সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর পরমত সহিষ্ণু হওয়ার উপর জোর দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
Published : 08 Jan 2017, 09:28 PM
নতুন ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে রোববার গণফোরামের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় এই মত জানান রাষ্ট্রপ্রধান।
এদিন বঙ্গভবনে গণফোরামের পর গণতন্ত্রী পার্টি ও খেলাফত আন্দোলনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গেও বৈঠক করেন আবদুল হামিদ।
দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের পর রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, “রাষ্ট্রপতি বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরমত সহিষ্ণুতার সংস্কৃতি গড়ে তোলার বিকল্প নেই।”
“সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা অপরিহার্য,” বলেন তিনি।
একদিন আগে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সঙ্গে আলোচনায়ও রাষ্ট্রপতি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্যের উপর জোর দিয়েছিলেন।
সব দলের সঙ্গে আলোচনার পর আগামী ফেব্রুয়ারিতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন রাষ্ট্রপ্রধান আবদুল হামিদ। ওই ইসির অধীনেই পরবর্তী সংসদ নির্বাচন হবে।
গণফোরামের ৯ প্রস্তাব
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে যোগ্যতার অগ্রাধিকার যাচাইয়ের জন্য পাঁচ সদস্যের ‘অনুসন্ধান কমিটি’ গঠনসহ নয়টি প্রস্তাব দিয়েছে গণফোরাম।
দলের সভাপতি কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে হলে এই আলোচনায় অংশ নেন।
প্রস্তাবে গণফোরাম ‘অনুসন্ধান কমিটি’র সভাপতি হিসেবে আপিল বিভাগের একজন বিচারপতিকে রাখার প্রস্তাব করেছে। এছাড়া নারী প্রতিনিধি, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধি রাখারও প্রস্তাব করেছে দলটি।
প্রায় এক ঘণ্টার আলোচনা শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব সাংবাদিকদের বলেন, “আলোচনায় গণফোরামের পক্ষ থেকে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির আলোচনার উদ্যোগ গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ, গণতন্ত্রের বিকাশে আলোচনা অপরিহার্য। প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব।”
গণফোরাম আশা প্রকাশ করেছে, রাষ্ট্রপতি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে জাতিকে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন উপহার দিতে সক্ষম হবেন।
স্বাধীন, শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ছাড়া জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয় বলে নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের গুরুত্বেও কথাও তুলে ধরে কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন দলটি।
সাংবিধানিক কাউন্সিল চায় গণতন্ত্রী পার্টি
এটিসহ আটটি প্রস্তাব সংলাপে রেখেছে গণতন্ত্রী পার্টির ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল, যার নেতৃত্বে ছিলেন দলের সভাপতি আরশ আলী।
আলোচনা শেষে প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, “গণতন্ত্রী পার্টি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়েছে। তারা ওই আইনের অধীন সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনেরও প্রস্তাব দেয়।”
প্রস্তাবিত সাংবিধানিক কাউন্সিলের বিকল্প হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিদের নিয়ে সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয় গণতন্ত্রী পার্টি। এছাড়া তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাবও দেয়।
গণতন্ত্রী পার্টি নির্বাচন কমিশনে একজন নারী কমিশনার রাখারও প্রস্তাব দেয়। যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ও দণ্ডিত, যুদ্ধাপরাধীদের পরিবার ও সংগঠনের সদস্যদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবও দিয়েছে গণতন্ত্রী পার্টি।
একাধিক ধাপে কমিশনার নিয়োগ চায় খেলাফত
সংলাপে দলটির ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সংগঠনের আমিরে শরীয়ত শাহ আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী হুজুর।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, “তারা সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি স্থায়ী আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করেন এবং নির্বাচন কমিশননের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর জন্য একাধিক ধাপে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের প্রস্তাব দেন।”
প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে ইসি যাতে স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়।