প্রথমবারের মতো দলভিত্তিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তৃণমূলের একক প্রার্থী বাছাইয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেতাদের।
Published : 16 Feb 2016, 10:22 AM
ক্ষমতাসীন দলের সক্রিয় নেতার সংখ্যা বেশি হওয়ায় আওয়ামী লীগকে অনেক ইউনিয়নে প্রার্থী বাছাইয়ে বেগ পেতে হচ্ছে; সাংসদদের ভূমিকাও এড়ানো যাচ্ছে না।
অন্যদিকে দীর্ঘদিন সংসদের বাইরে থাকায় এবং অনেক এলাকায় কমিটি নিষ্ক্রিয় থাকায় বিএনপিতেও ‘উপযুক্ত’ একক প্রার্থী বাছাই জটিল হয়ে পড়েছে।
তৃণমল থেকে সিদ্ধান্ত না পেলে জেলা ও কেন্দ্রীয়ভাবে নামের তালিকা প্রস্তুতের প্রক্রিয়া চলছে দলটিতে। সময় বেঁধে না দিলেও বুধবারের মধ্যেই তা পাঠানোর কথা জানিয়েছেন বিএনপির তৃণমূল নেতারা।
আর দলীয় সমর্থন না পেলে অনেকেই যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে দলের ভোট কাটতে পারেন, সে সম্ভাবনার কথা মাথায় রাখতে হচ্ছে দুই দলকেই।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় নির্বাচনের উদ্যোগ নিলেও বিএনপি বরাবরই এর বিরোধিতা করে আসছে। বিএনপি গত রোববারও ইসিতে গিয়ে নির্দলীয় ভোটের পক্ষে সুপারিশ জানিয়ে এসেছে।
এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় ভোট হবে। প্রতি ইউনিয়নে একজন করে প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ রয়েছে নিবন্ধিত ৪০টি দলের সামনে। এর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ারও সুযোগ রয়েছে।
আগামী ২২ মার্চ প্রথম ধাপে ৭৩৯ ইউপিতে ভোট হবে। আগ্রহীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। পরে আরও পাঁচ ধাপে সাড়ে তিন হাজার ইউপির ভোট হবে।
ইসির সহকারী সচিব আশফাকুর রহমান জানান, দলীয় প্রার্থীর ক্ষেত্রে প্রত্যয়নের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইসিকে দিতে হবে ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। আর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় প্রার্থীর দলীয় প্রত্যয়ন সঙ্গে দিতে হবে।
প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এবার তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী দেওয়ার কথা জানিয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের প্রত্যয়ন দেবেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। আর বিএনপি তাদের ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রত্যয়নকারীর নাম জানাবে মঙ্গলবার।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ জানান, তৃণমূল থেকে পাঠানো মনোনয়নের তালিকা নিয়ে মঙ্গলবার রাতে গণভবনে বৈঠকে বসবে মনোনয়ন বোর্ড।তাতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইউপির মতো তৃণমূল পর্যায়ে দলীয়ভাবে ভোট এই উপমহাদেশে বাংলাদেশেই প্রথম হচ্ছে। প্রথমবার বলে প্রার্থী বাছাই কিছুটা ডিফিকাল্ট হবে। আমাদের দলে সক্রিয় নেতাকর্মী বেশি হওয়ায় একক প্রার্থী বাছাই জটিল হবে। তবে শেষ পর্যন্ত সঠিক সিদ্ধান্ত আসবে বলেই আমরা আশা করছি।”
এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে মনোনয়ন বঞ্চিতদের দলছুট হওয়ার প্রবণতা দেখা গেলেও আওয়ামী লীগে এখন সেই আশঙ্কা ‘কম’। ভোট সামনে রেখে কেউ যেন দলে আসার সুযোগ না পায়- সে দিকেও নজর রাখতে হবে।
“এটা চ্যালেঞ্জ হলেও অনেক এলাকায় প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ গুছিয়ে আনা হয়েছে। আমরা সতর্ক রয়েছি; সাংসদদের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি কেউ বিদ্রোহী হয়- তাদের বোঝানোর চেষ্টা হবে,” বলেন তিনি।
বিএনপিও তৃণমূলের তালিকা পাঠাতে বলেছে। তবে সেজন্য দলটি কোনো সময় বেঁধে দেয়নি।
এ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, তাদের অনেক ‘যোগ্য’ নেতার নামে মামলা থাকায় এবং ‘সরকারের হয়রানির’ কারণে অনেক ইউপিতে বিএনপির প্রার্থী সঙ্কেট হতে পারে।
