“ঢাকায় তো কাজ নাই। কত আর ঢাকা দেখব। একটু ঘুরলে ভালো লাগবে,” বলেন ওয়ার্কশপ মিস্ত্রি জাহাঙ্গীর।
Published : 02 Apr 2025, 01:05 AM
ঈদের দিনে যারা ছুটি পাননি বা কাজ শেষ করতে পারেননি তারা দ্বিতীয় দিনে ঢাকার বাইরে ছুটছেন।
এ দলে ঈদের আগে বাস বা ট্রেনের টিকেট না পাওয়াদেরও কেউ কেউ রয়েছেন।
আবার আগাম কেটে রাখা টিকেট নিয়েও কেউ কেউ অবকাশ যাপনে ঢাকা থেকে বেরিয়ে পড়ছেন ভ্রমণে।
জরুরি প্রয়োজনেও কিছু মানুষ ঢাকা থেকে বাড়ি যাচ্ছিলেন। যে কারণে ঈদের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবারও টিকেটের জন্য ঢাকার বাস টার্মিনালগুলো ও কাউন্টারগুলোতে লোকজনের ছোটাছুটি দেখা গেছে।
সায়েদাবাদে ঢাকার বাইরে যাওয়া যাত্রীদের মধ্যে দক্ষিণের বরিশাল বিভাগের যাত্রী বেশি থাকার কথা বললেন কয়েকটি পরিবহনের কাউন্টার কর্মীরা।
ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও সায়দাবাদ থেকে এই রুটে চলাচলকারী দুটি দূরপাল্লার বাস কর্তৃপক্ষ আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত টিকেট না থাকার কথা বলেছে। এজন্য সায়দাবাদ, যাত্রাবাড়ীর দুটি ছাড়া সবগুলো কাউন্টার বন্ধ রেখেছে তারা।
শ্যামলী পরিবহন বলছে, বুধবার সকাল ১১টা পর্যন্ত তারা এই রুটে টিকেট দিতে পারবে না।
যাত্রী থাকার সুযোগে বরিশাল ও পটুয়াখালী রুটে চলাচলকারী বাস ভাড়া বাড়িয়েছে অন্য পরিবহনগুলো। সাধারণ সময়ে বরিশাল রুটে বাস ভাড়া ৬০০ টাকা। ঈদের ছুটিতে এর থেকে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।
ঈদের আগের দিনগুলোতেও একইরকম বেশি ভাড়া নিয়েছেন পরিবহন মালিকরা বলে অভিযোগ ছির। অন্যদিকে কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর রুটে যাত্রী সাধারাণ সময়ের মতই দেখা গেছে।
যাত্রাবাড়ী-সায়দাবাদ টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রাম. সিলেট, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর, কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, খুলনা, বরিশাল, বাগেরহাট, পটুয়াখালীর বাস ছাড়ে।
এবার রমজান মাস ২৯ দিনের হওয়ায় গত ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয় বাংলাদেশে।
ঈদ ঘিরে টানা নয় দিনের ছুটি পেয়েছেন চাকুরজীবীরা। লম্বা এই ছুটিতে এবার ঢাকার বাইরে ঈদ করতে যাওয়া মানুষ অনেকটাই স্বস্তিতে যেতে পেরেছেন সড়ক, রেল ও নৌপথে।
রাজধানীর সায়দাবাদ টার্মিনালে কুমিল্লার হোমনা যেতে মা-বাবা, মামা ও চাচার সঙ্গে অপেক্ষা করছিল তানজিলা ইসলাম, মনিরুল ইসলাম ও সোহানুর রহমান নামের ৮-১০ বছরের তিন শিক্ষার্থী। তারা বলেন, তাদের খালার বিয়ের কথা চূড়ান্ত হয়েছে ঈদের দিন, বুধবারই বিয়ে। সে জন্য তারা গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন।
তাদের মধ্যে তানজিলা ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘খালার বিয়ে তো, আমগো দাওয়াত দিছে।’’
হাসতে হাসতে তানজিলার ছোটো ভাই মনিরুল ইসলাম বলেন, “আমরা তো আগেই যাইতে চাইছিলাম বাড়িতে, নিয়া গেল না। এহন তো ডাবল মজা হইল। ঢাকায় ঈদ করলাম আবার বাড়িতেও যাইতে পারতাছি।”
মামার ইশারায় বড় একটি ব্যাগ দু’জন মিলে ধরাধরি করে দ্রুত বাসের দিকে হাঁটা দেয় তারা।
