ইন্টারনেটে যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকসহ বন্ধ করা কয়েকটি অ্যাপ সীমিতভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে বাংলাদেশে।
Published : 19 Nov 2015, 08:27 PM
‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ বুধবার সরকার বন্ধ করে দিলেও নানা উপায়ে ফেইসবুক ব্যবহারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন ব্যবহারকারীরা এবং তাতে সফল হওয়ার কথাও জানিয়েছেন অনেকে।
কয়েকটি আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেইটওয়ে) কোম্পানির কর্মকর্তারা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, অ্যাপগুলো পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার প্রযুক্তি না থাকায় ব্যবহারকারীরা এসব অ্যাপে ঢুকতে পারছেন।
বন্ধ করার পরও এসব অ্যাপ ব্যবহার করা যাচ্ছে- জানানো হলে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুরোপুরি বন্ধ করা না গেলেও ৯০ শতাংশ বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। পুরোপুরি বন্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে।”
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির হিসাবে, গত সেপ্টেম্বর শেষ নাগাদ বাংলাদেশে ইন্টারনেট সংযোগ প্রায় সাড়ে ৫ কোটি।
বিটিআরসির প্রধান জানান, ফেইসবুক, ফেইসবুক মেসেঞ্জার, ভাইবার ও হোয়াটসঅ্যাপসহ প্রায় ১০টি অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করা হয়েছে।
বিটিআরসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ফেইসবুক, ফেইসবুক মেসেঞ্জার, ভাইবার ও হোয়াটসঅ্যাপসহ হ্যাংআউট, ট্যাংগো, লাইন, ইউস্ট্রিম ডট টিভি বন্ধ করার নির্দেশনা রয়েছে।
বাংলাদেশের ব্যবহৃত হচ্ছে বা জনপ্রিয়তা পেয়েছে, এমন আরও কয়েকটি অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করা হতে পারে বলেও আভাস দেন ওই কর্মকর্তা।
বন্ধ করা হলেও ব্যবহারকারীরা ভিন্ন পন্থায় (প্রক্সি বা সফটওয়্যার) ৩০ ঘণ্টা পরও এসব অ্যাপ ব্যবহার করতে পারছে।
ভাইবার ব্যবহারকারী কয়েকজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বন্ধ করার ঘোষণা আসার পরও ভাইবার ব্যবহার সম্ভব হয়েছে। বৃহস্পতিবারেও ভাইবারে যোগাযোগ করতে পেরেছেন তারা, আদান-প্রদান করেছেন টেক্সট মেসেজ।
ফেইসবুক ব্যবহারকারী অনেকেই বলেছেন ইন্টারনেটে জনপ্রিয় এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি ব্যবহারের কথা।
আইআইজি অপারেটরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “ফেইসবুক-ভাইবারসহ অন্যান্য অ্যাপগুলো ডায়নামিক আইপি ব্যবহার করে থাকে, তাই সব সময় তাদের বন্ধ করা সম্ভবপর হয় না।”
যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড রিভিউয়ের আবেদন খারিজের দুই ঘণ্টা পর বুধবার দুপুরে বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়।
বুধবার বেলা সোয়া ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে কেউ কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারেননি।
এরপর ইন্টারনেট সংযোগ ফিরতে শুরু করলেও সামাজিক যোগাযোগের কিছু ওয়েবসাইট ও অ্যাপ ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।
তখন টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, ‘দেশ ও জাতির নিরাপত্তার স্বার্থেই’ অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক, ফেইসবুক মেসেঞ্জার, ভাইবার ও হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ করা হয়েছে।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে জঙ্গিরা কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে আগেই বলা হচ্ছিল।
পুলিশও বলে আসছিল, নাশকতাকারীরা মোবাইল ফোনে কথা না বলে ইন্টারনেটভিত্তিক এসব অ্যাপ ব্যবহার করায় তাদের ধরতে সমস্যা হচ্ছে।
সম্প্রতি দুই বিদেশি নাগরিক হত্যা ও পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে হামলার ঘটনার পর গত ৮ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেন, ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে জঙ্গিরা কার্যক্রম চালাচ্ছে।
জঙ্গিদের যোগাযোগ ও অর্থায়ন বন্ধে তাদের শনাক্ত করতে কিছু অ্যাপ বন্ধ করাসহ ইন্টারনেটের উপর সাময়িক কড়াকড়ি আরোপের ইঙ্গিত দেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বৃহস্পতিবার বলেছেন,ইন্টারনেটে যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করাটা সাময়িক। ‘অবস্থার’ পরিবর্তন হলে তা খুলে দেওয়া হবে।