দুই দফা চেতনা নাশকে দুর্বল হয়ে পড়া ভারতীয় বুনো হাতি ‘বঙ্গবাহাদুর’ খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠেছে বলে চিকিৎসকদের দাবি।
Published : 15 Aug 2016, 08:56 PM
‘বঙ্গবাহাদুর’ নাম পেল সেই হাতি
হুঁশ ফিরেছে হাতিটির, অপেক্ষা বশ মানানোর
এরই মধ্যে তার পদাঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন উদ্ধারকারী দলের সদস্য মাহুত আবু তাহের (৩৫)।
সোমবার উদ্ধার দলের সদস্য শেরপুর অঞ্চলের বন কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভারতীয় হাতিটি দুই দফা পালানোর চেষ্টা করেও সফল হয়নি। সকাল ১১ট থেকে সরিষাবাড়ির কয়ড়া বাইদ্যা বিলে সে শুয়ে আছে।
“হাতির পায়ের নিচে শক্ত মাটি না থাকায় এবং শরীর দুর্বল হয়ে পড়ায় দাঁড়াতে পারছে না; খাবারও আগের চেয়ে কম খাচ্ছে।”
পশু চিকিৎসক সৈয়দ হোসেন হাতিটির বর্তমান অবস্থাকে ‘স্বাভাবিক’ উল্লেখ করে জানান, দিনভর কড়া রোদের কারণে হাতিটি শুয়ে বা বিশ্রামে সময় কাটাচ্ছে। প্রতিকূল পরিবেশ কাটিয়ে অনুকূলে আনতে শ্যালো ইঞ্জিন নিয়ে পানি ছিটানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
“বুনো হাতি বনে একটা তাপমাত্রায় থাকে। অনেকদিন বঙ্গবাহাদুর পানিতেও ছিল। এখন পানি কমেছে, রোদ বেড়েছে; এ অবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সময়ও নিচ্ছে সে।”
দুর্বলতার কাটাতে ওষুধ, খাবার দেওয়ার পাশাপাশি গায়ে পানি ছিটানো হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “হাতিটির জীবন শঙ্কার মুখে পড়েনি।
“আমি নিজে কিছুক্ষণ আগে তার অবস্থা পরীক্ষা করেছি। শরীর ভালো রয়েছে, জীবনশঙ্কায় নেই সে। বন্য হাতির আচরণ এতো দ্রুত প্রেডিক্ট করা যায় না। কিন্তু প্রতিকূল পরিবেশে হাতিটি বিশ্রাম নিচ্ছে বলা যায়।”
কয়রা গ্রামে অবস্থান নেওয়া উদ্ধার দলের সহকারী পশু চিকিৎসক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, দেড়মাসের অধিক সময় ধরে বুনোহাতিটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় এক হাজার আটশ কিলোমিটার অতিক্রম করেছে। পর্যাপ্ত খাবার, ঘুম ও সঙ্গীহীন হয়ে পড়ায় হাতিটির দুর্বল হয়ে পড়া স্বাভাবিক।
উদ্ধারকারী দলের প্রধান তপন কুমার দে জানান, হাতিটিকে স্থানান্তর করতে গাজীপুর বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে একটি ও চট্টগ্রাম থেকে ব্যক্তি মালিকানাধীন তিনটি হাতি আনার চেষ্টা চলছে।
বানের জলে ভেসে গত ২৬ জুন ভারতের আসাম হয়ে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম সীমান্তে আসে বুনো হাতিটি। এরপর দেড় মাসের বেশি সময় ধরে নদী ও স্থলপথ মিলিয়ে চার জেলার কয়েকশ কিলোমিটার পাড়ি দেয় সে।
হাতির লাথিতে মাহুত আহত
ঢাকার বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক অসিম মল্লিক জানান, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে কর্মরত মাহুত আবু তাহের বুনো হাতিটিকে উদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছেন। সোমবার সন্ধ্যায় সেবা করতে গিয়ে হাতিটির পদাঘাতে তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন।
তাকে উদ্ধার করে সরিষাবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে সেখান থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
গত ৩ অগাস্ট ভারতীয় একটি দল জামালপুরে এসে হাতিটি উদ্ধার কাজে হাত লাগায়। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়ে ভারতে ফিরে যায়।
অবশেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে কয়রা গ্রামে ট্রাংকুলাইজার বন্দুক থেকে ডার্ট ছুড়ে হাতিটিকে অচেতন করা হয়। এরপর কয়েকশ মানুষ প্রায় পাঁচ টন ওজনের পুরুষ হাতিটিকে জলাশয় থেকে লোকালয়ে টেনে তোলে।