জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের কয়রা গ্রামে আছে হাতিটি।
ডাঙ্গায় তোলা হাতিটিকে আরও ৫-৭ দিন সেখানে রাখতে হতে পারে বলে জানিয়েছেন উদ্ধার অভিযানে থাকা বন অধিদপ্তরের সাবেক উপপ্রধান বন সংরক্ষক তপন কুমার দে।
“আরও সুস্থ হলে হাতিটিকে সরাতে হবে,” বুধবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন তিনি।
এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে টাংকুলাইজার বন্দুক থেকে ডার্ট ছুড়ে অচেতন করা হয় দেড় মাস ধরে লোকালয়ে বিচরণ করা ভারতীয় বুনো হাতিটিকে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জামালপুর প্রতিনিধি জানান, কামরাবাদ ইউনিয়নের একটি নদীর পাড়ে হাতিটিকে ডার্ট ছোড়া হয়। এরপর এটি প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা ঘুরে কয়রা গ্রামের একটি ডোবায় পড়ে। স্থানীয়দের সহায়তায় রশি দিয়ে এটিকে টেনে ডাঙ্গায় তোলা হয়।
“এখন অচেতন হাতিটির জ্ঞান ফেরাতে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে তাকে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে, যাতে চেতনা ফিরে পেয়ে কোনো ক্ষতি করতে না পারে।”
হাতির শারীরিক অবস্থাও ভালো রয়েছে বলে জানান বন কর্মকর্তা তপন, যিনি যিনি ১৭ সদস্যের উদ্ধারকারী দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
বন কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, হাতিটি উদ্ধারের পর নিয়ে যাওয়া হবে বাংলাদেশের কোনো সাফারি পার্কে। পরে গারো পাহাড়ের বনে ছেড়ে দেওয়া হবে, যাতে ভারত থেকে আসা হাতির পালের সঙ্গে এটি চাইলে যেতে পারে।
হাতিটি উদ্ধারের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে জানিয়ে জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. শাহাবুদ্দিন খান দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তবে উৎসুক মানুষের ভিড়ের জন্য উদ্ধার কাজে বিঘ্ন ঘটছে।
জনসমাগমে বিঘ্ন ঘটার কথা বলা হলেও হাতিটি অচেতন হওয়ার পর এটিকে ডোবা থেকে টেনে তুলতে স্থানীয়রাই মূল ভূমিকা রাখে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জামালপুর প্রতিনিধি জানান।
লোকালয়ে বুনো হাতিটির বিচরণে ওই এলাকার মানুষের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়েছিল, এখন তারা স্বস্তি বোধ করছেন।
হাতিটির বর্তমান অবস্থান প্রত্যন্ত এলাকায় হওয়ায় এ মুহূর্তে তাকে সরানো যাচ্ছে না বলে জানান বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ তপন দে।
“এটা এমন প্রত্যন্ত এলাকা যে এখান থেকে হাতিটিকে এ মুহূর্তে কোথাও সরানোর ব্যবস্থা নেই। ট্রাক, ক্রেইন আনার সুযোগও নেই। এখানে আরও ৫-৭ দিন রাখতে হতে পারে। আরও সুস্থ হলে হাতিটিকে সরাতে হবে।”
বানের জলে ভেসে গত ২৬ জুন আসাম হয়ে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম সীমান্তে আসে ভারতীয় বুনো হাতিটি।
দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে নদী ও স্থল পথ মিলিয়ে চার জেলায় কয়েকশ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে হাতিটি।
এরপর গত ৩ অগাস্ট ভারতীয় একটি দল আসার পর উদ্ধার কাজে হাত লাগানো হয়। কিন্তু তিন কৌশল ব্যর্থ হওয়ার পর ভারতের দলটি আসামে ফেরত যায়।
খাবারের প্রলোভনে সাড়া না দেওয়ায় বুনো হাতিটিকে বশে আনতে পোষা একটি মাদী হাতিও আনা হয়েছিল। পোষা হাতিটিকে উল্টো তাড়া দেয় বুনো হাতিটি।
বুধবার ‘প্লাস্টিক ডার্ট’ ছুড়লে তা হাতির গায়ে লেগে বেঁকে যায়। এরপর বৃহস্পতিবার ‘মেটাল ডার্ট’ ছুড়ে এটিকে অচেতন করা হয় বলে উদ্ধারকারী দলে থাকা পশু চিকিৎসক সৈয়দ হোসেন জানান।