জেলা পরিষদ সংশোধনী অধ্যাদেশ জারির পরই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করার প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন।
Published : 09 Sep 2016, 10:30 AM
এ লক্ষ্যে নির্বাচনবিধি ও আচরণবিধির খসড়াও গুছিয়ে এনেছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদ উল আযহার পরপরই বিধি চূড়ান্ত করতে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে ভেটিংয়ের জন্য। তফসিল ঘোষণার আগেই ভোটার তালিকা প্রস্তুত হয়ে যাবে।
স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের প্রায় ৬৭ হাজার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এ নির্বাচনে ভোট দেবেন।
ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ জানান, ১৯৮৯ সালে তিন পার্বত্য জেলায় একবারই সরাসরি নির্বাচন হয়েছিল। আর কোনো জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়নি।
সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন হলেও জেলা পরিষদ আইনে প্রত্যক্ষ ভোটের বিধান নেই।
পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন পরোক্ষ ভোটে। জেলায় অন্তর্ভুক্ত সিটি করপোরেশন (যদি থাকে), উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভোটে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন।
১৯৮৮ সালে এইচ এম এরশাদের সরকার প্রণীত স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে সরকার কর্তৃক নিয়োগ দেওয়ার বিধান ছিল; পড়ে আইনটি অকার্যকর হয়ে পড়ে।
২০০০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচিত জেলা পরিষদ গঠনের জন্য নতুন আইন করে।
পাঁচ বছর মেয়াদী জেলা পরিষদগুলোতে বর্তমানে অনির্বাচিত প্রশাসক দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর ৬১ জেলায় আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের নেতাদের প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার।
তাদের মেয়াদ ফুরিয়ে আসায় নির্বাচন করার আগে গত ২৮ অগাস্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ২০১৬’ এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। সংসদ অধিবেশন চলমান না থাকায় ‘জরুরি বিবেচনায়’ ৫ সেপ্টেম্বর ওই সংশোধিত আইন জারি করা হয় অধ্যাদেশ আকারে।
ইসির উপ সচিব ফরহাদ আহম্মদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি চলছে। বিধি সংশোধনের কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। আশা করছি ঈদের পরে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো যাবে।”
বিধির গেজেট, সীমানা নির্ধারণ, ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ এ নির্বাচন করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা। সেক্ষেত্রে নভেম্বরে তফসিল করতে হবে ইসিকে।
ইতোমধ্যে জেলা পরিষদের সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচনের জন্য ওয়ার্ডের সীমানা নির্ধারণে বিধিমালা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী প্রতিটি জেলায় ১৫ জন সাধারণ ও পাঁচজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচিত হবেন।
ভোট বৃত্তান্ত
প্রত্যেক জেলার অন্তর্ভুক্ত সিটি করপোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র ও কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ও ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর এবং ইউপির চেয়ারম্যান ও সদস্য জেলার পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটার হবেন। তাদের ভোটেই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য নির্বাচিত হবেন।
এ হিসেবে স্থানীয় সরকারের চার ধরনের প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬৭ হাজার নির্বাচিত প্রতিনিধি এ নির্বাচনে ভোট দেবেন।
এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি ভোটার ইউনিয়ন পরিষদে। দেশে বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা সাড়ে চার ৪ হাজার। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে গড়ে ১৩ জন করে প্রায় ৬০ হাজারের মত নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন।
৪৮৮টি উপজেলা পরিষদে প্রায় দেড় হাজার; ৩২০টি পৌরসভায় সাড়ে ৫ হাজার এবং ১১টি সিটি করপোরেশনে প্রায় সাড়ে ৫০০ নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ২৫ বছর বয়সী বাংলাদেশের যে কোনো ভোটার জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারলেও ভোট দিতে পারবেন না। আর জনপ্রতিনিধিরা ভোটার হলেও প্রার্থী হতে পারবেন না।
সিটি, পৌর, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদে দলীয়ভাবে ভোট হলেও জেলা পরিষদে তা হচ্ছে না।
গত নভেম্বরে দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকারের সব স্তরে ভোটের জন্য বিল উপস্থাপন করা হলেও পরে জেলা পরিষদের বিলটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।