গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে করা আসামিদের আপিলের রায় যে কোনো দিন ঘোষণা করা হবে।
Published : 09 Jan 2017, 07:21 PM
এই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের ওপর শুনানি শেষ করে সোমবার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চ রায় অপেক্ষমাণ রেখে দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আতিকুল হক সেলিম ও বিলকিস ফাতেমা। আসামি পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুর রেজাক খান, মোশাররফ হোসেন কাজল ও মো. আহসান উল্লাহ ।
পরে জহিরুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডেথ রেফারেন্স, আপিলের পাশাপাশি ব্লগার রাজিবের বাবা ডা. নাজিম উদ্দিন নিম্ন আদালতের রায়ে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি পাওয়া আসামিদে শাস্তি বৃদ্ধি চেয়ে করা ক্রিমিনাল রিভিশনের (শাস্তি পুনর্বিবেচনা) মামলাটিরও শুনানি একসাথেই হয়েছে। রায়ও একসাথেই হবে।
“ডেথ রেফারেন্সের সঙ্গে অপর সাত আসামির আপিল ও জেল আপিলের শুনানি শেষ হয়েছে। হাই কোর্ট মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছে। এখন যে কোনো দিন রায় ঘোষণা করা হতে পারে।”
রাষ্ট্রপক্ষের এই কৌসুঁলি বলেন, “বাকি ৭ আসামিরই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ছিল। এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং তাদের আনুষাঙ্গিক সাক্ষ্যের ওপর আমরা আর্গুমেন্ট করেছি। আমরা বলেছি, আসামিদের যথাযথ শাস্তি হয়েছে।আর্গুমেন্টে শাস্তি বহাল রাখার দাবি জানিয়েছি।”
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ে দুজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের প্রধান মুফতি জসীমউদ্দীন রাহমানীসহ অন্য ছয় আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর ১০ দিনের মাথায় ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিরপুরের কালশীতে বাড়ির কাছে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রাজীবকে।
রাজীবের বাবা ডা. নাজিম উদ্দিনের করা মামলার তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ২৮ জানুয়ারি মুফতী রাহমানী ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণ। ওই বছরের ১৮ মার্চ তাদের সবার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত।
ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহম্মেদ এই মামলার রায়ে দুজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং অন্যদের কারাদণ্ডাদেশ দেন।
রায়ে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র পলাতক রেদোয়ানুল আজাদ রানা ও ফয়সাল বিন নাঈম দীপের ফাঁসির আদেশ হয়। ওই দুজনকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা জরিমানাও হয়।
অন্যদের মধ্যে মাকসুদুল হাসান অনিককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
সাদমান ইয়াছির মাহমুদকে ৩ বছরের কারাদণ্ডসহ দুই হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত।
মুফতি রাহমানীকে ৫ বছরের কারাদণ্ডসহ দুই হাজার টাকা জরিমানা; অনাদায়ে আরও দুমাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড হয়।
রাজীব হত্যার পর গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী, ব্লগার, লেখক-প্রকাশক মিলে আরও অনেক হত্যাকাণ্ডে আনসারুল্লাহর সম্পৃক্ততা পুলিশের তদন্তে উঠে আসে। এর মধ্যে রাজীব হত্যার রায়ই প্রথম হয়।
হত্যার উসকানিদাতা হিসেবে মুফতি রাহমানীর যে দণ্ড হয়েছিল, তাতে অসন্তোষ জানিয়ে রাজীবের বাবা নাজিম বলেছিলেন, রায়ে তিনি সন্তুষ্ট নন।