রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত ও এই প্রকল্পের কাজে সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয় তদারকিতে একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার।
Published : 17 Apr 2016, 11:31 PM
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারকে আহ্বায়ক করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রোববার ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের আদেশ প্রকাশ করেছে।
কমিটিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সন্নিহিত এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে বলা হয়েছে।
পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার সম্পর্কিত বিষয়ে জনগণের সচেতনতা সৃষ্টি এবং এ বিষয়ে ‘অনুকূল’ জনমত গঠনেও কাজ করবে এই কমিটি।
এছাড়া এই প্রকল্পের জন্য দেশজ নির্মাণ সামগ্রী/দ্রব্যাদি ও সেবা দিতে স্থানীয় যোগ্যতা নিরূপন এবং স্থাপনা নির্মাণ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম তদারকিতে কমিটিকে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে।
আদেশে বলা হয়েছে, প্রকল্পের পার্শ্ববর্তী এলাকায় অব্যবহৃত ভূমি ও খাসজমি প্রকল্পের কাজে ব্যবহার ও প্রকল্পের আওতাধীন ভূমি ব্যবস্থাপনায় সার্বিক সাহয়তা দেবে এই কমিটি।
এই কমিটিকে রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা ও উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বিষয় জেলা ও বিভাগীয় আইনশৃঙ্খলা কমিটি এবং জেলা ও বিভাগীয় উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় নিয়মিত আলোচনা করতে হবে।
আদেশ অনুযায়ী কমিটিকে প্রকল্পটির নির্মাণ ও বাস্তবায়নের কার্যক্রম তদারকিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনকে সহায়তা করবে হবে।
স্থানীয়ভাবে ‘নিউক্লিয়ার সেফটি ও সিকিউরিটি কালচার’ গড়ে তুলতে জনসম্পৃক্ততা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিরও উদ্যোগ নেবে এই কমিটি।
কমিটিকে প্রতি তিন মাসে বাধ্যতামূলকভাবে একবার সভা করার নির্দেশনা দেওয়া হলেও জরুরি প্রয়োজনে যে কোনো সময় কমিটি সভা করতে পারবে।
সভার কার্যবিবরণী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে বলেও আদেশ উল্লেখ রয়েছে।
রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ছাড়াও পাবনা, কুষ্টিয়া ও নাটোরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
এছাড়া এই কমিটির সদস্য হিসেব আছে রূপপুর প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, পাবনার ঈশ্বরদী থানার ওসি।
ঈশ্বরদী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর চুক্তি হয় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের।
সে অনুযায়ী, ২৪০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিটে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করা হবে; যাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা)।
৫০ বছর আয়ুর এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০২১ সালের মধ্যে চালু করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২০১৩ সালের অক্টোবরে রূপপুরে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তি স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৪ সালের অগাস্টে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনায় কোম্পানি গঠন করতে সংসদে বিল পাস হয়।
আইন অনুযায়ী, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিকানা থাকবে বাংলাদেশ আনবিক শক্তি কমিশনের হাতে। আর কেন্দ্রটি পরিচালনার দায়িত্ব পাবে ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ’।
১৯৬১ সালে পরমাণু কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ার পর ১৯৬৩ সালে প্রস্তাবিত ১২টি এলাকার মধ্য থেকে বেছে নেওয়া হয় রূপপুরকে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রায় ৫০ বছর আগের নেয়া সেই উদ্যোগ সক্রিয় করে তোলা হয়। দ্রুত পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ২০১০ সালে সংসদে প্রস্তাব পাস করে গঠন করা হয় একটি জাতীয় কমিটি।
ওই বছরই রাশিয়ার সঙ্গে একটি কাঠামো চুক্তি করে সরকার এবং ২০১১ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ দুই দেশ চুক্তি করে। প্রস্তাবিত এ কেন্দ্রের জন্য আগেই অধিগ্রহণ করা হয় ২৬২ একর জমি।
অ্যাটমস্ট্রয়ের নকশায় পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বলিত ‘সর্বাধুনিক তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তি’ দিয়ে রূপপুরে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে জানিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এর নিরাপত্তা নিয়ে ‘দুশ্চিন্তার কিছু’ থাকবে না। চুক্তি অনুযায়ী, এই কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় বর্জ্য রাশিয়াই ফেরত নিয়ে যাবে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের জাতীয় কমিটির তৃতীয় বৈঠক হয়েছিল ২০১৩ সালের ৭ অগাস্ট।