২০১৫ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি রাতে স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে নিয়ে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে জঙ্গি কায়দায় হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অভিজিৎ রায়। চাপাতির আঘাতে আঙুল হারান তার স্ত্রী।
লেখালেখির কারণে আগে থেকেই ধর্মীয় উগ্রবাদীদের হুমকির মুখে ছিলেন প্রকৌশলী অভিজিৎ। তারই ধারাবাহিকতায় এ খুন বলে পরে জানায় পুলিশ।
ঘটনার পরদিন শাহবাগ থানায় মামলা করেন অভিজিতের বাবা। এরপর বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদের খবর এলেও দুই বছরেও মামলার অভিযোগপত্র দিতে পারেনি পুলিশ।
সর্বশেষ গত সপ্তাহে ধার্য দিনে তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম ২৭ মার্চ প্রতিবেদন দেওয়ার নতুন দিন ঠিক করে দেন।
মামলাটির তদন্ত তদারক কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ জানান, এ পর্যন্ত মোট আটজনকে তারা এ মামলায় গ্রেপ্তার করেছেন।
হত্যাকাণ্ডের ‘প্রধান সন্দেহভাজন’ মুকুল রানা ওরফে শরিফুল খিলগাঁওয়ে গত বছরের ১৯ জুন পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
খালেদ বলেন, “খুনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত পাঁচজনকে ধরতে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। আশা করছি শিগগিরই তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।”
হত্যাকারী কে- তা শনাক্ত করা হলে অভিযোগপত্র দিতে দেরি করা হচ্ছে কেন জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “অভিযোগপত্র জমা দিলে সেখানে আমাসিদের নামও উল্লেখ করতে হয়। গ্রেপ্তারের আগে অভিযোগপত্র জমা দিলে সেই পাঁচ আসামি জেনে যাবে এবং তাদের গ্রেপ্তার করা কঠিন হবে। তাই একটু সময় নিয়ে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”
তবে সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তার করা না গেলে শিগগিরই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে বলে জানান খালেদ।
অভিজিৎ রায়ের বাবা অজয় রায়ও বলেছেন, পুলিশ শিগগিরই অভিযোগপত্র জমা দেবে বলে তাকে আশ্বাস দিয়েছে।
“তারা বলেছে আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের সামরিক শাখার প্রধান সোনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা জিয়াউল হক এ ঘটনার পরিকল্পনাকারী। তারা জিয়াকে গ্রেপ্তারের চেষ্টায় আছেন। তাকে গ্রেপ্তার করা গেলে অভিজিৎ হত্যা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে তারা আশা করছেন।”
দুই বছরেও ছেলে হত্যার অভিযোগপত্র না মেলায় ‘হতাশ হতে রাজি নন’ জানিয়ে অধ্যাপক অজয় রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশ দুই/চার দিনের মধ্যে জিয়াকে ধরে ফেলতে পারবে বলে মনে করছে। তাকে ধরতে ২০ লাখ টাকা পুরষ্কারের ঘোষণাও আছে। সে যেখানেই পালিয়ে থাকুক, কেউ না কেউ পুলিশকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করবে।”
মুক্তমনা ব্লগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ ছাড়াও আরও অনেককে হত্যা এবং জঙ্গি কার্যক্রমের পেছনে আনসারউল্লাহ ও জিয়ার হাত রয়েছে বলে পুলিশের সন্দেহ।
অজয় রায় বলেন, “পুলিশ এত সময় না নিলেও হত। অবশ্য তারা তো কাছাকাছি এসেছে। আমি আশা করছি, পুলিশ খুব তাড়াতাড়ি প্রকৃত খুনিদের ধরে ফেলতে পারবে।”
তদন্তে কাজে ‘বিদেশি সহায়তা’ নিতে গিয়েও দেরি হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপক।
“আমাদের ফরেনসিক ল্যাবরেটরিটা ভালো করা দরকার। এটা ভালো না হওয়ায় আমাদের প্রায়ই এফবিআই ও স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সহায়তা নিতে হয়। অনেক সময় এ কারণেও মামলা তদন্তে দেরি হয়,” বলেন তিনি।
ফিরে দেখা