টানা স্লোগান আর লোকজনের ভিড়ে সংগীতশিল্পীদের অনেকে মূল মঞ্চের কাছেই যেতে পারেননি।
Published : 03 Aug 2024, 09:16 PM
কোটা সংস্কার আন্দোলনে নির্যাতন, গ্রেপ্তার ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর চত্বরে জড়ো হলেন সংগীত শিল্পীদের অনেকে; স্লোগানে স্লোগানে সংহতি জানালেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে।
শনিবার দুপুরের পর থেকে সংগীত শিল্পীদের অনেকে যখন রবীন্দ্র সরোবরে জড়ো হন, তখন সাংস্কৃতিক কর্মীদের কেউ কেউ যোগ দেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে হাজারো মানুষের জমায়েতে আন্দোলনের সঙ্গে তারা একাত্মতা পোষণ করেন।
বিকাল ৩টায় ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে জড়ো হন সংগীতশিল্পীদের অনেকে। আর শিল্পকলা একাডেমির সামনে জড়ো হওয়ার পর নাট্যসংগঠন প্রাচ্যনাটের কর্মীরা সাদা কাপড় নিয়ে পদযাত্রা করে যোগ দেন শহীদ মিনারের জমায়েতে।
অপরদিকে 'আলোকের পথে প্রতিবাদের জয়গান' শিরোনামে প্রতিবাদী মানববন্ধন করেছে 'বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভ্যবৃন্দ' নামে একটি প্লাটফর্ম। এটি মূলত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পাঠচক্র, আলোর ইশকুলসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের প্লাটফর্ম।
এদিন বিক্ষোভ-মিছিলের কর্মসূচি ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের। এরমধ্যেই রবীন্দ্র সরোবরে জমায়েত হওয়ার ঘোষণা ছিল শিল্পীদের। জনপ্রিয় ব্যান্ড শিরোনামহীন, জলের গানসহ অনেক ব্যান্ড রবীন্দ্র সরোবরের মঞ্চে জড়ো হওয়ার কথা জানিয়েছিল। সেখানে অংশ নিতে অন্যদেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।
বিকাল থেকেই রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে দেখা যায়, কিছু মানুষ জড়ো হয়ে সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। টানা স্লোগান আর লোকজনের ভিড়ে সংগীতশিল্পীদের অনেকে মূল মঞ্চের কাছেই যেতে পারেননি। তারা আশপাশে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন।
একাধিক সংগীতশিল্পী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্লোগানের কারণে সংগীতশিল্পীরা তো মঞ্চেই দাঁড়াতে পারলেন না। অথচ এটা সংগীতশিল্পীদের কর্মসূচি ছিল।
রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চের পাশের রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে গল্প করতে দেখা যায় সংগীতশিল্পী অর্ণব, বুনো, আর্টসেলের ফয়সালসহ অনেককে।
অর্ণব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা তো এখানে এসেছি সংহতি জানাতেই। কোনো রকম রক্তপাত আমরা চাই না। আমরা দেশে শান্তি চাই। সেই বার্তাটি দিতে চেয়েছি। একই সঙ্গে আমরা র্যাপার হান্নানকে যে গ্রেপ্তার করেছে, তারও মুক্তি চাই। সকল ন্যায্য আন্দোলনেই আমাদের সমর্থন আছে।”
গীতিকার ও সুরকার প্রিন্স মাহমুদ বলেন, ”রবীন্দ্র সরোবরে আমাদের ‘গেট আপ, স্ট্যান্ড আপ’ দুদিন আগের নির্ধারিত কর্মসূচি। সবাইকে এখানে আসার কথা জানানোর পর আমরা জেনেছি শিক্ষার্থীদের শহীদ মিনারের কর্মসূচির কথা। পরে আমরা সবাইকে ৩টায় রবীন্দ্র সরোবরে জড়ো হয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানাবার জন্য বলেছি।”
রবীন্দ্র সরোবর থেকে শহীদ মিনারে যাওয়ার বার্তাটি পরে আসার কারণে অনেক শিল্পীকেই দেখা যায় রবীন্দ্র সরোবর চত্বরেই এলোমেলো আড্ডা দিতে। অন্যদিকে কোনো কোনো শিল্পী শহীদ মিনারে চলে যান।
রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে ভিড়ের মাঝেই বক্তব্য দেন সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর। তার ছেলেকে লোকজনের সামনে ঠেলে দিয়ে তিনি বলেন, “আমি আমার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি। তাকেও মেরে ফেলুন। যেভাবে ছাত্রদের মারা হচ্ছে, তা মানা যায় না। আমাদের এখন একটাই দাবি- এই স্বৈরশাসকের পদত্যাগ করতে হবে।”
এসময় সরকারের পদত্যাগ চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন উপস্থিত জনতা।
জলের গানের রাহুল আনন্দ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে আছি। আমরা শান্তি চাই, এই দেশে রক্তপাত চাই না। এই বার্তাটি সবাইকে দিতে সংগীতাঙ্গনের লোকজন এখানে জড়ো হয়েছি।”
শিল্পীদের মধ্যে অর্ণব, আর্টসেলের ভোকাল ও গিটারিস্ট লিংকন, কাজী ফয়সাল আহমেদ, ড্রামার সাজু, জি-সিরিজের কর্ণধার খালেদ, কণ্ঠশিল্পী আরিফসহ অনেকে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়েছিলেন। তাদের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল- 'জেল থেকে আমি বলছি', 'তোমাদের নাম লেখা রবে সাধারণ মানুষের ভিড়ে'।
মাইলস ব্যান্ডের গিটারিস্ট ইকবাল আসিফ জুয়েল বলেন, “যেকোনো ন্যায্য আন্দোলনে শিল্পীদের সংহতি থাকবে। এ আন্দোলনে আমরা ছাত্রদের পাশে আছি। হত্যার বিচার চাই এবং আর কোনো রক্তপাত চাই না। এছাড়া র্যাপার হান্নানেরও মুক্তি চাই।”
রবীন্দ্র সরোবর প্রাঙ্গণে এসেছিলেন সংগীতশিল্পী সুজিত মুস্তাফা ও মুনমুন আহমেদ, শিল্পী অনিমা রায় ও পার্থ বড়ুয়াসহ অনেকে।
সুজিত মুস্তাফা বলেন, “আমরা খুবই বেদনার্ত। যার সন্তান মারা যায়, তিনি কতটা কষ্ট পান- তা তো বলার মতো ভাষা নেই। কোনোভাবেই আমরা রক্তপাত চাই না।
“এই ঘটনা শুরু থেকেই সমাধান করা সম্ভব হত, কিন্তু সেটি করা হল না। কেউ ন্যায় কথা বললেই তাকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলা, এটা ঠিক নয়। যারা রাজনীতি করেন, তারা তো মানুষের জন্যই কাজ করেন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তারা মানুষের ভাষাটা কেন বুঝতে পারলেন না, তা বোধগম্য নয়।”
অনিমা রায় বলেন, “আমরা কোনো রক্ত চাই না। আর যেন কোনো প্রাণ না ঝরে। এই রক্তপাত থামাতে হবে।”
এদিন সকালে বাংলামোটর এলাকায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের রাস্তার প্রবেশমুখে ‘বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভ্যবৃন্দের’ আয়োজনে মানববন্ধন হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানানোর পাশাপাশি প্রতিবাদী গানও পরিবেশন করা হয়।