জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে চার মাস আগে সিঙ্গাপুরে গ্রেপ্তার আরও দুই বাংলাদেশিকে কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির আদালত।
Published : 31 Aug 2016, 09:08 AM
এদের মধ্যে দৌলতুজ্জামানকে (৩৪) দুই বছর এবং লিয়াকত আলী মামুনকে (২৯) আড়াই বছর কাটাতে হবে সিঙ্গাপুরের জেলে।
সিঙ্গাপুরের জেলা জজ আদালত মঙ্গলবার এই দুজনের সাজা ঘোষণা করে বলে স্ট্রেইটস টাইম ও চ্যানেল নিউজ এশিয়ার খবর।
দৌলত ও মামুন এর আগে অভিযোগ অস্বীকার করলেও মঙ্গলবার দোষ স্বীকার করে নেন। এরপর আদালত রায় ঘোষণা করে।
রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে বলেছে, বাংলাদেশে সশস্ত্র জঙ্গিবাদ চালাতে অস্ত্র কেনার টাকা যোগানোর জন্য নির্মাণশ্রমিক দৌলত ২০০ এবং মামুন ৮০০ সিঙ্গাপুরি ডলার দিয়েছিলেন চাঁদা হিসেবে।
তাদের মধ্যে মিজানুর রহমান (৩১), রুবেল মিয়া (২৬), মো. জাবেদ কায়সার হাজি নুরুল ইসলাম সওদাগর (৩০) ও ইসমাইল হাওলাদার সোহেলকে (২৯) গত ১২ জুলাই দুই থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত।
জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সহায়তার জন্য কয়েক হাজার ডলার সংগ্রহ ও তা সরবরাহের কথা তারা আদালতে স্বীকার করার পর ওই রায় আসে।
এই ছয় বাংলাদেশির সবাই কাজ নিয়ে সিঙ্গাপুরে গিয়ে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছেন বলে সে দেশের পুলিশের ভাষ্য। এদের মধ্যে মিজানুর এস-পাসধারী মাঝারি পর্যায়ের দক্ষ কর্মী, বাকিরা সবাই ওয়ার্ক পারমিটধারী আধাদক্ষ শ্রমিক হিসেবে সিঙ্গাপুরে ছিলেন।
প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আদালতে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি দল আইএসের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটার পর গত মার্চে মিজানুর সিঙ্গাপুরে প্রবাসী কয়েকজন বাংলাদেশিকে নিয়ে একটি দল গড়েন, যার নাম দেওয়া হয় ইসলামিক স্টেট ইন বাংলাদেশ।
আইএসএ এর যুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য মিজানুর তিন দফা চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। তুরস্ক ও আলজেরিয়া তার ভিসার আবেদন নাকচ করে দেয়। এরপর তিনি কাজ নিয়ে সিঙ্গাপুরে যান। দোষী সাব্যস্ত অন্যদের তিনিই দলভুক্ত করেন বলে রাষ্ট্রপক্ষের ভাষ্য।
সিঙ্গাপুর পুলিশের বরাত দিয়ে স্থানীয় পত্রিকাগুলো লিখেছে, মিজানুর আইএসে যোগ দিয়ে একজন মুজাহিদ হওয়ার এবং সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ‘অবিশ্বাসীদের’ ধ্বংস করার ‘স্বপ্ন দেখছিলেন। দলের অন্যদের নিয়ে তিনি নিয়মিত বুন লে পার্ক এবং ওয়াটারফ্রন্ট পার্কে জড়ো হয়ে সেই ‘স্বপ্ন বাস্তবায়নের’ জন্য পরিকল্পনা করতেন। দেশে ফিরে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের।
স্ট্রেইটস টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই দলের প্রত্যেকের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব ভাগ করা ছিল। মিজানুর ছিলেন দলনেতা, মামুন তার ডেপুটি। রুবেলের দায়িত্ব ছিল কোষাধ্যক্ষের আর জাবেদের কাজ ছিল জনসংযোগের। এছাড়া দৌলতুজ্জামান ও সোহেলকে দলের নিরাপত্তা ও সামরিক শাখার প্রধান বানিয়েছিলেন মিজানুর।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, জাবেদের কাছে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের জন্য সংগ্রহ করা এক হাজার ৩৬০ মার্কিন ডলার ছিল, যার মধ্যে এক হাজার ৬০ ডলার সংগ্রহ করে দিয়েছিলেন রুবেল। ওই দলের সবাই নিজেরাও ৬০ থেকে ৫০০ ডলার পর্যন্ত চাঁদা দিয়েছেন ‘জিহাদের’ জন্য।
গত এপ্রিলে ওই ছয়জনের সঙ্গে সোহাগ ইব্রাহিম (২৭),শরিফুল ইসলাম (২৭) নামে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করে সিঙ্গাপুরের পুলিশ। তবে সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আট বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তারের খবর প্রকাশ করে মে মাসের শুরুতে।
তাদের গ্রেপ্তারের পর সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, মিজানুরের কাছে বাংলাদেশের সরকার ও সামরিক কর্মকর্তাদের একটি তালিকা পাওয়া গেছে, যাদের উপর হামলার পরিকল্পনা তারা করেছিল। এই গোষ্ঠীর অন্তত আরও দুজন সদস্য বাংলাদেশে রয়েছে।