ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চত্বরে একটি অ্যাম্বুলেন্সের চাপায় গুরুতর আহত হয়ে গর্ভের সন্তান হারানো নারীরও মৃত্যু হয়েছে।
Published : 15 Oct 2016, 11:04 AM
শনিবার সকালের এ ঘটনায় অপর এক মা ও তার ছেলেসহ চারজনের মৃত্যু হলো।
সকাল সোয়া ৯টার দিকে ‘মানব সেবা’ নামে অ্যাম্বুলেন্সটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পথচারীদের উপর উঠে গেলে হতাহতের এই ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ফাঁকা ওই অ্যাম্বুলেন্সটি তখন হাসপাতাল চত্বরে ঢুকছিল। অন্যদিকে দেশের বৃহত্তম হাসপাতালটিতে প্রতিদিনের মতোই ছিল রোগী ও রোগীর স্বজনদের ভিড়।
নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- আমেনা বেগম সূর্যি (৩৫), গোলেনূর বেগম (২৫) ও তার ছেলে সাকিব (৭)।
এই দুর্ঘটনায় সূর্যির পেটের ছয় মাসের সন্তানটি মারা যায় বলে দুপুরে ঢাকা মেডিকেলের ক্যাজুয়াল্টি বিভাগের চিকিৎসক মো. আশরাফ উদ্দিন খান জানান।
এরপর সন্ধ্যা সূর্যির মৃত্যু হয় বলে ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো. বাচ্চু মিয়া জানান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুর্ঘটনার পর সূর্যির অস্ত্রোপচার হয়। এরপর থেকে আইসিইউতে ছিলেন তিনি। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে তার মৃত্যু হয়।”
সূর্যির স্বামী জাকির হোসেন একজন ট্রাকচালক। গত ২৫ অগাস্ট চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার দুদিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছিলেন তিনি।
স্ত্রী ছয় মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা ছিলেন জানিয়ে জাকির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার স্ত্রী ও সজিব নামে একটি ছেলে তার সঙ্গে ছিল। সকালে তার জন্য নাস্তা নিয়ে আসার সময় অ্যাম্বুলেন্সের নিচে পড়েন তারা।
নিহত গোলেনূরের স্বামীর নাম ফেরদৌস, তার বাড়ি পটুয়াখালীর রাঙাবালির বাইজদা এলাকায়। নিহত অন্যজনের পরিচয় জানা যায়নি, তার বয়স আনুমানিক ৪৫ বছর।
ফেরদৌস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পটুয়াখালীতে দুদিন আগে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত পাওয়া ছেলে সাকিবকে চিকিৎসক দেখাতে হাসপাতালে এসেছিলেন তারা।
ফেরদৌসের সঙ্গে তার অন্য ছেলে আকাশও ছিলেন। শুক্রবার সপরিবারে ঢাকায় আসার পর সূত্রাপুরে শ্যালক ফারুকের বাসায় উঠেছিলেন ফেরদৌস। সকালে সবাই আসেন ঢাকা মেডিকেলে।
অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কায় সাকিব সঙ্গে সঙ্গে মারা যান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকাল ৩টায় মৃত্যু ঘটে তার মায়ের। ছয় মাস বয়সী আকাশও মাথায় আঘাত পেয়েছে।
স্ত্রী ও সন্তানকে হারিয়ে হাসপাতালে রোদন করছিলেন ফেরদৌস।
নিহত মধ্যবয়স্ক ব্যক্তিটি হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির সামনের রাস্তার পাশে বসে ভিক্ষা করতেন বলে স্থানীয়রা জানায়।
ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো. বাচ্চু মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খালি অ্যাম্বুলেন্সটি দ্রুতবেগে হাসপাতালে ঢুকে পুলিশ ফাঁড়ির সামনে একটি রিকশাকে ধাক্কা দেয় এবং ও কয়েকজন পথচারীকে চাপা দেয়।
“এতে মধ্যবয়সী ব্যক্তিটি ঘটনাস্থলেই মারা যান। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর মৃত্যু ঘটে শিশুটির।”
ওই গাড়ির ধাক্কায় সজিব (৮) ছাড়াও রিকশাচালক রমজান নামে আরেকজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। সজিবের বাম পা ভেঙে গেছে বলে চিকিৎসকরা জানান।
এসআই বাচ্চু জানান, ওই অ্যাম্বুলেন্সের মালিক নাসির মিস্ত্রী নামে একজন। তবে তিনি গাড়িতে ছিলেন না।
“ওই সময় নাসিরের সহকারী সোহেল গাড়ি চালাচ্ছিল। সোহেলকে আটক করা হয়েছে।”