বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যৌন নিপীড়নের ঘটনার পর চিহ্নিত মো. কামাল বেশভুষা বদলে ‘আত্মগোপন’ করেছিলেন বলে দাবি করছে পুলিশ।
Published : 29 Jan 2016, 08:54 AM
বাংলা নববর্ষের উৎসবের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে ভিড়ের মধ্যে একদল যুবকের নারীদের ওপর চড়াও হওয়ার ঘটনায় বুধবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যার ওই ঘটনাটি প্রথমে পুলিশ এড়াতে চাইলেও বিভিন্ন ছাত্র ও নাগরিক সংগঠনের দাবির মুখে এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলা ও তদন্তের উদ্যোগ নেয়।
এরপর ১৭ মে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও থেকে আট নিপীড়কের ছবি পাওয়ার কথা জানান পুলিশপ্রধান এ কে এম শহীদুল হক। তাদের ধরিয়ে দিতে লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করেন তিনি।
তবে ঘটনার আট মাস পর গত ১৩ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই দীপক কুমার দাস ঢাকার আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে বলেন, পুলিশ অপরাধী কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি। ফলে অমীমাংসিত অবস্থাতেই আলোচিত এ মামলার পরিসমাপ্তি ঘটে।
এরপর বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মারুফ হোসেন সরদার জানান, আগের রাতে খাজে দেওয়ান লেনের ৭৭ নম্বর বাসা থেকে কামালকে তারা গ্রেপ্তার করেন।
“মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ওই ঘটনায় আটজনকে শনাক্ত করেছিল। গ্রেপ্তার কামাল তাদের একজন”, বলেন তিনি।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনার পর যখন বিভিন্ন মাধ্যমে নিপীড়কদের ছবি প্রকাশ পায় তখন সে (কামাল) অনেকটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিল। চেহারা পরিবর্তনের জন্য সে দাড়িও কেটে ফেলেছিল। সে ভেবেছিল তাকে কেউ চিনবে না।”
তবে গোয়েন্দারা গুপ্তচরের মাধ্যমে কামালের বিষয়ে জানতে পারে। এরপর অভিযান চালিয়ে তার বাড়ি থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার মাশরুকুর বলেন, “পুলিশকে কামাল বলছে, ওইদিন সে ওই জায়গায় ঘুরতে গিয়েছিল; সঙ্গে কেউ ছিল না। তবে গোয়েন্দারা তার দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখবে। তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি। তদন্তের প্রয়োজনে তাও জানার চেষ্টা করা হবে।”
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক দীপক কুমার দাস বলেন, কামালরা তিন ভাই পাঁচ বোন। কামাল ১০ বছর আগে বিয়ে করেছেন। তার এক মেয়ে (৭) ও এক ছেলে (২) আছে। সবাই একই বাসায় থাকেন।
নিপীড়নের ঘটনার পর কামাল ব্যবসা অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।
তদন্ত কর্মকর্তা দীপক বলেন, “এলাকায় পরিচিত লোকদের কাছেই সে কাঁচামাল বেচা-কেনা করত। বিভিন্ন সময়ে আত্মীয় বাড়িতে রাত কাটাত। বাড়িতে থাকলে তাকে খুব একটা দেখা যেত না।”
মামলা সক্রিয় না থাকায় কামালকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ঢাকার হাকিম আদালতে তার সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন এসআই দীপক।
শুনানি শেষে হাকিম আবদুল্লাহ আল মাসুদ দুই দিন মঞ্জুর করেন। কামালের পক্ষে জামিনের আবেদন করা হলেও বিচারক তা নাকচ করেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা পুরনো মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করতে ঢাকার ৩ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছে পুলিশ।