“উপস্থিত বাচ্চাদের দিয়ে দিয়েছি। যেদিন সরকার সব বই ছাড়বে তখন বাকিগুলা দেব। হয়ত সপ্তাহ খানেক দেরি হবে, এর বেশিও হতে পারে।“
Published : 01 Jan 2025, 02:12 PM
মিরপুরের রশীদ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাবেয়া আক্তার সকালে বই নিতে স্কুলে আসলেও, মেয়েটিকে ফিরতে হল খালি হাতে।
এবারে নতুন বই ‘দেওয়া হবে’ এমন খবর স্কুল থেকে না জানানো হলেও, আগের কয়েক বছরের অভ্যাসের বশে বুধবার সকাল সকাল মায়ের সঙ্গে স্কুলে গিয়েছিল রাবেয়া।
এই শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছে, “সব সময় প্রথম দিন বই নিতে আইতাম; একারণে আইছি। নতুন বইয়ের আনন্দই আলাদা, খুলে দেখতাম, গন্ধ নিতাম। কিন্তু আজকে আর ওইরকম আগের মত কিছু হইল না।”
রাবেয়ার মা গৃহিনী উম্মে কুলসুম জানালেন, কবে নতুন বই পাওয়া যাবে, স্কুল সেই তথ্য জানাতে পারছে না।
“এমনিতেই বইয়ে নাকি পরিবর্তন আসবে, তাও যদি দেরি হয় তাইলে তো পোলাপানের পড়ালেখার সমস্যা হবে।”
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে বছরের প্রথম দিন স্কুলে স্কুলে উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার রেওয়াজের শুরুটা হয়েছিল ২০১০ সালে, যা দেখা গেছে ফেলে আসা বছরেও।
তবে ক্ষমতার পালাবদলের পর সেই চক্র ভেঙেছে, এবার স্কুলগুলোতে সেই আয়োজন নেই। নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে সব নয়, কোনো কোনো বিষয়ের পাঠ্যপুস্তুক তুলে দিতে পেরেছেন শিক্ষকরা।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) আগেই জানিয়েছিল বছরের প্রথম দিন এবার নতুন কোনো পাঠ্যবই হাতে পাবে না প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ; যাদের এজন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত।
প্রাথমিকের অন্য শ্রেণির মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বই হাতে পাবেন আরও কয়েকদিন পর। আর মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা জানুয়ারির শুরুতে কিছু বিষয়ের বই পাবেন। তবে এবার বছরের প্রথম দিনই সব পাঠ্যবইয়ের সফট কপি অনলাইনে প্রকাশ করবে এনসিটিবি।
পল্লবীর এমডিসি মডেল ইন্সটিটিউট এর নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গণিত, ইংরেজি, বাংলা এই তিনটি বই পেয়েছে।
স্কুলটির নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফিফা চৌধুরী সারাহ বলে, “বাকি বই কবে পাব এগুলা বলেনি। একটু আগে পেলে পড়তে ইজি হত। এখন একটা অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে, কবে সব বই পাব তা নিয়ে। ব্যপারটা দুঃখজনক বলার যায়, সব বই পেয়ে গেলে রুটিন করে সিলেবাস শেষ করার প্ল্যান করতে পারতাম।”
এবার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাবর্ষের নবম শ্রেণির বইয়ের উপর ২০২৬ সালে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে।
এমডিসি মডেল ইন্সটিটিউট এর দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী লাবিবা আয়েশা রহমান বলে, “অন্যান্য বছর দুই বছরে একটা বই শেষ করে পরীক্ষা দিতে হত। এবার আমাদের একবছরে আবার নতুন বই পড়তে হবে। তার মধ্যে সব বই পাচ্ছি না, কবে পাব জানি না।
“ইনফরমেশন গ্যাপ থেকে যাবে। দ্রুত সময়ে তো সিলেবাস শেষ করা যাবে না।”
রশীদ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেবদাস বারুরী সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, তার স্কুলে গণিত, ইংরেজি আর বাংলা বই এসেছে।
সকালে শ্রেণিকক্ষে ১০ থেকে ১২ জন শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক বারুরী সরকার।
“উপস্থিত বাচ্চাদের দিয়ে দিয়েছি। যেদিন সরকার সব বই ছাড়বে তখন বাকিগুলা দেব। হয়ত সপ্তাহ খানেক দেরি হবে, এর বেশিও হতে পারে।“
বই পায়নি অনেক স্কুল
মিরপুর ১২ নম্বরের কিডস ক্যাম্পাস স্কুলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। তবে স্কুলটিতে গিয়ে কোন শিক্ষার্থীর আনাগোণা দেখা যায়নি।
আগামী সোমবার স্কুলটি খুলবে। তখন শিক্ষার্থীদের পুরনো বইয়ের উপরই ক্লাস নেওয়া হবে বলে জানান স্কুলটির প্রধান শিক্ষক রাজিয়া সুলতানা।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা তো বই পাইইনি, দেব কী করে? বাচ্চারা ক্লাসে আসলে তাদের বেসিক নলেজ দিতে হবে। বই পেতে দেরি হলে একটু তো অসুবিধা হবেই। পুরনো বইই পড়াব, শিখলে তো অসুবিধা নাই।”
প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয় মিরপুরের লিটল ফ্লাওয়ার্স স্কুলে। এ স্কুলটিরও কোন শিক্ষার্থী নতুন বই হাতে পায়নি।
লিটল ফ্লাওয়ার্স স্কুলের হিসাব রক্ষক উম্মে সাদিকা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বই তো দেয়নি সরকার। ৫ তারিখে স্কুল খুললে পুরাতন বই দিয়ে পড়ানো হবে। তারপর সরকার যখন নতুন বই দেবে তখন নতুন বই দিয়ে ক্লাস হবে।”
নতুন বই ছাপানোর দরপত্র উন্মুক্ত হচ্ছে ৭ অক্টোবর
'মানহীন' ৯০ হাজার পাঠ্যবই ধ্বংস