“একক প্রার্থী দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আমাদের অনেকে ভোট করার জন্যে আগ্রহী থাকবে। সবার সুযোগ না থাকলেও ভোটে বাধা দেওয়া যাবে না। দলীয় শৃঙ্খলা মেনে প্রার্থী হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
বিএনপির টিকিট না পেলে অন্য দলে যাওয়ার মতো নেতা-কর্মী নেই বলে দাবি করেন তিনি।
তৃণমূলের চালচিত্র
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জেলা প্রতিনিধিরা জানান, অনেক ইউপিতেই এখনো প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। মঙ্গল ও বুধবারের মধ্যে চূড়ান্ত তালিকা ঢাকায় পাঠাতে চাইছেন মাঠের নেতারা।
বরিশাল প্রতিনিধি কাওছার হোসেন জানান, তার বিভাগে আড়াই শতাধিক ইউপিতে ভোট হবে। জেলা-উপজেলা-ইউপি কমিটির নেতারা তালিকা চূড়ান্ত করতে ব্যস্ত।
শায়েস্তাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মামুন তালুকদার বলেন, “বিভিন্ন ওয়ার্ডে সভা করে প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত। এখন বোর্ডে জমা দেব।”
দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম শাহীন বলেন, “উপজেলা-ইউনিয়ন নেতাদের প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা বাছাইয়ে ব্যর্থ হলে জেলা কমিটি তালিকায় নাম সমন্বয় করবে।”
হিজলা বিএনপির যুগ্ম আহহ্বায়ক নুরুল ইসলাম রাজু বলেন, “এ উপজেলায় যে চার ইউপিতে ভোট হবে, তার মধ্যে তিনটির প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। আশা করি মঙ্গলবার সবার নাম জমা দিতে পারব।”
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, বরিশাল-১ আসনের সাংসদ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর হাতেই সবার দলীয় টিকিট চূড়ান্ত হবে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ায় তার ‘নির্দেশেই’ প্রার্থী চূড়ান্ত হবে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, “উনি (আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ) জেলা সভাপতি, উনি এলাকার রাজনীতি করেন। তার ওপর দলের আস্থা রয়েছে। সাংসদ হিসেবে তিনি প্রভাব খাটাবেন না। তবে দলীয় সভানেত্রীর কাছে তৃণমূলের তথ্য আসছে; সব শেষে সভানেত্রীই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।”
কুমিল্লা প্রতিনিধি কাজী এনামুল হক জানান, দেবিদ্বার উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে প্রথম দফায় ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, “আমাদের তালিকা চূড়ান্ত হয়ে গেছে। বাকি সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের।”
অন্যদিকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদ উদ্দীন বলেন, “ইউপি থেকে নাম যাবে না, জেলায় ছেড়ে দিয়েছি। উনারা পাঠাবে। আমাদের এখানে কমিটি নিষ্ক্রিয়। অনেকে প্রার্থী কেন্দ্রে ধরনা দিচ্ছে।”
সিলেট প্রতিনিধি মনজুর আহমেদ জানান, সদর উপজেলার আট ইউনিয়নে ভোট হবে প্রথম দফায়।
সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, “প্রার্থী যাচাই বাছাই শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তৃণমূল নেতাদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে প্রার্থী তালিকা করা হচ্ছে। কেউ বিদ্রোহী হলে দলই সিদ্ধান্ত নেবে।”
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, “তালিকা চূড়ান্ত করে কেন্দ্রে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।”
কক্সবাজার প্রতিনিধি শংকর বড়ুয়া জানান, জেলায় আওয়ামী লীগ আগ্রহী প্রার্থীর তালিকা গুছিয়ে আনলেও বিএনপি কাজ শেষ করতে পারেনি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান জানান, ১৯টি ইউপির বর্ধিত সভা করে তালিকা করেছেন তারা।
আর জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, “দুয়েক দিনের মধ্যে প্রার্থী তালিকা হয়ে যাবে। দলের বাইরে যাওয়ার মতো কেউ আমাদের এখানে নেই।”