প্রধানমন্ত্রী ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানোর পরও কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন বেতন কাঠামোয় ‘অসঙ্গতি’ নিরসনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
Published : 12 Jan 2016, 01:34 PM
তাদের এই কর্মসূচির কারণে বাংলাদেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা গড়িয়েছে দ্বিতীয় দিনে। শিক্ষকরা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই আন্দোলন চলবে।
মঙ্গলবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ঘুরে দেখা যায়, আগের দিনের মতোই ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে বিভিন্ন বিভাগের নির্ধারিত পরীক্ষাগুলো শিক্ষকরা নিচ্ছেন।
আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একইভাবে ক্লাস বন্ধ রেখে পরীক্ষা নেওয়া হলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পরীক্ষাও বন্ধ রেখেছেন।
পুরান ঢাকার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এদিন ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম লুৎফুর রহমান অবস্থান কর্মসূচিতে বলেন, “আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। তাই পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি। কমপ্লিট শাটডাউন।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আওয়ামী সমর্থিত শিক্ষক ফোরামের এই নেতা বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কি কমপ্লিট শাটডাউন এর অর্থ বুঝতে পারেন না? সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়ে তারা কীভাবে পরীক্ষা নিচ্ছেন?”
চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই টানা দ্বিতীয় দিনের মতো এ কর্মসূচি পালন করছেন।
গত বছরের মাঝামাঝিতে অষ্টম বেতন কাঠামো প্রস্তাবের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা নানা কর্মসূচিতে নিজেদের ‘মর্যাদাহানি ও সুবিধা কমে যাওয়ায়’ আপত্তি জানিয়ে আসছিল।
গত মাসে বেতন কাঠামোর গেজেট প্রকাশের পর শিক্ষকদের বিরোধিতার মুখে সরকার একটি কমিটি গঠন করে। কিন্তু এখনও দাবি-দাওয়ার বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি।
জগন্নাথের শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহীন মোল্লা বলেন, “দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন ছাড়া উপায় নেই। এটা উচ্চ শিক্ষাকে বাঁচানোর আন্দোলন। আমরা যদি আন্দোলন না করি, তাহলে পরবর্তীতে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবে তারাও এ পরিস্থিতির শিকার হবে। মেধাবীরা আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চাইবে না, তারা আমলা হতে চাইবে।”
লাগাতার কর্মবিরতির প্রথম দিন সোমবার রাজধানীতে এক জনসভায় শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “শিক্ষকদের জন্য আরও কিছু করার থাকলে, সরকার সেটা অবশ্যই বিবেচনা করবে। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোন বন্ধ করবেন না। ক্লাস না নিয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ করলে তারা তা মেনে নেবে না।”
সম্প্রতি চালু হওয়া নতুন বেতন কাঠামোতে ১২৩ ভাগ পর্যন্ত বেতন বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এতো বেতন বাড়ানোর পরেও কেন অসন্তোষ?”
সচিবদের মর্যাদা চাইলে শিক্ষকদের ‘বিসিএস দিয়ে সচিব’ হওয়ারও পরামর্শ দেন সরকারপ্রধান।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েল শিক্ষক শাহীন মোল্লা বলেন, “সচিবরা গাড়িসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পান, কিন্তু শিক্ষকরা যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। শিক্ষকরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান- এ বিষয়টিকে বারবার অজুহাত হিসেবে সামনে আনা হয়। অথচ এটা আমাদের বৈধ উপার্জন। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই তা করা হয়।”
শিক্ষকদের এই আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না দাবি করে তিনি বলেন, “প্রয়োজনে পরবর্তীতে শুক্র ও শনিবার ক্লাস ও পরীক্ষার মাধ্যমে ক্ষতি পুষিয়ে দেব। কিন্তু দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের পূর্ণদিবস কর্মবিরতি চলবে।”
ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন আহমেদ বলেন, “সহকর্মীদের বলব, নিজেদের জায়গা শক্ত করতে হবে। যতক্ষণ না দাবি আদায় হচ্ছে, ততক্ষণ আন্দোলন চলবে। আন্দোলনরত শিক্ষকদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলেছেন- তা খুবই দুঃখজনক। তাকে মিসগাইড করা হচ্ছে।”
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিগুলোর মোর্চা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদও আগের দিন দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।
শিক্ষকদের অবহেলা করা হচ্ছে অভিযোগ করে সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা তো কোনো জায়গা থেকে ভেসে আসি নাই। আমরা নিজের যোগ্যতা নিয়ে এখানে এসেছি। কারও দয়ায় হই নাই, কোনো কোটায়ও হই নাই। আমরা তো কখনো ‘ব্যাকবেঞ্চার’ ছিলাম না।”