নোয়াখালী যেতে সায়দাবাদ জনপদ মোড়ের বাস কাউন্টারে এসেছেন রফিকুল ইসলাম। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের এই কর্মী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছুটি পাই নাই এবার। শিফটের কাজ শেষ হয়নি। কাজ বুঝিয়ে দিতে ঈদের দিনও ডিউটি করা লাগছে।
“আমাগো সাপ্লাই ব্যবসা, তাই ঈদের পরের স্টক করতে কয়েকজনকে মহাজন ছুটি দেয় নাই। আইজকা ছুটি পাইলাম, তাই দ্যাশে যামু।’’
সিঙ্গাপুর থেকে এক মাসের ছুটি পেয়ে দেশে এসেছেন প্রবাসী ইমরান হোসেন। যাত্রাবাড়ীর একটি কাউন্টারের সামনে বড় লাগেজ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন টিকেটের জন্য।
পটুয়াখালীর আমতলী থেকে ছোটো ভাই এসেছেন তাকে বাড়ি নিয়ে যেতে। ছোটো ভাই এখন কাউন্টারে গিয়ে টিকেটের দরদাম করছেন।
পাঁচ বন্ধু মিলে সমুদ্র দেখতে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় যাওয়ার জন্য যাত্রাবাড়ীর বাস কাউন্টারে এসেছেন জাহাঙ্গীর হোসেন (২৫)।
পেশায় লেদ মেশিন ওয়ার্কশপের মিস্ত্রি জাহাঙ্গীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকায় তো কাজ নাই। কত আর ঢাকা দেখব। একটু ঘুরলে ভালো লাগবে।”
সাধারণ সময়ে এ রুটে বাস ভাড়া ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা। কিন্তু এখন চাইছে ২ হাজার টাকা। ১ হাজার ৯০০ টাকা বলেও মানাতে পারছিলেন না ইসলাম পরিবহনের যাত্রাবাড়ীর কাউন্টার ব্যবস্থাপক দুলাল হোসেনকে।
তিনটি কাউন্টার ঘুরেও কোনো টিকেট না পেয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন জাহাঙ্গীররা পাঁচ বন্ধু। বেলা ১২টার দিকে আসা পাঁচ তরুণের দলটি প্রয়োজনে বিকালে বা রাতের বাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জাহাঙ্গীর বলেন, “যে বাস কমে টিকেট দিবে, সেই বাসেই যাব। ভাড়া বেশি নিচ্ছে, ১৬০০ টাকা নিলেও যাব। নইলে রাতে যাব।”
তিনি বলেন, “সব সময়ে ঈদ ঢাকায় করা হয়। এবার ছুটি তো বেশি, আমাদের কোনো কাজ নাই। একঘেয়েমি লাগছে। পটুয়াখালীতে এক বন্ধু আছে, সেও আসবে কুয়াকাটায়।”
বুধবার সকাল ১১টা পর্যন্ত বরিশাল রুটে চলাচলকারী শ্যামলী পরিবহনের কোনো বাসে আসন ফাঁকা না থাকার তথ্য দিয়েছেন সায়দাবাদ কাউন্টারের কর্মী মোহাম্মদ জুবায়ের।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সব বুক, এখন নতুন কোনো টিকেট কাটছি না। যারা আগে কাটছে, তারাই যাচ্ছে। যাত্রী আছে, কিন্তু বাস তো আনা যাচ্ছে না বরিশাল থেকে।”
বরিশালে যাওয়া বাসগুলো এখন টার্মিনালে অপেক্ষা করছে। ঈদের সময়ে বরিশাল থেকে ঢাকায় আসছে কম সংখ্যক যাত্রী। যাত্রী পূর্ণ হলেই কেবল বাস ঢাকায় আসছে। সাধারণ সময়ে নির্দিষ্ট সময় পরপর বাস ছাড়া হয়। এখনো তা শুরু হয়নি।
সেই তথ্য তুলে ধরে সাকুরা পরিবহনের যাত্রাবাড়ী কাউন্টারের ব্যবস্থাপক বিল্লাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘ঢাকায় তো মানুষ আসছে কম। বাস তো আর ফাঁকা আসবে না। আমাদের যে পরিমাণ বাস বরিশাল যাবে, তা ঠিক করা আছে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত কোনো বাসে আসন ফাঁকা নেই।”
এর মধ্যে যদি বরিশাল থেকে অতিরিক্ত বাস ঢাকা আসে, তারা সেই বাসের টিকেট বিক্রি করতে পারবেন।
একই অবস্থা ঢাকা থেকে বরিশাল রুটে যাওয়া হানিফ পরিবহনেরও। বাসটির দুটি ছাড়া সবগুলো কাউন্টার সেবা বন্ধ রেখেছে বুধবার পর্যন্ত কোনো আসন ফাঁকা না থাকায়।