অষ্টম শ্রেণি শেষে একটি পাবলিক পরীক্ষার বিধান রেখে রোববার শিক্ষা আইনের নতুন খসড়া প্রকাশ করেছে সরকার।
Published : 03 Apr 2016, 10:31 PM
তবে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা থাকবে কি না- নির্বাহী আদেশ দিয়ে সরকার তা নির্ধারণ করবে।
জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী, ২০১৮ সালের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীতকরণে কাজ করছে সরকার।
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা উন্নীতের পর প্রাথমিক সমাপনী এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা থাকবে কি না- তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
শিক্ষা আইনের খসড়ায় কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনি বন্ধে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তি, নোট ও গাইডবই প্রকাশে জেল-জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
তবে প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে শিক্ষা আইনের নতুন খসড়ায় কোনো কিছু বলা হয়নি।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ রোববার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে যার আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। এ কারণে কেউ কোর্টে মামলা করলে আমরা হারি।
“এজন্য আমরা আইনটি করতে যাচ্ছি যেখানে সমন্বিতভাবে শিক্ষার বিভিন্ন খাতগুলোকে আইনের আওতায় নিয়ে আসব। যাতে সরকার, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, প্রতিষ্ঠান সবাই এটা মেনে চলতে বাধ্য হবে।”
শিক্ষা আইনের নতুন খসড়ার উপর আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত [email protected] এবং [email protected] ই-মেইলে মতামত দেওয়া যাবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
এর আগে গত বছরের ১৯ অক্টোবর শিক্ষা আইনের একটি খসড়া প্রকাশ করেছিল সরকার। ওই খসড়ার উপর মতামত নিয়ে আবার খসড়া করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
নতুন খসড়ার পরীক্ষা পদ্ধতি ও মূল্যায়ন অংশে বলা হয়েছে, “প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাবলিক পরীক্ষার পদ্ধতি, সংখ্যা ও স্তর সরকার কর্তৃক প্রণীত বিধিমালা বা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। তবে অষ্টম শ্রেণি শেষে একটি পাবলিক পরীক্ষা হবে।”
বর্তমানে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য জেএসসি-জেডিসি এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা হচ্ছে।
খসড়া অনুযায়ী, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ হবে দুই বছর। প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় বছর।
“তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অর্ধ-বার্ষিক ও বার্ষিক বা সমাপনী পরীক্ষার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হবে। প্রাথমিক শিক্ষার জন্য একটি স্বতন্ত্র প্রাথমিক শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড গঠন করবে সরকার।”
পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “পরীক্ষা পদ্ধতি এখনও চূড়ান্ত করি নাই। নানাজনের মতামত নিয়ে এটা চূড়ান্ত করব। এরপর আইনটি মন্ত্রিসভায় যাবে।”
খসড়া আইন অনুযায়ী, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড থেকে অনুমোদন নিয়ে সহায়ক শিক্ষা উপকরণ, সহায়ক পুস্তক বা ডিজিটাল শিখন-শেখানো সামগ্রী প্রকাশ করা গেলেও নোট বা গাইড বই প্রকাশ করা যাবে না।
নোট বা গাইড বই প্রকাশ করলে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড, ছয় মাস কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকার প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
“প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং বন্ধের পর কেউ এসব কাজের সঙ্গে জড়িত থাকলে দুই লাখ টাকা বা ছয় মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।”
শিক্ষার্থীদের মানসিক বা শারীরিক শাস্তি দেওয়া যাবে না উল্লেখ করে খসড়ায় বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের শাস্তি দিলে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হবে।
আগের প্রস্তাবিত খসড়া শিক্ষা আইনে প্রশ্ন ফাঁসের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হলেও নতুন খসড়ায় এই অপরাধের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষায় নকলের বিষয়ে আলাদা একটি আইন আছে। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি আইন অনুযায়ী তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রশ্ন ফাঁস বা বিভ্রান্তি ছড়ালে ১৪ বছরের জেল বা এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে।
“যেহেতু নকলের জন্য আলাদা আইন আছে তাই শিক্ষা আইনের খসড়ায় বিষয়টি রাখা হয়নি।”
নতুন আইন পাস হলে ‘বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশন’ গঠন করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।
শিক্ষা আইন অনুযায়ী বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক এবং মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকারকে একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন করতে হবে।
এই কমিশনের গঠন, দায়িত্ব ও কর্তব্য ‘শিক্ষা কমিশন আইন’ দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হবে বলেও শিক্ষা আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে।