তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা দুটি মামলায় আইনের ব্যাখ্যা জড়িত থাকায় এবং বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় নিম্ন আদালতের পরিবর্তে তার শুনানি হতে যাচ্ছে উচ্চ আদালতে।
Published : 24 Dec 2015, 06:39 PM
এর মধ্য দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা মোকদ্দমা প্রথমবারের মতো উচ্চ আদালতে শুনানির জন্য উঠছে বলে বাদীপক্ষের আইনজীবী মোতাহার হোসেন দাবি করেছেন।
দুই বছর আগে মানিকগঞ্জ জেলা জজ ও মোটর ক্লেইমস্ ট্রাইব্যুনালে করা মোকদ্দমা দুটি শুনানির জন্য বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের হাই কোর্ট বেঞ্চের তালিকায় এসেছে।
ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা ওই দুটি মোকদ্দমা সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদের আলোকে হাই কোর্টে বদলির জন্য বাদীদের করা আবেদন মঞ্জুর করে গত বছরের ২৯ অক্টোবর হাই কোর্ট রায় দিয়েছিল।
বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাই কোর্ট বেঞ্চ রায়ে মোকদ্দমা দুটি এই বিভাগের (হাই কোর্ট) উপযুক্ত বেঞ্চে পাঠানোর পক্ষে মত দেয়। এজন্য উপযুক্ত বেঞ্চ গঠন বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে প্রধান বিচারপতির কাছে ওই দুই মোকদ্দমার নথি ও আদালত বদলির আবেদনের নথি পাঠানো হয়।
এরপর প্রধান বিচারপতি বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি জিনাত আরা নেতৃত্বাধীন দ্বৈত বেঞ্চে পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় ১৫ ডিসেম্বর মোকদ্দমা দুটি ওই বেঞ্চের তালিকায় শুনানির জন্য ১৮৯ নম্বর ক্রমিকে ছিল।
তবে এখন সুপ্রিম কোর্টের শীতকালীন অবকাশ চলছে। অবকাশ ও সাপ্তাহিক ছুটির পর ৩ জানুয়ারি নিয়মিত আদালত বসবে।
২০১১ সালের ১৩ অগাস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ এবং এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মিশুক মুনীর।
তারেক ও মিশুককে বহনকারী মাইক্রোবাসটির সঙ্গে চুয়াডাঙ্গাগামী একটি বাসের সংঘর্ষ ঘটে। তাতে তারেক-মিশুকসহ মাইক্রোবাসের পাঁচ আরোহীর মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে। দেড় বছর পর ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মানিকগঞ্জে মোটরযান অর্ডিনেন্সে ১২৮ ধারায় বাসমালিক, চালক ও ইনস্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে দুটি মোকদ্দমা করেন।
এরপর সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে মোকদ্দমা দুটি জনস্বার্থে হাই কোর্টে বদলির নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেন বাদীরা।
অধস্তন আদালত থেকে হাই কোর্ট বিভাগে মামলা স্থানান্তর সংক্রান্ত সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে, হাই কোর্ট বিভাগের নিকট যদি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয়, যে ওই বিভাগের কোনো অধস্তন আদালতে বিচারাধীন কোনো মামলায় এই সংবিধানের ব্যাখ্যা-সংক্রান্ত আইনের এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা এমন জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয় জড়িত রয়েছে, সংশ্লিষ্ট মামলার মীমাংসার জন্য যাহার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রয়োজন, তাহলে হাই কোর্ট বিভাগ ওই আদালত হতে মামলাটি প্রত্যাহার করিয়া লইবেন।
এর আলোকে তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ এবং মিশুক মুনীরের স্ত্রী কানিজ এফ কাজী ও ছেলে সুহৃদ মুনীর ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর হাই কোর্টে আলাদা দুটি আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৩ অক্টোবর হাই কোর্ট রুল দেয়।
রুলে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদের অনুসারে মোকদ্দমা দুটি কেন উচ্চ আদালতে বদলি করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। সেইসঙ্গে মোকদ্দমা দুটির নথিপত্র তলব করা হয়।
রুলের ওপর শুনানি শেষে গত বছরের ২৯ অক্টোবর দুই আবেদনের উপর একসঙ্গে রায় দেয়।
বাদীপক্ষের অন্যতম আইনজীবী মোতাহার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাই কোর্ট এ মর্মে সন্তুষ্ট হয়েছে যে, ক্ষতিপূরণের মোকদ্দমা দুটি অতীব জনগুরুত্বপূর্ণ ও এতে মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ ও এর বিধিমালা ও সংবিধানের ব্যাখ্যার প্রশ্ন জড়িত। মোকদ্দমা দুটিতে টর্ট আইনের প্রয়োগ ও সে সংক্রান্ত ব্যাখ্যা জড়িত থাকায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা মোকদ্দমা দুটি বদলি পূর্বক হাই কোর্টে নিষ্পত্তির আদেশ দিয়েছে।”
এই আইনজীবী জানান, হাই কোর্ট রায়ে টর্ট আইনের যেসব বিষয়ের উপর অধিকতর ব্যাখ্যা প্রয়োজন তার কয়েকটি সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন।(১) কী কী ধরনের মোকদ্দমা টর্টের আওতায় পড়বে, (২) ক্লেইমস্ ট্রাইব্যুনাল কীভাবে ডিউটি অব কেয়ার নির্ধারণ করবে, (৩) স্ট্যার্ন্ডার্ড অব কেয়ার কী হওয়া উচিত, (৪) কী কী বিষয় কনসিডার করে ক্ষতিপূরণ নির্ধারন হওয়া উচিত এবং (৫) ক্ষতিপূরণের হার কী হওয়া উচিত ইত্যাদি।
উচ্চ আদালতে মামলা দুটি নিষ্পত্তির মধ্য দিয়ে টর্ট আইনের ওই বিষয়গুলোসহ মোটরযান অধ্যাদেশ-১৯৮৩ এবং মোটরযান বিধিমালার ওপর অধিকতর ব্যাখ্যা ও যথাযথ আইনগত ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করন মোতাহার হোসেন।