অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামো নিয়ে ‘সঠিক’ তথ্য না পাওয়ায় কিছু ক্ষেত্রে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হচ্ছে দাবি করে তার ব্যাখ্যা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
Published : 04 Jan 2016, 11:02 PM
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা এবং ২৬টি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে সোমবার রাতে যুগ্ম সচিব জালাল উদ্দিনের স্বাক্ষরে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং অন্যান্য সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান যে সব দাবি উত্থাপন করেছেন, সে বিষয়ে ‘সঠিক তথ্যাদি’ জনগণের সামনে তুলে ধরে বিষয়টি স্পষ্ট করতেই এই বিজ্ঞপ্তি বলে জানানো হয়েছে।
স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মর্যাদা অবনমনের যে কথা বলছেন, তার প্রতিক্রিয়ায় সরকারি কর্মীদের চাকরির বয়স, কাজের ধরন এবং অর্থ প্রাপ্তির একটি তুলনা তুলে ধরা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
এতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অবসরের বয়স ৬৫ বছর হলেও সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে তা ৫৯ বছর। যেখানে সরকারি কর্মকর্তাদের সচিব পদে পদোন্নতি পেতে ২৭/৩০ বছর অপেক্ষা করতে হয়, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা পদোন্নতি পেয়ে ২০/২৫ বছরের মধ্যে প্রথম গ্রেড পেয়ে যান।
“সরকারি কর্মচারীদের নির্ধারিত সময়ের পরও অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় এবং সরকারের অনুমোদন ছাড়া অন্য কোনো কাজ করার সুযোগ নেই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ নিজের কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পান, যা কোনো সরকারি কর্মচারীর পক্ষে সম্ভব নয়।”
অষ্টম বেতন কাঠামো ঘোষণার পর থেকেই গ্রেডে মর্যাদার অবনমন এবং টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিলের প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করে ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
এরপর সরকার শিক্ষকদের এই দাবি পর্যালোচনায় কমিটি করে। কমিটির সভাপতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠকও করেন।
গত ৬ ডিসেম্বর বৈঠকে অর্থমন্ত্রী শিক্ষকদের তিনটি দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তার ১০ দিন পর বেতন কাঠামোর গেজেটে তার মধ্যে প্রথম দুটির প্রতিফলন ঘটেনি বলে শিক্ষকদের অভিযোগ। এরপর তারা ১১ জানুয়ারি থেকে লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা দেন।
টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিলের ব্যাখ্যায় অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, টাইম স্কেল বা সিলেকশন গ্রেড প্রাপ্তি মানে পদোন্নতি নয়, কেবল আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তি। দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বেতন ও চাকরি কমিশন এটি বিলুপ্তির সুপারিশ করে এবং তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদিত হয়।
“কোনো চাকরিজীবী যাতে এ কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেজন্য ৫% থেকে ৩.৭৫% হারে ক্রমপুঞ্জিত হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার আদেশ হয়েছে। একই সঙ্গে পদোন্নতি না পেলে ১০ বছর ও ৬ বছর পর উচ্চতর গ্রেডের বিধান করা হয়েছে।”
“পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকবৃন্দ যাতে টাইম স্কেল বা সিলেকশন গ্রেড ব্যতীত গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ প্রাপ্য হন, সেজন্য সরকারের সিদ্ধান্তের আলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাওয়া গেলে অর্থ বিভাগ দ্রুততার সঙ্গে প্রয়োজনীয় অনাপত্তি প্রদান করবে,” বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
জাতীয় অধ্যাপকদের বেতন বা সম্মানী জ্যেষ্ঠ সচিবের বেতনের সমান করার বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলেও এই সম্মানী কীভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়ে অর্থ বিভাগ ও শিক্ষা বিভাগের পত্র যোগাযোগ হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পুনর্বহাল, সরকারি প্রথম শ্রেণির চাকরিতে যোগদানে ক্যাডার ননক্যাডার বৈষম্যের সিদ্ধান্ত বাতিল, ইউএনও-কে দেওয়া কর্তৃত্ব আদেশ বাতিল, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছে ২৬টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে গ্রেডে মর্যাদার অবনমনের অভিযোগ তুলে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারাও।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সার্বিকভাবে বেতন প্রায় ৯৬.৫৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সব প্রকার ভাতা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হলে বেতন ও ভাতা মিলিয়ে এই আয় আরও বাড়বে।
বাংলা নববর্ষ ভাতা নতুন করে চালুর বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়, “ভাতার পরিমাণ পূর্বের চেয়ে কোনো ক্ষেত্রে হ্রাস করা হয়নি। এত অধিক হারে বেতন ও ভাতা বৃদ্ধি সত্ত্বেও কোনো কোনো মহল থেকে সঠিক তথ্যাদি পরিবেশন না করার কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে।”
পরিসংখ্যান দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে ২৬টি ক্যাডারে কর্মরত চাকরিজীবীর সংখ্যা প্রায় ৫৫,৩০৮ জন। ক্যাডারবহির্ভূত প্রবেশ পদের নবম গ্রেডে (৭ম বেতন স্কেলের প্রথম শ্রেণির) চাকরিজীবীর সংখ্যা প্রায় ১০,০০০ সহ ৯ম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব চাকরিজীবীর সংখ্যা লক্ষাধিক। সব পর্যায়ের ক্যাডার ও ক্যাডারবহির্ভূত চাকরিজীবীর মধ্যে থেকে সরকারের সচিবসহ গ্রেড-১ভুক্ত চাকরিজীবীর সংখ্যা বর্তমানে ১২২।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, ৩২টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বমোট শিক্ষকের সংখ্যা ১১,৪১১ জন। তার মধ্যে গ্রেড-১ ভুক্ত অধ্যাপকের সংখ্যা ৮২০ জন।
নতুন বেতন স্কেলে কোনো অসঙ্গতি থাকলে অর্থ বিভাগ নিয়মানুযায়ী তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।