অবশেষে হাতিটির নাগাল

এক মাস ধরে পিছু পিছু ঘোরার পর ভারতীয় বুনো হাতিটিকে ধরার প্রাথমিক প্রক্রিয়ায় এটিকে অচেতন করার পর ডাঙ্গায় তোলা হয়েছে।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 August 2016, 09:32 AM
Updated : 16 August 2016, 09:55 AM

বৃহস্পতিবার দুপুরে জামালপুরের সরিষাবাড়ীর কামরাবাদ ইউনিয়নের কয়রা গ্রামে ট্রাংকুলাইজার বন্দুক থেকে ডার্ট ছুড়ে হাতিটিকে অচতন করা হয় বলে জানান বন কর্মকর্তারা।

অচেতন হাতিটিকে রশি দিয়ে টেনে ডাঙ্গায় তোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. শাহাবুদ্দিন খান।

বন অধিদপ্তরের সাবেক উপ প্রধান বন সংরক্ষক (অবসর প্রস্তুতির ছুটিতে থাকা) তপন কুমার দে’র নেতৃত্বে বন বিভাগের উদ্ধারকারী দল সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী, প্রশাসন ও পুলিশের সহায়তায় উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন।

উদ্ধার কাজে থাকা ভেটেরিনারি সার্জন সৈয়দ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেলা আড়াইটার দিকে আমরা হাতিটিকে কিছুটা শুকনো জায়গায় পেয়েই চেতনানাশক ডার্ট দিয়ে ট্রাংকুলাইজার বন্দুক থেকে শুট করি। কিছু এলাকা ঘুরে কয়রা গ্রামে এসে হাতিটি এখন অচেতন হয়ে পড়েছে।”

হাতিটির শারীরিক অবস্থা কী রকম, তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক শাহাবুদ্দিন বিকাল ৪টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ট্রাংকুলাইজার বন্দুক দিয়ে ডার্ট ছোড়ার পর শুকনো জায়গা থেকে ঘুরে পানিতে পড়ে যায় হাতিটি। তখন তাকে টেনে তুলতে হয়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জামালপুর প্রতিনিধি জানান, কামরাবাদ ইউনিয়নের একটি নদীর পাড়েই হাতিটিকে ডার্ট ছোড়া হয়। এরপর হাতিটি প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা ঘুরে কয়রা গ্রামের একটি ডোবায় পড়ে। স্থানীয়দের সহায়তায় রশি দিয়ে এটিকে টেনে ডাঙ্গায় তোলা হয়।

“এখন পর্যন্ত এটি নিরাপদ রয়েছে বলে জেনেছি। এর শ্বাস-প্রশ্বাস ভালো রয়েছে,” বলেন জেলা প্রশাসক।

হাতিটিকে এখন ওষুধ ও খাবার দেওয়া হবে। শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হবে এটিকে। এরপর ট্রাকে তোলার প্রক্রিয়া নেওয়া হবে।

জনবসতিতে বুনো হাতিটির বিচরণে মানুষের ঝুঁকি এড়াতে এটিকে উদ্ধারে ভারতীয় প্রতিনিধি দল এসেও বিফল হয়ে ফিরে যায়। তাদের যাওয়ার দুদিন পর বাংলাদেশি উদ্ধারকারীরা সফল হল।

বন কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, হাতিটি উদ্ধারের পর নিয়ে যাওয়া হবে বাংলাদেশের কোনো সাফারি পার্কে। পরে গারো পাহাড়ের বনে ছেড়ে দেওয়া হবে, যাতে ভারত থেকে আসা হাতির পালের সঙ্গে এটি চাইলে যেতে পারে। 

হাতিটি উদ্ধারের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, তবে উৎসুক মানুষের ভিড়ের জন‌্য উদ্ধার কাজে বিঘ্ন ঘটছে।

সরিষাবাড়ীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ এ জেড মোর্শেদ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জনসমাগম ঠেকাতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সবার সহযোগিতা চেয়েছি আমরা।

“কোনো ধরনের ক্যাজুয়ালটি যাতে না ঘটে, সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে। হাতিটিকে নিরাপদে সরাতে প্রয়োজনীয় পরিবহন সুবিধাদিও সরবরাহ করা হচ্ছে।”

বানের জলে ভেসে গত ২৬ জুন আসাম হয়ে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম সীমান্তে আসে ভারতীয় বুনো হাতিটি।

এরপর হাতিটি কুড়িগ্রামের রৌমারীতে ছিল ৯ জুলাই পর্যন্ত। এরপর গাইবান্ধায় ১০ থেকে ১৩ জুলাই, জামালপুরে ১৪-১৬ জুলাই, বগুড়ায় ১৭-১৮ জুলাই, সিরাজগঞ্জে ১৯-৩০ জুলাই এবং তারপর ৩১ জুলাই থেকে জামালপুরে তার অবস্থান।

দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে নদী ও স্থল পথ মিলিয়ে চার জেলায় কয়েকশ’ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে হাতিটি।