প্রায় দেড় মাস দেশের পাঁচ জেলায় ঘুরে বেড়ানো ভারতীয় বুনো হাতিটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘বঙ্গবাহাদুর’।
Published : 12 Aug 2016, 06:19 PM
শুক্রবার বন অধিদপ্তরের উদ্ধার দলের নেতৃত্বে থাকা ড. তপন কুমার দে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বানের জলে ভেসে আসা বুনো হাতিটি দীর্ঘদিন ধরে দেশের কয়েকটি জেলা চষে বেড়িয়েছে। বেশ শক্তি থাকলেও কারো ক্ষতিও করেনি। দেশে এসে এভাবে ঘুরে বেড়ানো অতিথি পুরুষ হাতিটির নাম তাই আমরা রেখেছি বঙ্গবাহাদুর।”
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে এই নাম দেওয়া হয়েছে বলে জানান অবসরোত্তর ছুটিতে থাকা সাবেক উপপ্রধান বন সংরক্ষক এবং প্রকৃতি সংরক্ষণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক।
“হাতিটি পুরুষ হওয়ায় নামের অংশে বাহাদুর রাখা হয়েছে, আর বাংলাদেশে আসায় বঙ্গ নামটি দিয়েছি। এ নামটি দেওয়ার ফলে সহজেই শনাক্ত করা যাবে। হাতির প্রতি আমাদের মমত্ব বোধের পাশাপাশি বন্যপ্রাণীর প্রতি ভালো আচরণের বিষয়টিও উঠে আসছে।”
তপন দে জানান, ইতোমধ্যে হাতিটিকে সফলভাবে টাঙ্কুলাইজ করে উদ্ধারের প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করার বিষয়টি ভারতীয় দলকে জানানো হয়েছে।
প্রায় সাড়ে চার টনের বেশি ওজনের এই হাতিটি বেশ বয়স্ক বলে ধারণা উদ্ধার দলের।
এ বিষয়ে তপন কুমার দে বলেন, তবে দাঁত দেখে পরীক্ষা করেই বুনো হাতিটির বয়স শনাক্তের চেষ্টা করা হবে।
শুক্রবার চার পায়ের শেকলের মধ্যে তিনটি ছিঁড়ে ফেলেছে বঙ্গবাহাদুর। তবে পেছনের এক পায়ে এখনো শেকল লাগানো রয়েছে।
পশু চিকিৎসক সৈয়দ হোসেন শুক্রবার বিকাল ৫টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অপেক্ষাকৃত দুর্বল রশি হওয়ায় তিনটি ছিঁড়ে গেছে। একটি পায়ে বাঁধা রয়েছে। আশা করি, তা ছিঁড়তে পারবে না। তার পায়ে নতুন শেকল পরানোর চেষ্টার পাশাপাশি ঝুঁকি মোকাবেলায় বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।”
প্রশিক্ষিত মাহুত ও চেতনানাশক ওষুক থাকায় যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানোর প্রস্তুতি তাদের রয়েছে বলেও জানান এই বন কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “হাতিটি এখন খাওয়া-দাওয়া করছে; চিকিৎসাও চলছে। আমরা সব সময় পাশে আছি। এলাকাবাসীর সহায়তাও পাচ্ছি।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এখানে সবার আগ্রহের কেন্দ্রে হাতিটি রয়েছে। পরিস্থিতির খোঁজ-খবর রাখছি। আমি সরিষাবাড়ী এসেছি। বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে নিজেও একবার হাতিটির অবস্থা দেখে আসতে পারি।”
বানের জলে ভেসে গত ২৬ জুন ভারতের আসাম হয়ে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম সীমান্তে আসে বুনো হাতিটি।
এরপর কুড়িগ্রামের রৌমারীতে হাতিটি ছিল ৯ জুলাই পর্যন্ত। ১০ থেকে ১৩ জুলাই গাইবান্ধায়, ১৪-১৬ জুলাই জামালপুরে, ১৭-১৮ জুলাই বগুড়ায়, ১৯-৩০ জুলাই সিরাজগঞ্জে এবং তারপর ৩১ জুলাই থেকে আবার জামালপুরে চষে বেড়ায় সে।
দেড় মাসের বেশি সময় ধরে নদী ও স্থলপথ মিলিয়ে চার জেলার কয়েকশ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে হাতিটি।
৩ অগাস্ট ভারতীয় একটি দল এসে উদ্ধার কাজে হাত লাগালেও ব্যর্থ হয়ে ভারতে ফিরে যায় তারা।
খাবারের প্রলোভনে সাড়া না দেওয়ায় বুনো হাতিটিকে বশে আনতে পোষা একটি মাদী হাতিও আনা হয়েছিল। কিন্তু উল্টো পোষা হাতিটিকে তাড়িয়ে দেয় বঙ্গবাহাদুর।
বুধবার প্রথমে ‘প্লাস্টিক ডার্ট’ ছুড়লে তা হাতির গায়ে লেগে বেঁকে যায়। এরপর সরিষাবাড়ীর কয়রা গ্রামে বৃহস্পতিবার ‘মেটাল ডার্ট’ ছুড়ে হাতিটি অচেতন করা হয়।
তপন কুমার দে জানান, প্রশিক্ষণ পেয়ে হাতিটি স্বাভাবিক আচরণ করলেই তাকে সরানোর ব্যবস্থা করা হবে।