হজ শেষে নিরাপদে দেশে ফিরলেও মিনায় পদদলনে হতাহতের ঘটনা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে অনেককেই।
Published : 01 Oct 2015, 10:33 AM
ওই ঘটনা কাছ থেকে দেখেছেন কিংবা কাছাকাছি ছিলেন, কিন্তু সময়ের হেরফেরে প্রাণে বেঁচে গেছেন এমন কয়েকজন বাংলাদেশি হাজি দেশে ফিরে বিমানবন্দরে নেমে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছেন।
বুধবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কথা হয় রংপুরের অ্যাডভোকেট রইস উদ্দিনের সঙ্গে, যিনি গত ২৪ সেপ্টেম্বর হুড়োহুড়ি শুরুর কিছুক্ষণ পর দুর্ঘটনাস্থল অতিক্রম করেছিলেন।
হজের রীতি অনুযায়ী মুজদালিফার ক্যাম্পে থেকে হাজার হাজার মানুষ যখন শয়তানের প্রতীকী স্তম্ভে পাথর ছোড়ার জন্য জামারাতের দিকে যাচ্ছিলেন, তখনই ২০৪ নম্বর সড়কে হুড়োহুড়িতে পদদলনের সূচনা হয়।
রইস বলেন, “মূলত যেটা হয়েছে, সৌদি প্রিন্সের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ তিনটির মধ্যে দুটি গেট বন্ধ করে দেয়। কাউকে যেতে দিচ্ছিল না। এতে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়, যার ফলে দুর্ঘটনা ঘটে।”
“তার নাম মামুনুর রশিদ, আমরা এক সাথেই ছিলাম। তার স্ত্রীকে পাওয়া গেছে, কিন্তু তাকে এখনো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না,” বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন এই আইনজীবী।
তিনি বলেন, “আর কিছুক্ষণ আগে যদি আমি যেতাম, তাহলে হয়তো আমারও ফেরা হত না।”
পদদলনের ওই ঘটনায় ৭৬৯ জনের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি রয়েছেন বলে এ পর্যন্ত নিশ্চিত হয়েছে সরকার। আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৩৩ জন। নিখোঁজ রয়েছেন আরও অনেকে।
বুধবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে সন্তানদের জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন বাড্ডার কামরুন নাহার।
সৌদি আরবের হজ ব্যবস্থাপনা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
“কয়েক লাখ মানুষ যে পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন, সেটি একজন প্রিন্সের জন্য আটকে না দিলে এ ঘটনা ঘটত না।”
‘শয়তানের স্তম্ভে’ পাথর ছুড়তে যাওয়ার যে পথে দুর্ঘটনা হয়েছে সে পথ দিয়ে ঘটনার আধা ঘণ্টা আগে গিয়েছিলেন দিনাজপুরের খোলাহাটির মো. আবুল হোসেন।
তিনি বলেন, “মানুষের ভিড় অনেক বেশি ছিল। পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয়। যারা সামনে ছিলেন- তারা এগুতে পারছিলেন না, যারা পেছনে ছিলেন তারা এটা জানতেন না। একটা পর্যায়ে পুলিশও মানুষের চাপ সামলাতে পারেনি। এ কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে।”
“প্রচণ্ড রোদ ছিল; এতো মানুষের শরীরের উত্তাপ তো আছেই। দাঁড়িয়েও থাকা যাচ্ছিল না। এক পর্যায়ে একটি ফাঁকা জায়গা পেয়ে আমি বসে পড়ি। মোবাইলে চার্জ ছিল না, যোগাযোগ করতে পারছিলাম না কারও সাথে। একবার মনে হল আর বুঝি ফেরা হবে না।”
পরে কয়েকজন ভারতীয় নাগরিকের সহায়তায় সেদিন ফিরে আসেন বলে জানান তিনি।
এবার সবমিলিয়ে প্রায় ২০ লাখ মুসলমান হজ করেছেন, যার মধ্যে বাংলাদেশের এক লাখেরও বেশি মুসলমান রয়েছেন।
হজ মৌসুম শুরুর পরপরই গত ১১ সেপ্টেম্বর মক্কার কাবা শরীফ ঘিরে থাকা মসজিদুল হারামে ক্রেইন উল্টে ১১৭ জন নিহত হন। তাদের মধ্যেও একজন বাংলাদেশি ছিলেন।