আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ ও বিপ্লব কুমার সরকারের কোনো খোঁজ মিলছে না।
Published : 19 Aug 2024, 07:33 PM
ঢাকা মহানগর পুলিশের আলোচিত দুই কর্মকর্তা অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ এবং যুগ্ন কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক।
হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে তিনি এ মামলা দায়ের করেন বলে শেরে বাংলা নগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সজীব দে জানান।
২০১১ সালের ৬ জুলাই বিএনপির কর্মসূচি চলাকালে বিরোধীদলের চিফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুক সংসদ ভবনের সামনে পুলিশের পিটুনির শিকার হন। সেসময় তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার হারুন অর রশীদ এবং সহকারী কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার ওই ঘটনার নেতৃত্ব দেন।
জয়নাল আবদিন ফারুককে ধাওয়া করে জামা খুলে নেওয়ার একটি ভিডিও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ছাপা হলে তা ভাইরাল হয়। এরপর থেকেই এ দুই পুলিশ কর্মকর্তার প্রভাব পুলিশ বিভাগে ছড়িয়ে পড়ে।
তেরো বছর আগে ওই ঘটনায় মামলা করতে গেলেও তখন পুলিশ নেয়নি বলে দাবি করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ফারুক। আদালতে মামলা দায়ের করলেও পরে তা বাতিল করা হয়।
সোমবার মামলা দায়েরের পর ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, “২০১১ সালে পুলিশের হামলার ঘটনায় অভিযোগ নিয়ে এই থানায় (শেরেবাংলা নগর) এসেছিলাম, কিন্তু পুলিশ ভেতরেই ঢুকতে দেয়নি। পরবর্তীতে আমরা কোর্টে মামলা করলে তিন দিন পর বাতিল করে দেয়। উল্টো তখন পুলিশ বাদী হয়ে আমার বিরুদ্ধে একটা মামলা দেয়, সেই মামলায় আজ পর্যন্ত হাজিরা দিতে যাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “আজকে সুযোগ হয়েছে, ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে দেশ নতুনভাবে স্বাধীন হয়েছে। আমি আশা করি ছাত্র জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে, এই সময়ে আমার ওপর ঘটে যাওয়া হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সুবিচার আমি পাব।
“অভিযোগটি গ্রহণ করেছেন ওসি সাহেব। দণ্ডবিধির ৩২৩, ৩২৫, ৩২৬, ৩০৭, ২০৬, ১০৯ ও ৩৪ ধারায় মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে।”
আরও পড়ুন-
মামলার অভিযোগে ফারুক বলেন, “বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দলের পক্ষ থেকে ২০১১ সালের দুই দিনের জন্য হরতাল কর্মসূচির ডাক দিয়েছিলেন। হরতাল চালাকালীন আমার সহযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে ফার্মগেটের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছিলাম। তখন পুলিশ কর্মকর্তা হারুন ও বিপ্লবসহ তার অধীনস্থ সকল কর্মকর্তা মিলে মিছিলে বাধা দেয়।
“কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে হারুন ও বিপ্লব তাদের ফোর্স নিয়ে আমার ওপর হামলা করে। এ সময় আমার মাথা ফেটে যায় ও নির্যাতনের একপর্যায়ে আমার জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। লাঠির আঘাতে আমার লিগামেন্ট ছিড়ে যায় এবং বাম পাশের কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অচল হয়ে যায়।”
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনা বিদেশে পালিয়ে গেলে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এরপর ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে থানা এবং পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ চলে। আতঙ্কজনক পরিস্থিতির মধ্যে কার্যত পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে ঢাকা।
সরকার পতনের পর নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে দায়িত্ব থেকে দূরে থাকা অধিকাংশ পুলিশ সদস্য কাজে যোগ দিলেও নানাভাবে আলোচিত দুই কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ ও বিপ্লব কুমারের কোনো খোঁজ মিলছে না।
এরই মধ্যে পুলিশ মহাপরিদর্শক, পুলিশ কমিশনার, পুলিশ সুপারসহ অন্তত অর্ধশত পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। চার পুলিশ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে হারুন ও বিপ্লবের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও আসেনি।
সরকার পতনের ঠিক দুই দিন আগে হারুনকে গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস এবং বিপ্লব কুমার সরকারকে প্রশাসন ও গোয়েন্দা দক্ষিণের দায়িত্ব দেওয়া হয়।