর তাদের তথ্য বিশ্লেষণ করে যোগ্যতা সত্ত্বেও কত শতাংশ নাগরিক ভোটার হতে পারেননি তা বের করা হয়।
আলীম জানান, তাদের হিসাবে দুই কারণে নাগরিকরা ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।
“একটি হচ্ছে তথ্য সংগ্রহকারীরা যখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের তথ্য নিচ্ছেন তখন বাদ পড়াদের ৫৬ দশমিক ১ শতাংশ বাড়িতেই ছিলেন না, আবার নিবন্ধনের সময় তাদের ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিলেও ব্যর্থ হয়েছেন।”
অনিবন্ধনের সর্বোচ্চ হার চট্টগ্রামে বলে জানান তিনি।
“সেখানে ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ নাগরিক ভোটার হতে পারেননি। এরপর খুলনায় ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ। সবচেয়ে কম অনিবন্ধিত বরিশাল বিভাগে, মাত্র ৩ দশমিক ৮ শতাংশ।”
তথ্যের ৯০ শতাংশ সঠিক
ভোটার তালিকায় লিপিবদ্ধ তথ্যর ৯০ শতাংশ সঠিক বলেও ইডব্লিউজির ওই জরিপে উঠে এসেছে।
জরিপে লিপিবদ্ধ তথ্যে অশুদ্ধতার হারও পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। দেখা গেছে, ভোটারের নামের বানানে ভুল আছে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ ক্ষেত্রে।
পিতা বা স্বামীর নামের বানানে ভুল আছে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ, মায়ের নামের বানানে ভুল ৭ দশমিক ১ শতাংশ, জন্ম তারিখে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ, পেশায় ৫ দশমিক ৮ শতাংশ ভুল। ঠিকানা ভুলভাবে লেখা হয়েছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ তথ্যে।
নারীদের তুলনায় পুরুষ ভোটার, আর শহরের চেয়ে গ্রামের ভোটারদের তথ্যে ভুলের পরিমাণ বেশি বলেও জরিপে উঠে এসেছে।
দেখা গেছে, তালিকায় থাকা ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ নারীর তথ্য ভুল, পুরুষদের ক্ষেত্রে এ হার ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
শহরের ১৫ দশমিক ৩ শতাংশের বিপরীতে গ্রামের ৮৪ দশমিক ৭ শতাংশ ভোটারের তথ্যে ভুল পাওয়া গেছে।
জরিপে ৩ শতাংশ মৃত ভোটার, ৯ দশমিক ৪ শতাংশ স্থানান্তরিত ভোটার এবং ‘খুঁজে পাওয়া যায়নি’ এমন ১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোটারের তথ্য মিলেছে বলেও ইডব্লিউজি সদস্য নোমান আহমেদ খান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “ভোটার তালিকা সঠিক না হলে নির্বাচনে অনিয়ম ও অস্বচ্ছতার সম্ভাবনা থাকে, এই জন্য আমরা ভোটার তালিকা তুলে ধরেছি।
“জরিপ থেকে উঠে আসা এসব তথ্য আমরা নির্বাচন কমিশনকে দিয়েছি, গণতন্ত্র ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে, সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আশায় এই জরিপ করা হয়েছে।”
ইডব্লিউজির সদস্য অধ্যাপক ড. নাজমূল আহসান কলিমউল্লাহ, রেজাউল করিম চৌধুরী ও আব্দুস সালাম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।