নর্থ সাউথের সিদ্ধান্ত লোক দেখানো: শিক্ষামন্ত্রী

পর পর কয়েকটি জঙ্গি হামলায় নিজেদের শিক্ষার্থীদের নাম উঠে আসার প্রেক্ষাপটে ছাত্রত্ব রাখতে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি যে বিধি-নিষেধ বেঁধে দিয়েছে তাকে ‘লোক দেখানো’ বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 July 2016, 03:17 PM
Updated : 11 July 2016, 03:17 PM

বিষয়টির (জঙ্গিবাদ) গুরুত্ব উপলব্ধি করে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, নইলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ মঙ্গলজনক হবে না।

সচিবালয়ে সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে নাহিদ বলেন, “তাদের সিদ্ধান্ত লোক দেখানো। সব চেয়ে কম সময়েও শেষ করলে একটি সেমিস্টার শেষ হতে চার মাস সময় লাগবে। আসলে ছয় মাসের কমে সেমিস্টার শেষ হয় না।

“একজন ছাত্র ভর্তি হওয়ার পরে তাকে (জঙ্গিরা) রিক্রুট করে যদি ওই পথে নিয়ে যায়, যদি বিদেশে গিয়ে ট্রেনিং দিয়ে এসেও এরকম অ্যাকশন করার পরেও পরীক্ষা দিতে পারবে।”

কোনো শিক্ষার্থী টানা এক সেমিস্টার অনুপস্থিত থাকলে ছাত্রত্ব হারাবেন বলে রোববার এক জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত দেয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ।

নর্থ সাউথের এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টানা ১০ দিনের বেশি অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের তালিকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানানোর নির্দেশ দেয়।

এক সেমিস্টার পরীক্ষা না দিলে ছাত্রত্ব বাতিলের যে সিদ্ধান্ত নর্থ সাউথ নিয়েছে তা ‘অ্যাকাডেমিক সিদ্ধান্ত’ হতে পারে বলে মত দেন শিক্ষামন্ত্রী।

তিনি বলেন, “তারাও স্বীকার করেছে তাদের ছাত্রও আছে (জঙ্গি কর্মকাণ্ডে), সেখানে এই অ্যাকশন মোটেই কোনো সামঞ্জস্যপূর্ণ না। তাদের সিরিয়াসনেস ও দায়-দায়িত্বটা এই সিদ্ধান্তের মধ্যে প্রতিফলিত হয়নি। তাদের উচিৎ সবার জন্য যে নিয়ম তা মেনে চলা এবং বাড়তি তদারকি করা।”

গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর কমান্ডো অভিযানে নিহত ছয় জনের মধ্যে পাঁচ জনের ছবি প্রকাশ করে আইএস। ঈদের দিন শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় পুলিশের গুলিতে এক যুবক নিহত হয়।

এই ছয় জনের মধ্যে দুই জন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন, একজন ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের।

ঘটনা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, জড়িত শিক্ষার্থী দীর্ঘ সময় ধরে নিখোঁজ ছিলেন; পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ ছিল না।

নাহিদ বলেন, “নিজেরা অভিযোগ স্বীকার করে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে পাস কাটিয়ে যাওয়া হচ্ছে, বিষয়টি (জঙ্গি কর্মকাণ্ড) অ্যাড্রেসই হচ্ছে না। জঙ্গিবাদের বিষয়ে তারা যে অভিযুক্ত হল এটা তার কোনো পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয় না।”

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “তাদের আমি বলতে চাই অবশ্যই তারা আমাদের দেওয়া সাধারণ নিয়ম ১০ দিন টানা অনুপস্থিত থাকলে অভিভাবককে জানানো; পুলিশকে জানানোর ব্যবস্থা নেওয়া; ওই শিক্ষার্থীকে লক্ষ্য রাখা; কোন কোন ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে অস্বাভাবিকতা আছে তাদের মনিটরিং করা; অতীত থেকে বিশ্লেষণ করা কেন এই অবস্থার সৃষ্টি হল; কারা এর পেছনে ছিল; কারা কারা জড়িত হতে পারে- এগুলো বের করা উচিত এবং এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।”

তবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত না নেওয়ার সমালোচনা করে নাহিদ বলেন, “এতে বোঝা যাচ্ছে হয় তারা বিষয়টি সিরিয়াসলি বুঝেনি, নয়তো সিদ্ধান্ত নেয়নি বা সিদ্ধান্ত নেবে। আমি অনুরোধ করব নর্থ সাউথ কর্তৃপক্ষ যেন বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করেন। তারা যে দেশবাসীর কাছে অভিযুক্ত হচ্ছেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট হচ্ছে, লেখাপড়ার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, ছেলেমেয়েদের জীবন নষ্ট হচ্ছে এবং এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ মঙ্গলজনক হবে না।”

টানা ১০ দিন অনুপস্থিত থাকলে তার তথ্য জানাতে মন্ত্রণালয়েরে নির্দেশের ব্যাখ্যায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “যদি একটানা কোনো ছাত্র অনুপস্থিত থাকে তবে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রথমে ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। যোগাযোগ করে অনুপস্থিতির যৌক্তিক কারণ পেলে কোনো সমস্যা নেই।

“কিন্তু অভিভাবকও যদি বলেন তিনিও কিছু জানেন না আর সন্দেহ সৃষ্টি হয় তবে বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানাতে হবে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইউএনওকে জানাবেন। ইউএনও বিষয়টি জেলা প্রশাসককে (ডিসি) জানালে তিনি পুলিশের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেবেন, যা এক দিনেই সম্ভব।”

নাহিদ বলেন, “শিক্ষকদের অনুরোধ জানাচ্ছি, কোনো শিক্ষার্থীর মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করলে তাকে সতর্কতার সাথে দেখবেন, কোনো সন্দেহজনক আচরণ করলে রিপোর্ট করবেন।”

“অভিভাবকদের কাছে আমার বিশেষ অনুরোধ, পারিবারিক বন্ধন জোরদার করতে হবে। প্রত্যেককে তার সন্তানের প্রতি তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে। কোনো অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করলে তারা যেন তা আমাদের নজরে আনেন, সিরিয়াস হলে পুলিশেও খবর দিতে পারেন।

“নইলে সঠিক সময়ে আমরা বিষয়টি সনাক্ত করতে পারব না। যখন হাতছাড়া হয়ে যাবে তখন তিনি কাঁদবেন আমাদেরও বিপদে ফেলে দেবেন।”