“যদি ভুল তথ্য কিংবা এমন কোনো গোপন তথ্য থাকে, তা ১৯৭৯ বিধিমালা অনুযায়ী শাস্তি যোগ্য অপরাধ। এটা সকল সরকারি কর্মচারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।”
Published : 22 Sep 2024, 05:54 PM
দুর্নীতির লাগাম টানতে বছর বছর সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়।
প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে হিসাব বিবরণী দেওয়ার কথা থাকলেও এ বছর তা দিতে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে দিতে বলেছে মন্ত্রণালয়।
সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ যা ২০০২ এ সংশোধনী এনে সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী ৫ বছর পর পর দেওয়ার বিধান করা হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জারি করে সরকারি কর্মচারীদেরকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান।
১৯৭৯ সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা সংশোধন হলো কি না এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, “এটা সংশোধন হয়েছে ২০০২ সালে। মূল আইনটা হলো ১৯৭৯ সালের আর সংশোধিতটা হলো ৩০ ডিসেম্বর ২০০২।”
২০০২ সালের বিধি অনুয়ায়ী ৫ বছর পর পর সম্পদের হিসাব দেয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে বিধি আবারও সংশোধন হলো কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আপনারা দেখেছেন দুদিন আগে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নোটিস এসেছে উপদেষ্টদের সম্পদ বিবরণী দিতে।
“সাধারণত, আগে ছিল যোগদানের সময় জমা দিলে পাঁচ বছর পর পর রিভিউ করতে হতো। প্রয়োজনের নিরিখে এই নিয়মাবলী সময়ে সময়ে সরকার পরিবর্তন ও পরিমার্জনের এখতিয়ার বহন করে। তার আলোকে এখন বছর বছর করবে।”
মোখরেস উর রহমান বলেন, “সকল সরকারি কর্মচারীকে প্রতি অর্থবছরের সম্পদ-বিবরণী ডিসেম্বর মাসের ৩১ তারিখের মধ্যে দাখিল করতে হবে। যেহেতু এ বছর নতুন একটা বছর, ভাঙা বছর, সেহেতু এ বছরের ক্ষেত্রে সম্পদ বিবরণী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে দাখিল করতে হবে। সিলগালাকৃত খামে জমা দিতে হবে।
“যদি ভুল তথ্য কিংবা এমন কোনো গোপন তথ্য থাকে, তা ১৯৭৯ বিধিমালা অনুযায়ী শাস্তি যোগ্য অপরাধ। এটা সকল সরকারি কর্মচারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।”
সম্পদ বিবরণী জমা না দিলে এবং তথ্য গোপন করলে যে শাস্তি দেওয়া হবে তা তুলে ধরে জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন, এই ক্ষেত্রে দুই ধরনের দণ্ড হবে- লঘুদণ্ড ও গুরুদণ্ড।
তিনি জানান, লঘুদণ্ড হচ্ছে তিরষ্কার, নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা; কর্তব্যে অবহেলা বা সরকারি আদেশ অমান্য করার কারণে সরকারের আর্থিক ক্ষতির সম্পূর্ণ অংশ বা অংশবিশেষ বেতন বা আনুতোষিক থেকে আদায় করা; বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিতকরণ।
আর গুরুদণ্ড হলো- নিম্নপদ বা নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিত করা, বাধ্যতামূলক অবসর, চাকরি থেকে অপসারণ, বরখাস্ত করা।
এখন কেন প্রতিবছর সম্পদ বিবরণী দিতে, জানতে চাইলে মোখলেস উর রহমান বলেন, “বছর বছর সম্পদ বিবরণী দেওয়া হলো তার (কর্মচারীদের) জন্য একটা লাগাম। দুর্নীতির লাগাম টানতে হবে। আমাদের করা লাগবে না, দেখবেন অফিসই করবে। আর আমাদের বহু লোক আছে, কার কত সম্পদ তা বের করে দেবে।”
কে কোথায় দাখিল করবেন
ক্যাডার/নন-ক্যাডার (নবম বা তদূর্ধ্ব গ্রেড) কর্মকর্তা তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়/বিভাগের সচিবের কাছে সম্পদ বিবরণী দাখিল করবেন।
গেজেটেড/নন-গেজেটেড কর্মকর্তা/কর্মচারীরা (দশম থেকে ২০তম গ্রেড) নিজ নিজ নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে সম্পদ বিবরণী দাখিল করবেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ছকে সম্পদ-বিবরণী দাখিল করতে হবে। ছকটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থার নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা যাবে।
সম্পদ বিবরণীটি সিলগালা করা খামে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে।