সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা ও নাজেহালের ঘটনার পর মাগুরা উপনির্বাচনে সাংবাদিকদের ওপর যে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল তা অনেকাংশে আসন্ন পৌরভোটে বহাল রাখল নির্বাচন কমিশন।
Published : 22 Dec 2015, 12:33 AM
ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশে এবার ইসির ‘কড়াকড়ি’
ভোটে গণমাধ্যমের ওপর কড়াকড়ির তাগিদ
পৌরভোট উপলক্ষে ইসি সাংবাদিকদের বিষয়ে যেসব নির্দেশনা দিয়েছে তার মধ্যে ভোটকক্ষে প্রবেশের জন্য প্রিজাইডিং কর্মকর্তার অনুমতির বাধ্যবাধকতার কথা বলা হয়েছে।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২৩৪ পৌরসভায় ভোট সামনে রেখে গত শনিবার অনুষ্ঠিত আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় ভোটের সংবাদ প্রচারে কড়াকড়ি আরোপের প্রস্তাব করেছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা।
গত ২৮ এপ্রিল ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করোপরেশন নির্বাচনে কিছু ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে গিয়ে পুলিশ সদস্য ও প্রার্থীর লোকজনের হাতে নাজেহাল ও হয়রানির শিকার হন কয়েকজন সাংবাদিক। ওই ভোটে ব্যালটে সিল মারাসহ নানা অনিয়মের ঘটনা গণমাধ্যমে আসে। গোলযোগ ও অনিয়মের কারণে তিনটি কেন্দ্রে ভোট বন্ধ করে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন।
তবে ভোটে সাংবাদিকদের বাধা ও নাজেহালের ঘটনায় ইসির তদন্ত কমিটি শেষ পর্যন্ত কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি।
সিটি নির্বাচনের পর ৩০ মে অনুষ্ঠিত মাগুরা উপনির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি এবং কেন্দ্রে অবস্থানের সময় বেঁধে দেওয়াসহ বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দেয় কমিশন। ওই নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের কোনো প্রার্থী ছিলেন না।
নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের আগে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না; ভোটকেন্দ্রে পাঁচ জনের বেশি সাংবাদিক প্রবেশ করতে পারবে না। ১০ মিনিটের বিশি অবস্থান করা যাবে না, ভোটকক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলা যাবে না…কার্ডের উল্টোপিঠে লিখিত নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
নির্বাচন কমিশনে ২৭ বছর ধরে কর্মরত একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাংবাদিকদের ভোটের সংবাদ সংগ্রহ নিয়ে কখনোই ঝামেলা হয়নি। শুধু গত সিটি নির্বাচনে কেন্দ্রে যেতে অনেক জায়গায় বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপরই ভোটকেন্দ্রের সংবাদ সংগ্রহ নিয়ে নির্দেশনার কথা ওঠে।”
পৌরসভা নির্বাচন সামনে রেখে ইসির জনসংযোগ শাখার পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান সোমবার সাংবাদিকদের নির্দেশনা বিষয়ক চিঠি ২৩৪ পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়েছেন।
এতে বলা হয়- প্রিজাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া ভোটকক্ষে প্রবেশ করা যাবে না; সাংবাদিকরা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না; কোনো প্রকার নির্বাচনী উপকরণ স্পর্শ বা অপসারণ করা থেকে বিরত থাকবেন; সাংবাদিকরা ভোটে প্রার্থী বা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যে কোনো ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবেন এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তার জন্যে সংবিধান, নির্বাচনী আইন ও বিধিবিধান মেনে চলবেন।
নির্দেশনার বিষয়ে ইসির জনসংযোগ শাখার পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে ডটকমকে বলেন, “কোনো কড়াকড়ি নেই সাংবাদিকদের জন্য। আমরা আগের নির্দেশনাগুলোই অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছি।”
বাংলাদেশে নীতিমালা অনুযায়ী নির্বাচন পর্যবেক্ষকদেরও অনুমতি নিয়ে ভোট কেন্দ্র ও কক্ষে যেতে হয়। পাঁচজনের বেশি পর্যবেক্ষক একসঙ্গে যেতে পারেন না। একই কেন্দ্রে সারাক্ষণ অপেক্ষারও সুযোগ নেই।
পৌরসভা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি চেয়ে ইতোমধ্যে প্রায় চার হাজার আবেদন জমা পড়েছে বলে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন করার কথা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় রিটার্নিং কর্মকর্তা ২৭ ডিসেম্বরের পরে সাংবাদিকদের পরিচয়পত্র সরবরাহ করবে।
এবার ২৩৪ পৌসভায় সাড়ে তিন হাজার ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এরমধ্যে ২০ হাজারেরও বেশি ভোটকক্ষ থাকবে। প্রিজাইডিং কর্মকর্তা প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকেন।