টানা অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর তালিকা চেয়েছে সরকার

বাড়ি পালিয়ে জঙ্গিবাদে জড়ানোর বেশ কয়েকটি ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টানা ১০ দিনের বেশি অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের তালিকা চেয়েছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 July 2016, 04:55 AM
Updated : 31 July 2016, 07:29 PM

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে রোববার সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।

পরে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “কোনো ছাত্র ১০ দিন বা তার বেশি অনুপস্থিত আছে কি না- তার তালিকা পাঠাতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কি না।”

গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর সশস্ত্র বাহিনীর অভিযানে নিহত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনের ছবি প্রকাশ করেছিল আইএস, যারা গত কয়েক মাস নিখোঁজ ছিলেন বা পরিবারের যোগাযোগের বাইরে ছিলেন বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।

এরপর ঈদের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় পুলিশের গুলিতে নিহত যুবকও গত মার্চ থেকে নিখোঁজ ছিলেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়।

এই ছয়জনের মধ্যে চারজনই বিভিন্ন ব্যয়বহুল ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে লেখাপড়া করেছেন। তাদের দুইজন ঢাকার নামি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন, একজন ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের। 

গুলশান ও শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার প্রসঙ্গ তুলে শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ বলেন, যে ঘটনা ঘটে গেল সবাইকে বিস্মিত করেছে। এটা মর্মান্তিক ও দুঃখজনক, যা কখনও কাম্য ছিল না।

এসব ঘটনা নিয়ে ‘খুবই উদ্বিগ্ন’ জানিয়ে তিনি বলেন, “বিষয়গুলোতে তুলনামূলক স্বচ্ছল পরিবারের ছেলে-মেয়েরা যেগুলোতে লেখাপড়া করে বা ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেশি যুক্ত হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন, খুবই চিন্তিত।

“যেহেতু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছেলে-মেয়েরা যুক্ত হয়েছে তাই আমাদের বাড়তি দায়িত্ব অবশ্যই আছে। সেজন্য আজকে আমরা সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কতগুলো নির্দেশনা পাঠাব, পরে আরও নির্দেশনা দেব।”

একজন কর্মকর্তা বলেন, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টানা ১০ দিনের বেশি শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলে তার তালিকা করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে একটি অফিস আদেশও জারি হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমরা চাই ছেলেমেয়েরা যেন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠুক। সেজন্য তাদের প্রতি অনেক বেশি যত্ন নেওয়ার দায়িত্বও আমাদের আছে বলেই মনে করি।

“বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় যোগাযোগ করেছে, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ করেছে, আমরাও যোগাযোগ করছি কী করা যায়, কীভাবে পদক্ষেপ নেওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন সেভাবেই আমরা চলব।”

জঙ্গিবাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের জড়ানো ঠেকাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি, জনপ্রতিনিধি, বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকেই ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “অভিভাবকই লক্ষ্য রাখতে পারেন সন্তানের মধ্যে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কি না, পালিয়ে গিয়ে অন্য কোথাও থাকছে কি না? এ ধরনের পরিবর্তন যেখন দেখবেন তখনই যেন জানান, আমরা স্কুলে কমিটি করে দেব।”

নাহিদ বলেন, সন্তানদের শুধু টাকা-পয়সা, ভালো গাড়ি দিলে হবে না। স্নেহ, মমতা, ভালোবাসা দিয়ে পারিবারিক সুষ্ঠু বন্ধনে আবদ্ধ করে তাদের মন জয় করে সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সব চাহিদা পূরণ করে দিয়ে সবকিছু হবে না- এটাই প্রমাণ হচ্ছে।

সন্ত্রাসী হামলায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জড়িত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমরা সব বিষয়েই খোঁজ-খবর নেব। সরকারের নীতি আছে, সব বিষয়ে ঘোষণা দিয়ে আগাতে পারব না।”

সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চবিত্ত পরিবারের বহু ছেলে এভাবে বাড়ি ছেড়ে জঙ্গিবাদে ঝুঁকছে বলে ইতোমধ্যে অভিভাবকদের সতর্ক করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে অভিভাবকদের তথ্য দিতে অনুরোধ করেছেন।

সম্প্রতি আরও ১০ যুবকের সন্ধান চেয়ে তাদের প্রতি ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছে তাদের অভিভাবকরা।

এরা হলেন- ঢাকার তেজগাঁওয়ের মোহাম্মদ বাসারুজ্জামান, বাড্ডার জুনায়েদ খান (পাসপোর্ট নম্বর- এ এফ ৭৪৯৩৩৭৮), চাপাইনবাবগঞ্জের নজিবুল্লাহ আনসারী, ঢাকার আশরাফ মোহাম্মদ ইসলাম (পাসপোর্ট নম্বর-৫২৫৮৪১৬২৫), সিলেটের তামিম আহমেদ চৌধুরী (পাসপোর্ট নম্বর-এল ০৬৩৩৪৭৮), ঢাকার ইব্রাহীম হাসান খান (পাসপোর্ট নম্বর-এ এফ ৭৪৯৩৩৭৮), লক্ষ্মীপুরের এ টিএম তাজউদ্দিন (পাসপোর্ট নম্বর- এফ ০৫৮৫৫৬৮), ঢাকার ধানমণ্ডির জুবায়েদুর রহিম (পাসপোর্ট নম্বর-ই ১০৪৭৭১৯), সিলেটের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকি (পাসপোর্ট নম্বর-টি কে ৮০৯৯৮৬০) ও জুন্নুন শিকদার (পাসপোর্ট নম্বর-বি ই ০৯৪৯১৭২)।