মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ২৫ গ্রামের বেশি হেরোইন বহনের দায়ে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন দেওয়ার বিধান রয়েছে।
Published : 29 May 2024, 01:11 AM
আড়াই বছর আগে তিন কেজি ১৪৫ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেপ্তার বতসোয়ানার এক তরুণীর বিচার শেষে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত।
ঢাকার অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আমিনুল ইসলাম সোমবার এ মামলার রায় দিলেও তা মঙ্গলবার জানা যায়।
দণ্ডিত ওই নারীর নাম লেসেডি মোলাপিসি। অভিযোগে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় অন্য আসামি মহিবুল ইসলাম মাসুদ খালাস পেয়েছেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, এই রায়ে তিনি সন্তুষ্ট নন।
“দণ্ডিত আসামি (লেসেডি মোলাপিসি) ইমিগ্রেশনেই ধরা পড়েছিলেন। তিনি ওই হেরোইন বিক্রি করেননি বা বিক্রির সুযোগ পাননি। ফলে কম সাজা দিলে ভালো হত। এমন অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিষয়টি বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করবে।”
দেশে মাদক মামলায় বিদেশিদের বিচার হওয়ার উদাহরণ টেনে ফারুক বলেন, প্রায় ৩০ বছর আগে ঢাকার একটি দায়রা আদালত বাংলাদেশে স্বর্ণ পাচারের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এলিয়েদাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল।
“তবে বতসোয়ানার নাগরিকের বিরুদ্ধে যে রায় হল, আমার জানা মতে, এটিই মাদক বহন করার মামলায় বাংলাদেশে কোনো বিদেশিকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের প্রথম ঘটনা।”
রায়ের বিবরণে বলা হয়, বতসোয়ানার নাগরিক মোলাপিসি ২০২২ সালের ২৩ জানুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ থেকে কাতারের দোহা হয়ে ঢাকাগামী ফ্লাইটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। গ্রিন চ্যানেল থেকে বের হওয়ার সময় তার সঙ্গে থাকা ট্রলি ব্যাগ স্ক্যান করে পাউডার বা দানাদার পদার্থের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
ব্যাগের মধ্যে তিনটি ভ্যানিটি ব্যাগ ও একটি ফাইল ব্যাগ থেকে ৩ হাজার ১৪৫ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়, রাসায়নিক পরীক্ষাতেও যার প্রমাণ মেলে। তখন এ পরিমাণ হেরোইনের বাজারমূল্য ছিল প্রায় ২০ কোটি টাকা।
ধরা পড়ার পর ঢাকার বিমানবন্দর থানায় মোলাপিসির বিরুদ্ধে মামলা করেন কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ফিরোজ আলম।
সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী মিলন হোসেন জানান, সোমবার আসামির উপস্থিতিতে রায় দেন বিচারক। মৃত্যুদণ্ডের সঙ্গে তাকে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায় শেষে তাকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) এর ৮(গ) ধারায় ২৫ গ্রামের বেশি পরিমাণ হেরোইন বহনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিকে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে।
ফারুক আহাম্মদ বলেন, মোলাপিসি অল্প অল্প বাংলা বুঝতে ও বলতে পারেন। তাকে সাক্ষীদের বক্তব্য পড়ে শোনানো হয় ও ইংরেজিতে বুঝিয়ে বলা হয়। তিনি সাফাই সাক্ষ্য দেননি। তবে আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন।
মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, মোলাপিসি ও মহিবুলকে আসামি করে ২০২২ সালের ৮ আগস্ট আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। সেখানে বলা হয়- পরস্পরের সহযোগিতায় তারা হেরোইনের কারবার করতেন।
২০২৩ সালের ২০ জুলাই মামলার অভিযোগ গঠন করে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু করে আদালত। রাষ্ট্রপক্ষে ছয়জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করে আদালত মঙ্গলবার এক আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিল।