ঢাকার খিলগাঁওয়ে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত যে যুবককে পুলিশ অভিজিৎ রায় হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন শরীফুল হিসেবে সনাক্ত করেছে, তার লাশ নিতে ঢাকায় এসে ‘স্বজনরা’ বলছেন- তার নাম মুকুল রানা।
Published : 20 Jun 2016, 06:07 PM
হেদায়তুল ইসলাম ও রহমত আলী নামের দুই ব্যক্তি সোমবার লাশ নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আসেন।
হেদায়েত বলেন, তিনি নিহত ওই যুবকের ভগ্নিপতি এবং রহমত তার চাচাতো ভাই।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে রহমত বলেন, “সে আমাদের মুকুল। তাকে সবাই রানা নামে ডাকে। শরীফুল, সাকিব……. এসব নামে আমরা তাকে চিনি না।”
এ সময় তারা একটি জতীয় পরিচয়পত্রও দেখান, যেখানে পুলিশের দেওয়া শরীফুলের ছবির সঙ্গে পরিচয়পত্রের মালিক মুকুলের চেহারা মিলে যায়।
রোববার সকালে পুলিশের পক্ষ থেকে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ওই যুবকের মৃত্যুর খবর জানানো হয় সাংবাদিকদের। বলা হয়, শনিবার গভীর রাতে খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়ায় বাঁশপট্টি এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে ‘সন্ত্রাসীদের’ গোলাগুলিতে নিহত হন ওই যুবক।
এরপর রোববার বেলা ১১টার দিকে পুলিশ ওই যুবকের পরিচয় জানায়। বলা হয়, সে ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য’ শরীফুল ওরফে সাকিব ওরফে সালেহ ওরফে আরিফ ওরফে হাদী।
গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, “সে অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়। তাকে ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল।”
গত বছর একুশে বইমেলা থেকে অভিজিৎ রায় ও বন্যা আহমেদের বের হওয়ার সময়ে ধারণ করা সিসি ক্যামেরার একটি ভিডিওচিত্রও পুলিশ প্রকাশ করেছে। পুলিশ বলছে, ভিডিওতে ওই দম্পতিকে ‘অনুসরণ’ করতে যে তরুণকে দেখা গেছে, তিনিই শরীফুল; তিনিই ঢাকার মেরাদিয়ায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন।
তবে লাশ নিতে আসা হেদায়েত ও রহমত বলেছেন, তাদের মুকুল সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় এসে কী করতেন, কোনো জঙ্গি দলের সঙ্গে তিনি জড়িয়েছিলেন কি না, সে তথ্য পরিবারের জানা নেই।
তারা যে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়েছেন, তাতে ওই যুবকের নাম মুকুল রানা; বাবা আবুল কালাম আজাদ। বাসা বিশ্বাসপাড়া, রাস্তা বালুইগাছা, ডাকঘর ধুলিহর সাতক্ষীরা সদর, সাতক্ষীরা।
২০১৩ সালে ২৩ অক্টোবর ইস্যু করা ওই পরিচয়পত্র অনুযায়ী মুকুলের জন্ম ১৯৯৩ সালের ২৫ নভেম্বর।
হেদায়েত ঢাকা মেডিকেলে সাংবাদিকদের সামনে খোলামেলা কথা বলতে চাননি। অনেক প্রশ্নেরই সরাসরি কোনো জবাব তিনি দেননি।
শুরুতেই তিনি বলেন, “ভাই লাশটা গ্রামের বাড়িতে নেওয়ার ব্যাবস্থা করে দেন।”
এরপরও কথার ফাঁকে ফাঁকে তারা জানান, মুকুল সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে ইংরেজিতে পড়তেন। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।
হেদায়েতের বক্তব্য অনুযায়ী, মুকুল বছরখানেক আগে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় চলে আসেন, থাকতেন উত্তরায়। গত ফেব্রুয়ারিতে গ্রামে গিয়ে মহুয়া সুলতানা নামে নারীকে বিয়ে করেন। এরপর আর যাননি, এর বেশি কিছু তাদের জানাও নেই।
সাতক্ষীরায় মুকুলের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানতে চাইলে হেদায়েত বলেন, “দেখেন ভাই, সব বাবা-মা চায় তার সন্তান ভালোভাবে চলুক, আদব-কায়দা শিখুক। আপনারা যেটা (জঙ্গি) বলতে চান, সেটা কোনো বাবা মা চায় না।”
রহমত জানান, মুকুলদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ‘তেমন ভালো না’। তবে তার ছোট ভাইয়ের চিংড়ির ঘের আছে।
গত বছর ফেব্রুয়ারিতে মুকুল ঢাকায় ছিলেন কি না জানতে চাইলে হেদায়েত বলেন,“দেখেন ভাই, আমাদের মানসিক অবস্থা একটু বোঝার চেষ্টা করুন। ওই সময় সে কোথায় ছিল তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।”
রোববার বন্দুকযুদ্ধে নিহত যুবকের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন খিলগাঁও থানার এস আই আল মামুন।
প্রতিবেদনে তিনি নিহতের বাঁ কানের নিচে একটি, বাঁ হাতের কনুইয়ের উপরে দুটি, পিঠের মাঝে একটি, পিঠের বাঁ পাশে দুটি, বুকের মাঝে একটি, বুকের ডান পাশে দুটি এবং থুতনির নিচে একটি ‘ছিদ্র’ পাওয়ার কথা লিখেছেন।
নাম নিয়ে স্বজনদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এরা তো একেক সময় একেক নাম ব্যবহার করে। হয়তো ভোটার আইডি করেছে মুকুল নামে। আমরা সব বিষয়ই খতিয়ে দেখব।”