একাত্তরে নয় মাস যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর হাতে নির্যাতিত মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার পক্ষের মানুষদের আর্তনাদে যেই বাড়ির আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে থাকত, সেই গুডস হিলে বিরাজ করছে নিস্তব্ধ নিরবতা।
Published : 22 Nov 2015, 03:43 AM
মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামে নগরীর গনি বেকারী মোড়ে অবস্থিত সাকা চৌধুরীর এই পারিবারিক বাড়িই ‘টর্চার সেল’ হিসেবে ব্যবহৃত হত।
গণহত্যা ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যার দায়ে তৎকালীন মুসলিম লীগ এই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকরের পর রোববার প্রথম প্রহরে ওই গিয়ে দেখা যায় জনমানবশূন্য।
ওই বাসভবনের প্রধান গেইটে কোন দ্বাররক্ষী ছিল না; ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। তবে কোনো গাড়ি পাশ দিয়ে যাবার সময় বাঁশির আওয়াজ শোনা গেছে ভেতর থেকে।
গুডস হিলে সুনসান নিরবতা থাকলেও ওই পাহাড়ের বিভিন্ন ভবন ও লাইটপোস্টে বাতিগুলো জ্বলতে দেখা গেছে।
ওই বাড়ির লাগোয়া সাকা চৌধুরীদের পারিবারিক পেট্রোল পাম্প রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকলেও শনিবার অনেক আগেই তা বন্ধ হয়ে যায়।
নগর জুড়ে পুলিশ-বিজিবি-র্যাবের টহল ও তল্লাশি থাকলেও গুডস হিলের বাইরে পুলিশের কোনো অবস্থান দেখা যায়নি।
একাত্তরে চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজন, মুক্তিযোদ্ধা ও হিন্দুদের ধরে এনে গুডস হিলের গ্যারেজে আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন করা হত।
সাকা চৌধুরী ও তার বাবা মুসলিম লীগের শীর্ষ নেতা ফজলুল কাদের (ফকা) চৌধুরী এ নির্যাতনে নেতৃত্ব দেন।
তার অপর তিন ভাই গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী, সাইফুদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামালউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা সেখানে পৃথক ভবনে থাকতেন।
আপিলে সালাউদ্দিন কাদেরের ফাঁসির দণ্ড বহাল রাখার রায়ের আগে গুডস হিলের এই বাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয় বলে তখন দ্বাররক্ষীরা জানিয়েছিলেন।
রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহ, সুলতানপুর ও ঊনসত্তরপাড়ায় হিন্দু বসতিতে গণহত্যা এবং হাটহাজারীর আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজাফফর ও তার ছেলে শেখ আলমগীরকে অপহরণ করে খুনের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সালাউদ্দিন কাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সাকা সুপ্রিম কোর্টের আপিল করলেও চার অভিযোগে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে আপিল বিভাগ। এর ফলে চূড়ান্ত আইনি লড়াইয়ে গিয়েও হেরে যান সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী।
জান বাঁচানোর শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনও নাকচ হলে রোববার প্রথম প্রহরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে একাত্তরের এই যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়; অবসান হয় একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা আর ক্ষতিগ্রস্তদের চার দশকের অপেক্ষার।