জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জড়িত থাকার নতুন নতুন তথ্য আসার প্রেক্ষাপটে দেশের সবগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠকে ডেকেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
Published : 11 Jul 2016, 07:53 PM
আগামী ১৭ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এই বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সভাপতিত্ব করবেন।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারাও ওই সভায় উপস্থিত থাকবেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোমবার বিকালে সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরে এসে তাকে সভার বিষয়ে অবহিত করেন। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ছাড়াও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।
সভার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না জানালেও শিক্ষামন্ত্রী সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় মিলেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা সফল করব।”
বর্তমানে দেশে ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি অনুমোদন রয়েছে। এরমধ্যে ৮০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেরাও সাম্প্রতিক সময়ে বাড়ি পালিয়ে জঙ্গিবাদে ঝুঁকছে বলে তথ্য আসায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে সরকার ও অভিভাবক মহলে।
গত ১ জুলাই গুলশানের জঙ্গি হামলার পর সশস্ত্র বাহিনীর অভিযানে নিহত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনের ছবি প্রকাশ করে আইএস। ঈদের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় পুলিশের গুলিতে এক যুবক নিহত হন।
এই ছয়জনের মধ্যে চারজনই বিভিন্ন ব্যয়বহুল ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে লেখাপড়া করেছেন। তাদের দুইজন ঢাকার নামি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন, একজন ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের।
এর আগে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যা মামলায় যে আটজনের সাজার আদেশ হয়েছে, তাদের মধ্যে সাতজনই নর্থ সাউথের শিক্ষার্থী ছিলেন।
গত বছর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত দল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে নিষিদ্ধ সংগঠনর হিজবুত তাহরীরের বইপত্র পায়। জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারও করা হয় বলে গণমাধ্যমের খবর।
কোনো তরুণ বাড়ি পালিয়ে জঙ্গি দলে ভিড়েছে কি না- তা জানতে পরিবারের কাছে তথ্য চেয়েছে সরকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষার্থী টানা দশ দিন অনুপস্থিত থাকলেই সে তথ্য সরকারকে জানাতে হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সভায় সবগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, উপাচার্য ছাড়াও ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবক প্রতিনিধিদের রাখা হবে।
এছাড়া স্কলাসটিকাসহ কয়েকটি ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদেরও সভায় ডাকা হবে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
তিনি বলেন, “সব মিলিয়ে ৯০০ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। সরকার তাদের কিছু নির্দেশনা দেবে। তাদের মতামত ও বক্তব্য শোনা হবে। গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও ওই সভায় উপস্থিত থাকবেন।”
শিক্ষার্থীদের জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রী মঙ্গলবার সচিবালয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা করবেন বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান।
তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভায় পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশের সবগুলো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে আবারও সভা করবে।
“পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নিয়ে বসবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কারণ জঙ্গিবাদে শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ুক তা কেউই চায় না, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ও তৎপর আছে।”