গুরুত্বপূর্ণ এই কাজের লাইসেন্স দেওয়ার নিলাম পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠার প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ে এক সভার পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় একথা জানান তিনি।
উন্মুক্ত নিলাম প্রক্রিয়ায় যোগ্যতম প্রতিষ্ঠানের বাদ পড়ার পাশাপাশি কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিদ্যমান অপারেটরদের কারও যোগসাজশের শঙ্কাও উঠেছে।
তবে সেসব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, এমএনপি অপারেটর নিয়োগে এমন শর্ত রাখা হবে, যাতে মোবাইল ফোন অপারেটরদের যোগসাজশের সুযোগ থাকবে না।
তবে কী কী শর্ত রাখা হচ্ছে, সে বিষয়ে এখনই বলতে চাননি তারানা হালিম।
‘টেলিযোগাযোগ বিভাগের কার্যক্রমের অগ্রগতি বাস্তবায়নের পর্যালোচনা সভা’ শেষে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
ওই সভায় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও ছিলেন এবং এমএনপি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন বলে প্রতিমন্ত্রী জানান।
নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদলানোর বহু প্রতীক্ষিত সুযোগ তৈরির নীতিমালায় (এমএনপি নীতিমালা) গত ২ ডিসেম্বর অনুমোদন দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়।
এরপর এমএনপি অপারেটর নিয়োগের নিলাম প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা শুরু করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। আগামী বছরের শুরুতেই গ্রাহকরা এ সুবিধা পেতে যাচ্ছেন বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন তারানা হালিম।
নিলামের ভিত্তিতে কাজটি দিলে নিম্নতম দরদাতা প্রতিষ্ঠান কাজ পায়। এক্ষেত্রে যোগ্যতম প্রতিষ্ঠান বাদ পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন টেলিকম সংশ্লিষ্ট অনেকে।
এই বিষয়ে তারানা হালিম বলেন, “লাইসেন্স এর ক্ষেত্রে বিডিং প্রসেসটা হয় কি না, বিষয়টি নিয়ে যাচাই-বাছাই করতে হবে। টেকনিক্যাল কোয়ালিফিকেশন বিষয়ে গুরুত্বারোপ করতে হবে, তার ভিত্তিতে গ্রেডিং করা হবে। স্বচ্ছতাকে নিশ্চিত করতে কিছু রিভিশন করতে হবে।”
সরকার অনুমোদিত চূড়ান্ত নীতিমালা অনুযায়ী নিলামের ভিত্তিতে একটি এমএনপি অপারেটর নিয়োগের কথা রয়েছে এবং এক্ষেত্রে ‘বিড মানি’ ধরা হয়েছে এক কোটি টাকা।
এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এখন এটি একটুখানি চেঞ্জ (পরিবর্তন) করতে হবে। সম্ভবত এই লাইসেন্স এর ক্ষেত্রে বিডিং প্রসেস হয় কি না, উপদেষ্টা (সজীব ওয়াজেদ) বিষয়টি বিটিআরসিকে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে প্রক্রিয়াটা স্বচ্ছ হয়।”
এমএনপি অপারেটরের লাইসেন্সের প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ পেতে আরও কিছু শর্ত যোগ করার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, “তবে কী কী শর্ত আসছে, তা এখন বলা যাচ্ছে না।”
এমএনপি চালু হলে কোনো অপারেটরের সেবায় সন্তুষ্ট না হলে গ্রাহকের অন্য অপারেটরে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে; বর্তমানে নম্বর বদলানোর ঝক্কিতে যারা অপারেটর বদলাতে চান না।
এমএনপি লাইসেন্সের নিলাম পদ্ধতির ‘ফাঁক’ ধরে টেলিকম খাতে দীর্ঘ-অভিজ্ঞ একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে হলে সর্বনিম্ন দরদাতাই কাজ পাবে।
তার মতে, সে ক্ষেত্রে কম যোগ্য একটি কোম্পানিরও কাজ পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে, যার পেছনে হয়ত থাকবে কোনো মোবাইল ফোন অপারেটর। তখন একাজে দেরি করানোও হতে পারে।
বাংলাদেশের মোবাইল ফোন অপারেটররা এমএনপি নিলামে অংশ নিতে আগ্রহী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজস করছে বলেও অভিযোগ উঠছে।
এ বিষয়ে তারানা হালিম বলেন, “সেটা যেন না করতে পারে, তার জন্য যা যা উদ্যোগ নিতে হবে, তা আমরা নিচ্ছি।
“কারও কোনো রকম কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট যেন না থাকে, তার উপর শতভাগ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। শর্তগুলো যা থাকবে, তাতে তারাই (অপারেটররা) নিরুৎসাহিত হবে। থার্ড পার্টির মাধ্যমে এই নিয়োগ অংশ নেবে, সে সুযোগও থাকবে না।”
বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এমএনপি অপারেটর নিয়োগের বিষয়টি যাচাই-বাছাই করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বৈঠকে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হবে।
“তবে অপারেটর নিয়োগে নিলাম প্রক্রিয়ায় কী ধরনের পরিবর্তন বা সংশোধন আসছে, তা বলা যাচ্ছে না,” বলেছেন তিনিও।
বিটিআরসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন দেওয়া চূড়ান্ত নীতিমালায় এমএনপি অপারেটর নিয়োগ নিলামের মাধ্যমে করতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের কোন মোবাইল ফোন অপারেটর বা তাদের সহযোগী এ নিলামে অংশ নিতে পারবে না বলে শর্ত রয়েছে।
দেশি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিদেশি প্রতিষ্ঠানও এ নিলামে অংশ নিতে পারবে। তবে বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে নিলামে অংশ নিতে হবে। এক্ষেত্রে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হবে ৫১ শতাংশ এবং দেশি প্রতিষ্ঠানের ৪৯ শতাংশ।
এক বা একাধিক দেশে এমএনপি সেবা দিয়েছে এবং যার এমএনপি গ্রাহক কমপক্ষে ১ কোটি রয়েছে, এমন প্রতিষ্ঠানই এ নিলামে অংশ নিতে পারবে বলে শর্ত রয়েছে।
নিলাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স পাবে ১৫ বছরের জন্য এবং এই প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসা শুরুর দ্বিতীয় বছর থেকে সাড়ে ৫ শতাংশ হারে সরকারকে রাজস্ব দিতে হবে।
এমএনপি সুবিধা দিতে অপারেটরা গ্রাহকদের কাছ থেকে ৩০ টাকা নির্ধারণের বিষয়টিও অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এমএনপি সুবিধা নেওয়ার পর এক গ্রাহককে পরবর্তী অপারেটরে যেতে অপেক্ষা করতে হবে ৪৫ দিন।
বর্তমানে ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশ ছাড়াও প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি বা এমএনপি পরিষেবা চালু রয়েছে।